১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ৮:২৮
শিরোনাম:

গাড়ি ছিনতাই চক্রের মূল সমন্বয়কসহ গ্রেপ্তার ৫

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকা হতে সংঘবদ্ধ গাড়ি ছিনতাই চক্রের মূল সমন্বয়কসহ পাঁচ সদস্যকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-৪। তারা বিভিন্ন কৌশলে গাড়ি চুরি ও ছিনতাই করতো বলে জানিয়েছে র‍্যাব। আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওরান বাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়েজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং-এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, গত ১১ আগস্ট রাজধানীর দারুস সালাম এলাকা হতে গাড়ি ছিনতাই চক্রের পাঁচজন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সেই অভিযানে উদ্ধার করা হয় চারটি পিকআপ। সেই গ্রেপ্তারকৃদের জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটিত হয়। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী হতেও তথ্য পাওয়া যায়। ফলে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত র‌্যাব-৪ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গাড়ি ছিনতাই চক্রের মূলহোতা মো. আজিম উদ্দিন (৩৮) সহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার অপর চারজন হলেন- মো. রফিক উল্লাহ (২৬), মো. সেলিম (৫০), মো. কামরুল হাসান (২৬) এবং ওমর ফারুক (২৫)।

এই অভিযানে উদ্ধার করা হয় ছিনতাইকৃত তিনটি পিকআপ, একটি সিএনজি, একটি পিস্তল, এক রাউন্ড গুলি, তিনটি ছোরা, একটি চাইনিজ কুড়াল, ছয়টি মোবাইল এবং নগদ ১২ হাজার টাকা।

খন্দকার আল মঈন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, তারা সংঘবদ্ধ যানবাহন/গাড়ি ছিনতাই/ চুরি চক্রের সদস্য। এই সংঘবদ্ধ গাড়ি ছিনতাইকারী চক্রের সঙ্গে ১৫-২০ জন জড়িত। এই চক্রের মূল হোতা ও সমন্বয়ক গ্রেপ্তারকৃত আজিম উদ্দিন।

বিগত ৫-৬ বছর যাবৎ এই দলটি সক্রিয় রয়েছে। এই সিন্ডিকেটে সদস্যরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে ইতিমধ্যে শতাধিক গাড়ি ছিনতাই/চুরি করেছে বলে জানায়। এ পর্যন্ত এই চক্রটি গাড়ি ছিনতাইয়ের মাধ্যমে কোটি টাকার অধিক কারবার করেছে বলে জানায়।

চুরির কৌশল

র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা সাধারণত ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটসহ নারায়ণগঞ্জ, সাভার ও গাজীপুরের আশপাশের এলাকায় পিকআপ, সিএনজি ছিনতাই/চুরি করে থাকে। তাদের কৌশল সম্পর্কে জানায়, তারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে কাজ করে থাকে।

১ম দল : প্রথমত এই দলের সদস্যরা বিভিন্ন ছদ্মবেশে গাড়ি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। মূলত গাড়ি পার্কিং, গতিবিধি, চালক ও মালিক সম্পর্কে পূর্বেই তথ্য সংগ্রহ করে থাকে।

২য় দল : মূল হোতা/মূল সমন্বয়কের নির্দেশনা মোতাবেক এই দলটি মাঠ পর্যায় হতে গাড়ি ছিনতাই/চুরি করে থাকে। এ ছাড়াও তারা ক্ষেত্র বিশেষে চালকদের প্রলুব্ধ করে ছিনতাই নাটক সাজিয়ে থাকে। এই দলে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সদস্যরা থাকে। যেমন- অভিজ্ঞ চালক ও মেকানিক ইত্যাদি। যাতে নির্বিঘ্নে ছিনতাই বা চুরিকৃত গাড়ি নিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে পারে।

