২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ৪:০৫
শিরোনাম:

সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলীতেও চলছে পরিবহন ধর্মঘট

নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংস্কারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় পরিবহন ধর্মঘট চলছে। এর প্রভাব পড়েছে রাজধানীতেও।ঢাকায় অভ্যন্তরীণ রুটেও সীমিত বাস চলাচল করছে।এতে ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা। সময় টিভি

মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। সায়েদাবাদ থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট মহাসড়কের সব ধরনের পরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। গাবতলীতেও বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। দূরপাল্লার পরিবহন না চললেও হালকা পরিবহন দুই একটা চলছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

বুধবার সকাল ৭টা থেকে নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দক্ষিণাঞ্চলগামী প্রায় ২০ জেলায় চলাচলরত গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকামুখী সব যানবাহন বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীতে চলাচলরত বাসগুলোও বন্ধ করে দিয়েছেন ধর্মঘটকারীরা। শুধু বাস নয়, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা- এমনকি ভ্যানও চলাচল বাধা সৃষ্টি করছেন তারা। এসব বাহন চলতে দেখলেই চাকার হাওয়া বের করা কিংবা যাত্রীদের জোর করে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিচ্ছেন ধর্মঘটকারীরা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন অফিসগামীসহ সাধারণ মানুষ। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়ে পিইসি পরীক্ষার্থীরা।

ধর্মঘটের বিষয়ে ঠিকানা বাসের চালক দেলোয়ার হোসেন ও প্রাইভেটকারচালক নাজমুল হাসান বলেন, আমাদের ওপরে যে আইনটি চাপিয়ে দেয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আমরা এ আইন মানি না। ডেমরা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার রবিউল ইসলাম বলেন, ঢাকার অংশে যানবাহন প্রবেশ ও এখান থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিকরা। আমরা তাদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি।

এদিকে নতুন সড়ক আইন সংশোধনসহ ৯ দফা দাবিতে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ধর্মঘট চলছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক রুস্তম আলীসহ পরিষদের তিন নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়েছে। আজ আবার বৈঠকে বসার কথা রয়েছে।

ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব তাজুল ইসলাম বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঐক্য পরিষদের নেতাদের নিয়ে আবার বসবেন। তবে আমরা যে কর্মসূচির ডাক দিয়েছি সেটি চলবে। টাঙ্গেইলের মির্জাপুর উপজেলা বাস কোচ মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আলী হোসেন বলেন, সড়ক পরিবহন আইন সংস্কারের দাবিতে আজ-বুধবার সকাল থেকে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। বাস চলাচল একেবারে বন্ধ হয়নি। মহাসড়কে কিছু কিছু বাস চলছে। কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি ছাড়াই ঝালকাঠিতে দ্বিতীয় দিনের মতো বাস ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে। সকাল থেকে জেলার ১৭টি রুটে এ ধর্মঘট চলছ। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অসংখ্য যাত্রীরা।

মূলত কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ছাড়াই মঙ্গলবার সকাল থেকে ঝালকাঠির বাস ও মিনিবাসের চালক-শ্রমিকরা সড়ক পরিবহনের নতুন আইন সংশোধনের দাবিতে এ ধর্মঘট পালন করছে। ধর্মঘটের ফলে আজ দ্বিতীয় দিনেও বাড়তি ভাড়া আর হয়রানির শিকার হয়ে অসংখ্য মানুষকে ঝালকাঠি থেকে বরিশালসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে ভেঙে ভেঙে যেতে হচ্ছে। ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা কিংবা মাহেন্দ্র টেম্পুতে গুণতে হচ্ছে অধিক ভাড়া। সাধারণ যাত্রীরা এ অঘোষিত ধর্মঘটের দ্রুত অবসান চান।

এর আগে গতকাল ঢাকায় বিকেলে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কর্মকর্তারা। ওই বৈঠকেও আইন কার্যকর না করার দাবি জানিয়েছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা। বিধিমালা প্রণয়ন না করেই গত ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর করা হয় বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন। গত বছর নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশব্যাপী নজিরবিহীন আন্দোলনের ফলে করা হয় এ আইন। আইনে ট্রাফিক নিয়ম ভঙ্গে জরিমানা বেড়েছে আর বেড়েছে কারাদণ্ডও। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা এতে অসন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন।

তারা আইনটিকে কঠোর আখ্যা দিয়ে সংশোধনের দাবি করে আসছেন। গত রোববার থেকে নতুন আইন প্রয়োগ শুরুর পরদিন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন, কোনো চাপে পিছু হটবেন না। এ ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই ধর্মঘটে আসেন তারা।

গতকাল রাজধানীর তেজগাঁও কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক রুস্তম আলী খান বলেন, ‘মালিক-শ্রমিকদের আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জরিমানার বিধান ও নির্ধারণ করে যুগোপযোগী, বাস্তবসম্মত ও বিজ্ঞানভিত্তিক সঠিক আইন প্রণয়ন করতে হবে।’ তিন দফা দাবি নিয়ে গতকাল বিকেলে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে যান মালিক-শ্রমিক নেতারা। বিআরটিএ চেয়ারম্যান ড. কামরুল আহসানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। বৈঠক থেকে সমঝোতার আভাস মেলেনি।