১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ১১:৫৯
শিরোনাম:

পাগল প্রেমি লিখন

মানুষ মানুষের জন্য, মানুষের বিপদের সময় পাশে থেকে সহযোগিতা করাই মানুষের ধর্ম। একজন মানুষ অন্য একজনের বিপদে-আপদে, সমস্যা-সংকটে ছুটে এসে সাহায্য করবেন এমন প্রত্যাশা মানুষ মাত্রই করতে পারে। আমাদের সবারই সুযোগ রয়েছে মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার।আমি, আপনি, এভাবেই এগিয়ে আসতে পারি সকলেই। দাঁড়াতে পারি বিপদে মানুষের পাশে।

শিক্ষাগুরুরা সব সময় বলতেন মানুষ মানুষের জন্য। পৃথিবীর মধ্যে সব চাইতে বড় আদালত মানুষের বিবেক। আমরা অনেক মানুষ আছি, আমাদের বিবেক আছে ঘুমিয়ে। মানুষের জন্য মানবতা, মানবতার জন্যই মানুষ, অসহায় এবং বঞ্চিত মানুষের উপকারে নিজেকে আত্মনিবেদন করার এবং অন্যকে এতে উৎসাহিত করা। একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে বেচেঁ যাবে একটি প্রাণ।

এদেশে এখনো এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছেন, যারা মানবসেবায় যথেষ্ট আন্তরিক। আল্লাহর সৃষ্টি মানুষের সেবাইকেই তারা পরম ধর্ম বলে বিশ্বাস করেন।
এমন এক যুবক নাম আফজাল হোসেন লিখন, পিতা নূর ইসলাম, মেহেরপুর পুরাতন পোস্ট অফিসপাড়া। তিনি দুই সন্তানের জনক। তিনি মেহেরপুর পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটনের বডিগার্ড।

মেহেরপুরে পরিচয়হীন ৬ থেকে ৯ জন পাগলের সেবাযত্ম করছে শহরের পুরাতন পোস্ট অফিস পাড়ার আলফাজ হোসেন লিখন। রাত তখন সাড়ে ১২ টা। সংবাদ সংগ্রহে যাওয়ার পথে দৃষ্টি পরে কয়েকজন পাগলকে খুজে তাদের খাবার খাওয়াচ্ছেন লিখন নামে এই যুবক।

তার সাথে ছিলো তার কিছু বন্ধু। তারা প্রতিদিন লিখনকে সহযোগীতা করে খাবার খাওয়ানোর সময়। কৌতুকহল বসত লিখনকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, গত ৫মাস ধরে শহরের বিভিন্ন এলাকায় অচেতন অবস্থাায় বুদ্ধি প্রতিবন্ধী (পাগল), কেউ এমনিতেই পাগল, কেউ ওপার বাংলার পাগল কে দেখতে পায়। এসকল পাগলের পড়নে থাকে না কাপড়, পায়খানা প্রস্বাবের দুর্গন্ধে কেউ কাছে আসতে চায় না, প্রতিনিয়ত খাওয়া, গোসল, কাপড় পরিধানসহ কিছুই করতে পারে না তারা।

এসকল পাগলদের কাছে পরিচয় জানতে চাইলে কিছু বলতে পারেনা। তাই আমি এসব পাগলদের একটু সেবা করছি মাত্র। তিনি সাংবাদিকদের বলেন ,আপনাদের প্রচারের মাধ্যমে যদি এসকল পাগলরা তাদের পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায় তাহলে তার পরিবারের সেবা যত্নে আরো সুস্থ্য ও ভালো থাকতে পারবেন।

লিখনের এই কাজ দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এটিএম খালিদ রানা একজন তাকে ধন্যবাদ দিয়ে লিখেছেন, আমাদের এই ব্যস্ত শহরে জীবনে কত অসহায় মানুষ অসুস্থা হয়ে কোথায় কিভাবে অনাহারে অর্ধাহারে পড়ে আছে আমরা কোনদিন ও লক্ষ্য করি না।

কিন্তু এই শহরের ছেলে আমাদের ছোট ভাই লিখন প্রতিদিন মাঝ রাতে নিজ বাড়িতে রান্না করে এই পাগলদের নিজ হাতে খাবার খাইয়ে দেয়। আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে মানবতা কাকে বলে। ছোট ভাই তোকে মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে নৈতিকতার দৃষ্টান্তের জন্য আমরাস্যোলুট করি।

পৌর মেয়র মাহফুজুর রহহমান রিটন জানান, আমাদের এই শহরে পাগল নামে অনেকে অনাহারে ঘুরে বেড়াই। তারা দু মুঠো খেতে পেলো কি পেলো না আমরা কেউ খেয়াল করি না।

কয়েক মাসধরে লক্ষ করে দেখছি আমার সাখে থাকা আফজাল হোসেন লিখন রাতে নিজের বাড়ি থেকে রান্না করে এই সকল পাগলদের মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দিচ্ছে। এটা আসলে মানুসিকতার ব্যাপার।

তার এই কাজ দেখে আমরা যদি এতটুকু ভাবি যে আমাদের বাড়িতে তো মা-বাবা আছে এবং তারও তো কারো মা-বাবা। আমরা যদি সকলে মিলে এই নাম না জানা মানুষগুলো পাশে গিয়ে দাড়াই তাহলে মনে হয় তাদের এই কষ্টগুলো থাকবে না। লিখনের এই মানবিক কাজের জন্য আমি তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।