১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ৮:২৪
শিরোনাম:

শিশু নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে প্রবাসী মায়ের কাছে টাকা চাইতেন চাচা

প্রবাসী মায়ের কাছ থেকে টাকার নেওয়ার জন্য ৬ বছর বয়সী আপন ভাতিজাকে অমানুষিক নির্যাতন করে সেই ভিডিও সৌদি আরবে তার মায়ের কাছে পাঠিয়েছিলেন চাচা স্বপন। ঘটনাটি ঘটেছে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার চরগাঁও গ্রামে। ভুক্তভোগী শিশুর নাম জিসান। তার বয়স ৬ বছর বলে জানিয়েছেন তার মা সুমনা বেগম। আমাদের সময়

ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ঘরের মেঝেতে বসে হাউমাউ করে কাঁদছে গায়ে কোনো কাপড় ছাড়া ৬ বছরের শিশু জিসান। তার দিকে তেড়ে গিয়ে বাজে ভাষায় গালাগালি করতে করতে লাথি মারছেন অভিযুক্ত চাচা স্বপন।

এতে আরো দেখা যায়, চড়-থাপ্পড় এবং লাথি-ঘুষি মারার পরে স্বপন শিশুটির গোপনাঙ্গ ধরেও টান দিচ্ছেন। এরপর ওই শিশুটির দুই পা ধরে তাকে উল্টো দিকে ঝুঁলিয়ে আছাড় মারার ভয় দেখাচ্ছিলেন। তখন শিশু জিসান বার বার ‘ও মা , ‘ও মা’ বলে চিৎকার করছিলো।

জিসানের মা বলেন, কয়েক বছর আগে আমার স্বামী মারা গেলেও আমি শ্বশুরবাড়িতেই থাকতাম। সুমাইয়া (৮) নামে আরো একটি মেয়ে রয়েছে। গত দুই মাস আগে আমি গৃহকর্মীর ভিসায় সৌদি আরব যাই। সৌদি আরব যাওয়ার আগে আমি আমার দুই শিশু সন্তানকে দেবর ও শ্বশুর-শাশুড়ির কাছে রেখে যাই।’

তিনি আরো বলেন, বাচ্চাদের দেখাশোনা করার জন্য কিছু টাকাও দিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু দুই মাস যেতে না যেতেই আমার কাছে আমার দেবর স্বপন আরো টাকা দাবি করে। এরপর জিসানকে অমানুষিক নির্যাতন করে, তার ভিডিও করে সৌদি আরবে আমার কাছে পাঠায় স্বপন। পরে এই ভিডিও দেখে আমি গত শুক্রবার দেশে ফিরে আসি।

সুমনা বেগম জানান, এখন তিনি তার দুই সন্তানকে শ্বশুরবাড়ি থেকে নিয়ে তার বোনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবে যাওয়ার আগে দেবর স্বপনকে একটি রিকশা কিনে দেই এবং নগদ ২০ হাজার টাকা দিয়ে যাই যাতে আমার সন্তানদের দেখে রাখে। বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য স্বপনকে একটি স্মার্টফোনও দিয়েছিলাম। কিন্তু দুই মাস পার না হতেই আমার ছেলেকে মারধর করে সেই মোবাইল দিয়েই ভিডিও করে আমার কাছে পাঠায়।’

ভিডিও দেখে সুমনা বেগম সৌদি আরবে তার মালিকের কাছে কান্নাকাটি করলে চলতি মাসের বেতনসহ ওই মালিক তাকে দ্রুত দেশে পাঠিয়ে দেন।

দেশে এসে সুমনা বেগম স্থানীয় সোনালী ব্যাংকে টাকা তুলতে গেলে ওই ব্যাংকের ম্যানেজার নাসির উদ্দিন আহমেদ তার কাছে এতো তাড়াতাড়ি দেশে ফিরে আসার কারণ জানতে চান। এরপর তিনি ওই ম্যানেজারকে পুরো ঘটনাটি বলেন এবং ভিডিওটিও দেখান।
এরপরই ব্যাংক ম্যানেজার নাসির উদ্দিন আহমেদ বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় সুমনা বেগমকে আইনি সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।’

শিশুটির চাচা স্বপনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুর রহমান জানান, তিনি এমন কোনো অভিযোগ বা ভিডিও পাননি। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।