১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বিকাল ৩:০৩
শিরোনাম:

অর্থ সংকটে ভুগতে থাকা বাগেরহাট শিল্পকলা একাডেমি চলছে হল রুম ভাড়া দিয়ে

নইন আবু নাঈম, বাগেরহাট ঃ প্রয়োজণীয় অর্থ বরাদ্ধ না পেয়ে অর্থ সংকটে ভুগতে থাকা বাগেরহাট জেলা শিল্পকলা একাডেমির এখন বেহাল অবস্থা। পর্যাপ্ত বরাদ্ধ না পেয়ে একাডেমি ভবনের একমাত্র হল রুমটি
“সপ্তসি ইন্টারন্যাসনাল” নামের একটি কোম্পানীর কাছে মাসিক ৪০হাজার টাকা চুক্তিতে ভাড়া দিয়েছে বাগেরহাট শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। আর ওই ভাড়ার টাকার একটা অংশ দিয়ে চলছে অফিস কার্যক্রম। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলচ্ছে শুধু মাত্র প্রশিক্ষণের জন্য “সপ্তাসি ইন্টারন্যাসনাল” নামের ওই প্রষ্ঠিানটিকে হল রুমটি ভাড়া দেয়া
হয়েছে। বাগেরহাট শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ বলছে বড় বড় ফাটল নিয়ে একাডেমির ভবনটির এখন নাজুক অবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না করার ফলে হল রুমটি পরে ছিলো তাই তাদের কাছে ভাড়া দেয়া হয়েছিলো। সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় বরাদ্ধ পেলে ৭শ ৫০ জন দর্শক ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন হল রুমটি ভাড়া দেয়ার প্রয়োজনই হত না।

সরোজমিনে বাগেরহাট শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে দেখা যায়, ১৩ বছর আগে ২০০৬ সালে নির্মিত এ ভবনটিতে ইতি মধ্যেই দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। আর এ একাডেমি ভবনে থাকা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আর বড় পর্দা দিয়ে ৭শ্#৩৯; ৫০ জন দর্শক ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন হল রুমটিতে চলছে সপ্তসি ইন্টারন্যাসনালের কার্যক্রম। এমনকি দীর্ঘ ১৩ বছরেও এ একাডেমি ভবনটিতে একবারও জন্য কোন সংস্কার কাজ করা হয়নি। হলরুমটির এক পাশে
একটি কক্ষ ওই কোম্পানীর মালিক সৈয়দ মিজানুর রহমান তার অফিস হিসাবে ব্যবহার করছেন। এছাড়া অযতœ আর অবহেলায় হলরুমের চেয়ার গুলো যত্র-তত্র ফেলে রাখা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালের ১৪ জুলাই তৎকালিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী এএসএম মোস্তাফিজুর রহমান ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপকা জাহানারা বেগম বাগেরহাট শহরের দশানী মোড় এলাকায় ৬৭ শতাশং জমির উপর এ একাডেমি ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তিতে ২০০৬ সালে এ একাডেমি ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর বাগেরহাট-২ আসনের তৎকালিন এমপি এমএএইচ
সেলিম এ একাডেমি ভবনের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর সেই সময়ে জেলার নব নির্মিত এ শিল্পকলা একাডেমিতে জেলার শিল্পি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের পদচারনায় মুখোরিত হয়ে উঠলেও তার বছর দুই পর আস্তে আস্তে এ শিল্পকলা একাডেমি তার যৌলস হারাতে শুরু করে।

বর্তমানে এ একাডেমিতে কার্যক্রম বলতে সংঙ্গীত, নিত্য, নাটক, তবলা ও চারুকলা প্রশিক্ষন বিভাগে প্রায় ২শ ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। একাডেমির প্রশিক্ষক ও তালযন্ত্র সহকারী হিসাবে ১০ জন কর্মরত রয়েছেন যাদের ২ হাজার ৪শ টাকার নাম মাত্র সম্মানী দেয়া হয়। সপ্তসি ইন্টারন্যাসনালের মালিক সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, শিল্পকলা একাডেমি ভবনের হলরুমে আমরা প্রায় ১৭ মাস ধরে আছি। মাসিক ৪০ হাজার টাকা চুক্তিতে আমরা হলরুমটি ভাড়া নিয়েছি। আমরা মূলত বিভিন্ন পুতুলে হেয়ার প্লানটেশন কাজ করি, যে গুলো জাপান ও চায়নার কাছে রপ্তানি করি।

বাগেরহাট শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের বরাদ্ধের পরিমান খুবই কম। এই সল্প বাজেটে আমাদের অফিস কার্যক্রম পরিচালনা করা খুবই কষ্টকর। আমাদের প্রশিক্ষক ও তালযন্ত্র সহকারী হিসাবে ১০ জন রয়েছেন যাদের নামমাত্র সামান্য সম্মানী দেয়া হয়। একাডেমি ভবনের হলরুমটি ভাড়া দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০০৬ সালে নতুন এ শিল্পকলার একাডেমি ভবন নির্মানের প্রায় এক বছরের মাথায় প্রশাসনিক ভবনের একাধিক স্থানে ফাটল দেখা দেয়। এছাড়া হল রুমের সাউন্ড সিস্টেম, লাইটিং ও পর্দা অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। যার ফলে হলরুমটি কোন কাজেই ব্যবহার করা হচ্ছিলনা। এ কারনে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য হল রুমটি ভাড়া দেয়া হয়েছিলো।

যার ভাড়ার টাকা একাডেমির উন্নয়নে ব্যায় করা হয়েছে। তবে ইতি মধ্যেই আমরা হলরুম ছেড়ে দেয়ার
নোটিস দিয়েছি। এছাড়া তিনি আরও বলেন, চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্ধ পেলে জেলায় শিল্প সাংস্কৃতির চর্চা আরও বেগবান হবে। বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ বলেন, আমি বাগেরহাটে যোগদানের পর শিল্পকলা একাডেমি ভবন পরিদর্শন করেছি। ভবনটির খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। যার ফলে ভবনটি আর সংস্কার করার মত অবস্থায় নেই। এ কারনে নতুন ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। আর একাডেমি ভবনের হল রুমটি ভাড়া দেয়ার বিষয়ে খোজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।