২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ভোর ৫:০৬
শিরোনাম:

রাজপথে আবারো আন্দোলনে নামছে বিরোধীজোট?

বিভিন্ন ইস্যুতে আবারও রাস্তায় নামছে বিরোধী রাজনৈতিক জোট। রাজনৈতিক নেতাদের কথায় এমনই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। ইস্যুগুলোর মধ্যে অন্যতম বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে আন্দোলন জোরদার করা।
এছাড়া সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের পরপরই বিএনপি আবারো সরাসরি ভারত বিরোধিতায় নেমেছে। তারা বলেছে, এলপিজি গ্যাস রপ্তানির মাধ্যমে শেখ হাসিনা ভারতের কাছে দেশ বিক্রি করে দিয়েছেন।

মওদুদ আহমদ :
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেছেন, বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে তাঁদের আর কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে এবং এরপর গণবিস্ফোরণ ঘটবে। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোয় সরকারি দলের ছাত্রদের টর্চার সেল রয়েছে বলে দাবি করেন মওদুদ। ২০দলীয় জোটের উদ্যোগে বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদের স্মরণে ১৫ অক্টোবর এক আলোচনা সভায় মওদুদ আহমদ এসব কথা বলেন।

খালেদা জিয়ার মুক্তি প্যারোলে বা আইনি প্রক্রিয়ায় না হয়ে রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে হবে উল্লেখ করে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘অনেকে মনে করেন আর কত দিন। এত দিন তো সহ্য করেছি। আমাদের আরও কিছুদিন সহ্য করতে হবে। কিন্তু সময় আসবে। এমন একটি সময় আসবে, যখন এ দেশের এই জালেম সরকারকে উৎখাত করার জন্য বা অপসারণ করবার জন্য গণবিস্ফোরণ ঘটবে বলে আমি মনে করি।’

মাহমুদুর রহমান মান্না:
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, বিফল বা ব্যর্থ বলা যাবে না, কারণ ঐক্যফ্রন্ট হবার পরে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে সাড়া আমরা পেয়েছিলাম তা অভূতপূর্ব সাড়া ছিল। এমনটা আমি আমার রাজনীতির জীবনে কখনও দেখি নাই। তবে গণআন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমরা আরও দৃঢ় হতে পারতাম কিনা অথবা জনগনকে আরও বেশি সংগঠিত করা সম্ভব ছিল কিনা তা নিয়ে একটা বিতর্ক রয়ে গেছে। মান্না বলছেন, সামনের দিনগুলোতে আন্দোলন সংগ্রামে জনগণের সম্পৃক্ততা আরো বাড়ানো হবে।

ইকবাল হাসান মাহমুদ:
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, উনি যা চাইবেন তাই হবে এটাতো হতে পারে না। ৩০শে ডিসেম্বর নির্বাচনে বিরোধীদল কিন্তু কিছুই হারায় নাই বরঞ্চ আওয়ামীলীগ সব হারিয়েছে। এই অবক্ষয় কতক্ষন মানুষ মেনে নিবে। মানুষ রাস্তায় নামবে। এটা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার।

ড. কামাল হোসেন :
গণফোরামের সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘আবরারকে যারা হত্যা করল, এরা কার আদর্শের অনুসারী? যিনি দেশ শাসন করছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ না করে তার উদ্দেশে বলেন, ‘এই আপনার (প্রধানমন্ত্রী) আদর্শ? তা-ই যদি হয়ে থাকে, আপনার তো এক মুহূর্ত ক্ষমতায় থাকা উচিত না।’ তিনি আরও বলেন, ‘সবার চাওয়া প্রধানমন্ত্রী যেন দেশ শাসন করা থেকে সরে দাঁড়ান।’ সন্ত্রাসকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আবরার কী অন্যায় করেছিল! এটা সংবিধানের ওপর আঘাত।’ ১৪ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবে আবরার হত্যার প্রতিবাদে নাগরিক সভা ও শোক র‌্যালির আয়োজনে কামাল হোসেন এসব কথা বলেন।
৩০ ডিসেম্বর কোনো নির্বাচন হয়নি জানিয়ে কামাল হোসেন বলেন, ‘আমি সাক্ষ্য দেব তৃতীয়বার আপনাকে কেউ নির্বাচিত করে নাই। আপনি স্বঘোষিত ট্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। আপনি দ্রুত সরে যান। নির্বাচন ঘোষণা করেন। এগুলো দলীয় কোনো চাওয়া নয়; সংবিধানের দাবি।’

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘আজ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে যে অমানবিক আচরণ করছেন, সময়ের ব্যবধানে একদিন আপনাকেও এর চেয়েও জঘন্যতম পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন।’

গয়েশ্বর বলেন, ‘জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিনাভোটের সরকারের সব অন্যায়-অপকর্ম দুর্নীতি ও লুটপাটের প্রতিবাদ করতে পারতেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সে কারণেই তাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মামলায় প্রহসনের বিচারে কারারুদ্ধ করে রেখেছেন। তাতেও আপনার শেষ রক্ষা হবে না।’ ১২ অক্টোবর শনিবার বিকালে খুলনায় কেন্দ্র ঘোষিত জনসমাবেশে তিনি এ সব কথা বলেন।

প্রধান অতিথি গয়েশ্বর বলেন, তিস্তায় পানির ন্যায্য হিস্যা পায়নি বাংলাদেশের জনগণ। আবার অসময়ে ফারাক্কার সবগুলো গেট খুলে দিয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলে কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি করা হয়েছে। ভারতের আবদারে এখন আবার ফেনী নদীর পানি দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় রাডার বসিয়ে নজরদারি করবে ভারত! তাতে আর বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব থাকল? আবার রাডার বসানোর কারণে অহেতুক অন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের বৈরিতার সৃষ্টি হতে পারে। মংলাবন্দর কার স্বার্থে? কীসের বিনিময়ে ভারতকে ব্যবহার করতে দিচ্ছেন? সেটা জানতে চাইতেই পারে বাংলাদেশের জনগণ।

আ স ম আবদুর রব :
ঐক্যফ্রন্ট নেতা ও সমাজতান্ত্রিক দলের জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। সরকারের পদত্যাগ ও জাতীয় সরকারের দাবিতে সারাদেশে আগামী ২০ অক্টোবর বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে।’ ১৩ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জেএসডি আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এ কথা বলেন।

রব বলেন, ‘দেশের অস্থিরতা, দুর্নীতি থামাতে হলে এই সরকারকে পদত্যাগ করিয়ে জাতীয় সরকার আনতে হবে। তা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। দেশের জনগণ এক দলের পরিবর্তে অন্য দলের কাছে, এক সন্ত্রাসীর পরিবর্তে অন্য সন্ত্রাসীকে ক্ষমতায় আনতে চায় না। দেশের মানুষ চায় শান্তি, শৃঙ্খলা, আইনের শাসন। সে জন্য তারা জাতীয় সরকার চায়।’

সূত্র : প্রথম আলো, যুগান্তর, দৈনিক আমাদের সময় ও চ্যানেল২৪