২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বিকাল ৩:৫৪
শিরোনাম:

সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান হত্যার প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবরকে ৭ দিনের রিমান্ড

সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান হত্যার প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবরকে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

সোমবার (৯ নভেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে কানাইঘাট উপজেলার ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে আকবরকে সিলেটের মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে তোলা হয়। শুনানি শেষে বিচারক মো. আবুল কাশেম ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।  আদালতের জিআরও মেহের দাশ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

সিলেট জেলা পুলিশের সহকারী মিডিয়া কর্মকর্তা ও ডিবির পরিদর্শক সাইফুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বরখাস্ত এসআই আকবরকে ভারতীয় সীমান্ত থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে সিলেটে আনা হয়।

এর আগে মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে নিহত রায়হান আহমদ হত্যা মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের পরিদর্শক আওলাদ হোসেনকে নতুন তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার খুলেকুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এদিকে গত ২১ অক্টোবর এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে ফাঁড়ি থেকে পালাতে সহায়তা করা ও তথ্য গোপনের অপরাধে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির টু আইসি এসআই হাসান উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

খুলেকুজ্জামান বলেন, রায়হান হত্যা মামলায় আগের তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মুহিদুল ইসলাম করোনা আক্রান্ত হওয়ায় মামলার তদন্তের স্বার্থে আওলাদ হোসেনকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

রায়হান হত্যার পর যা ঘটেছে:

গত ১১ অক্টোবর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে রায়হানের মৃত্যু হয়। রায়হান সিলেট নগরের আখালিয়ার নেহারিপাড়ার বিডিআরের হাবিলদার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি নগরের রিকাবিবাজার স্টেডিয়াম মার্কেটে এক চিকিৎসকের চেম্বারে চাকরি করতেন।

১৪ অক্টোবর মামলাটি পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশ পিবিআইতে স্থানান্তর হয়। তদন্তভার পাওয়ার পর পিবিআইর টিম ঘটনাস্থল বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি, নগরের কাস্টঘর, নিহতের বাড়ি পরিদর্শন করে। সর্বোপরি মরদেহ কবর থেকে তোলার পর পুনরায় ময়নাতদন্ত করা হয়।

এ ঘটনায় গত ১২ অক্টোবর রাতে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু আইনে নগরীর কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি।

রায়হানের মরদেহে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন উঠে এসেছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে। এসব আঘাতের ৯৭টি ফোলা আঘাত ও ১৪টি ছিল গুরুতর জখমের চিহ্ন। এসব আঘাতগুলো লাঠি দ্বারাই করা হয়েছে। অসংখ্য আঘাতের কারণে হাইপোভলিউমিক শক ও নিউরোজেনিক শকে মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো কর্মক্ষমতা হারানোর কারণে রায়হানের মৃত্যু হয়।

ঘটনার দিন বিকেলে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে রায়হানকে ফাঁড়িতে এনে নির্যাতনের প্রাথমিক প্রমাণ পায় কমিটি। তদন্ত কমিটির সুপারিশে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটু চন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্ত এবং এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেনকে প্রত্যাহার করে তাদের পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়।

এ ঘটনায় গত ২০ অক্টোবর দুপুরে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমদ হত্যা মামলায় ওই ফাঁড়ির কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসকে ও ২৩ অক্টোবর কনস্টেবল হারুনুর রশিদকে গ্রেফতারের পর পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। ২৫ অক্টোবর কনস্টেবল টিটুকে ফের তিন দিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই।

এ ছাড়া গত ২১ অক্টোবর এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে ফাঁড়ি থেকে পালাতে সহায়তা করা ও তথ্য গোপনের অপরাধে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির টু আইসি এসআই হাসান উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।