এ ছাড়া পার্কিং অবস্থায় গাড়ির লক সহজে ভাঙ্গা যায়। এ দলের সদস্যরা গাড়ি ভাড়ার ছদ্মবেশে ভিকটিম চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। অতঃপর পথিমধ্যে চেতনানাশক ওষুধ ভিকটিম গাড়ির চালককে খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে সেবন করিয়ে থাকে। পরবর্তী সময়ে গাড়ির চালককে রাস্তায় ফেলে দিয়ে তার মোবাইল ফোন হস্তগত করে নেয়।

৩য় দল : ছিনতাই বা চোরাইকৃত গাড়ি গ্রহণ করার পর এরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় লুকিয়ে রাখে। অতঃপর ভিকটিম চালকের মোবাইল হতে মূল মালিকেসঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা দাবি করে থাকে। ক্ষেত্র বিশেষে তারা টাকা প্রাপ্তির পর চোরাইকৃত গাড়ি নির্দিষ্ট স্থানে রেখে দেয়, যা মালিক সংগ্রহ করে নেয়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা মালিককে প্রতারিত করে থাকে।

৪র্থ দল : নির্দিষ্ট কয়েকদিন ছিনতাই হওয়া গাড়ি লুকিয়ে রাখার পর মূল সমন্বয়কের নির্দেশনা মোতাবেক নির্দিষ্ট ওয়ার্কশপে প্রেরণ করা হয়। যেখানে গাড়ীর রং পরিবর্তন করা হয়। ক্ষেত্র বিশেষে গাড়ীর যন্ত্রাংশ বিচ্ছিন্ন করা হয়ে থাকে। যা পরবর্তী সময়ে কম মূল্যে বিক্রি করা হয়। এ ছাড়াও চোরাইকৃত গাড়ির যন্ত্রাংশসমূহ এক গাড়িরটা অন্য গাড়িতে এবং ভুয়া রেজিষ্ট্রেশন নম্বর প্লেট প্রতিস্থাপন করে থাকে, যা হাতে কখনো ধৃত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

৫ম দল : মূল সমন্বয়ক নিজেই এই দলের মূল ভূমিকা পালন করে থাকে। তার কয়েকজন সহযোগী দ্বারা ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে থাকে। সাধারণত তারা বিভিন্ন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের নাম যুক্ত করে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে থাকে। পরবর্তী সময়ে সেগুলো বিক্রি অব্দি ভাড়ায় দেওয়া হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, কম মূল্য হওয়ার কারণে এই চোরাই/ছিনতাইকৃত গাড়ির একটি চাহিদাও রয়েছে। এই যানবাহনসমূহ মাদক পরিবহনেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

র‍্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের সিন্ডিকেটের মূলহোতা সমন্বয়ক আজিম। সে সকল কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব, সমন্বয়, বন্টন ও ছিনতাইকৃত গাড়ির বিক্রয়/ভাড়ার ব্যবসা করে। গ্রেপ্তারকৃত রফিক ও ফারুক নিজ গ্যারেজসহ বেশ কয়েকটি গ্যারেজে গাড়ির রং পরিবর্তন/মডিফিকেশন বা বিবর্তন করে থাকে। এরা ক্ষেত্র বিশেষে স্বশরীরে সম্পৃক্ত থেকে গাড়ি ছিনতাইয়ে কারিগরি সহায়তা প্রদান করে থাকে। গ্রেপ্তারকৃত সেলিম ও কামরুল যথাক্রমে পিকআপ ও সিএনজি’র দক্ষ চালক। তারা ছিনতাইয়ে মূল দলে যুক্ত থেকে ছিনতাইয়ে অংশগ্রহণ করে থাকে।

সিন্ডিকেট সদস্যদের নামে রাজধানী ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কুমিল্লা ও গাজীপুরের বিভিন্ন থানায় বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। এই সিন্ডিকেটে সদস্যরা পূর্বে বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত ছিল। তারা বিভিন্ন মামলায় আটক হয়ে জেলে অপরাধীদের সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে এই চক্রের সদস্যের সংখ্যা বৃদ্ধি করে। মূলহোতা আজিমের নামে মাদক মামলাও রয়েছে বলেও জানিয়েছেন র‍্যাব।