২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বিকাল ৪:০২
শিরোনাম:

ফড়িং ক্যামেলিয়া: মেজর সিনহাহত্যা নিয়ে এদেশে সিনেমা বানালে, সেই সিনেমা কি পর্নোগ্রাফি আইনের আওতায় পড়বে?

ফড়িং ক্যামেলিয়া : ‘নবাব এলএলবি’ সিনেমার চলচ্চিত্র পরিচালক অনন্য মামুন ও অভিনেতা শাহীনকে পর্নোগ্রাফি মামলায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, সিনেমায় একটি দৃশ্যে দেখানো হয়েছে, ধর্ষণের শিকার এক নারী থানায় মামলা করার জন্য গেছে। সেখানে পুলিশের এক এসআই, ওই নারীকে ধর্ষণ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছে। আর এই কারণে পুলিশ সেই নির্মাতা অনন্য মামুন এবং সেই এস আই চরিত্রের অভিনেতা, শাহীন মৃধাকে গ্রেফতার করেছে। তারপর পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেছে। এমনকি তাদের অপরাধ এতো গুরুতর যে আদালত তাদের জেলে রাখার আবেদনও মঞ্জুর করেছে। খবরটা পড়ে প্রথমে মনে হলো, এটা নিশ্চয়ই পুলিশ প্রশাসনের ঠাট্টা-মশকরা টাইপ ব্যাপার। তারা নিশ্চয়ই সিনেমার প্রমোশনে হেল্প করছে। কিন্তু পরে বুঝলাম আমাদের পুলিশ প্রশাসনের সেন্স অব হিউমারের অবস্থা খুব করুন, তারা আসলেই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। মানে খবরটা শতভাগ সত্যি। এখন কতোগুলো প্রশ্ন মাথায় এলো, আচ্ছা একটা কথার জবাব দেন, সিনেমায় পুলিশের অন্যায় দেখানো যাবে না, এমন কোনো আইন এমন কোনো নিয়ম কি কোথাও আছে?

নাটক-সিনেমায় কী দেখানো হবে, কী দেখানো হবে না, সেটা কি পুলিশ ঠিক করে দেবে? এই দেশে পুলিশ অন্যায় করে না? মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ড মাত্র কয়দিন আগের। তার কোনো বিচার হলো না। মেজর সিনহা হত্যা নিয়ে এইদেশে সিনেমা বানালে, সেই সিনেমা কি পর্নোগ্রাফি আইনের আওতায় পড়বে? পরিচালক অভিনেতাদের কি গ্রেফতার করা হবে? কেন হবে? এই দেশে প্রতিদিন গড়ে ৪টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। আমাকে বলেন, আমার দেশের পুলিশ কী করে, যে এদেশে এতো ধর্ষণ হয়? এদেশে কেন ধর্ষিতা খুন হয়? কেন পুলিশ কর্মকর্তা নিজেই ফেসবুকে ভিক্টিমের ছবি দিয়ে তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলে? (শিপ্রার কথা নিশ্চই মনে আছে ) এই প্রশ্নগুলো করলে কেন গ্রেফতার করা হবে? কী কারণে?

আইন লাগবে না, এখন থেকে কি পুলিশ ঠিক করে দেবে, সিনেমা, নাটক, বিজ্ঞাপনে কি দেখানো যাবে, ফেসবুকে কি লেখা যাবে, কোন বই পড়া যাবে, কোনটা যাবে না, কীভাবা যাবে, কী জানা যাবে? চোখ বন্ধ রাখলেই প্রলয় বন্ধ হবে না, সিনেমায় যা দেখায় তা সত্য বলেই আপনাদের গায়ে লেগে গেছে। তাই ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাইনি, টাইপ আচরণ করে ফেললেন। আচ্ছা যেহেতু গায়ে লেগেছে সেহেতু ধর্ষণ রোধ করতে সচেষ্ট হোন, ধর্ষণ রোধ করে দেখায় দেন, যে আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালনে কোনো গাফিলতি করেন না। মুখ চেপে ধরে, প্রতিবাদের ভাষা কেড়ে নিয়ে, নিজেদের দায় এড়াতে পারবেন না। গ্রেফতার করে মানুষের মুখ বন্ধ করে শ্রদ্ধা অর্জন করা যায় না, শ্রদ্ধা জোর করে আদায় করা যায় না। কাজ দিয়ে, নিজেদের দায়িত্ব পালন করে, শ্রদ্ধা অর্জন করুন, তাহলে সিনেমার ভাষায় বদলে যাবে। আর না হলে, পেছনে লোকে কী বলে, তা নিশ্চয়ই আপনারাও জানেন! ফেসবুক থেকে