২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ৪:৩০
শিরোনাম:

ভাইকে বাঁচাতে ‘উল্টো সাক্ষ্য’ সন্তান হত্যা মামলার আসামিরা খালাস

গাইবান্ধা: গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে মুক্তিপণের দাবিতে পাঁচ বছরের শিশু সাকিবুল ইসলাম শুভকে অপহরণ ও হত্যা মামলার রায়ে অভিযুক্ত ১০ আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গাইবান্ধা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতের বিচারক একেএম শহিদুল আহম্মেদ আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

রায় ঘোষণাকালে সব আসামি উপস্থিত ছিলেন।

খালাস পাওয়া আসামিরা হলেন- আব্দুর রাজ্জাক, রিপন কুমার সাহা, কবির হোসেন, হারুন মিয়া, মোস্তাফিজার রহমান, মাজেদুল ইসলাম রবিন, সুমন মিয়া, লাবলু মিয়া, মৃণাল চন্দ্র ও মিলটন খন্দকার। তাদের বাড়ি সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার মিরগঞ্জ ও বালাপাড়া গ্রামে।

রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিলের কথা জানিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতের (পিপি) শাহীন গুলশান নাহার মুনমুন বলেন, শিশু শুভ হত্যা মামলাটি একটি চাঞ্চল্যকর মামলা ছিল। মামলার প্রধান আসামি আবদুর রাজ্জাক হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। সেক্ষেত্রে আমাদের সর্বোচ্চ সাজার প্রত্যাশা ছিল। তারপরেও আদালত আসামিদের খালাস দিয়েছেন। আমরা রায়ের নথি পর্যালোচনা করে উচ্চ আদালতের আশ্রয় নেব।

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে আসামিপক্ষের আইনজীবী আবুওয়ালা মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে মামলার অভিযুক্ত ১০ আসামি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। এ জন্য আদালত তাদের খালাস দিয়েছেন।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার বালাপাড়া গ্রামের বাড়ি থেকে শিশু সাকিবুল ইসলাম শুভকে অপহরণ করা হয়। পরদিন মোবাইল ফোনে তার স্কুলশিক্ষক বাবা আশেক আলী মাস্টারের কাছে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। বিষয়টি পুলিশকে অবগত করলে কৌশলে অপহরণের সঙ্গে জড়িত নয়জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তারা শুভকে হত্যার কথা জানালে ১০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বালাপাড়া গ্রামের বিল থেকে শুভর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় আশেক আলী মাস্টার বাদী হয়ে নয়নের বিরুদ্ধে সুন্দরগঞ্জ থানায় অপহরণ ও হত্যার অভিযোগে মামলা করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ শিশু শুভর আপন চাচা আব্দুর রাজ্জাকসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়।
জানা যায়, গ্রেফতারের পর আসামি কবির মিয়া হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি জানান, অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনাকারী ওই শিশুর চাচা আবদুর রাজ্জাক। এরপর গ্রেফতার করা হয় রাজ্জাককেও।

তদন্ত কর্মকর্তা সুন্দরগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসি (তদন্ত) জিন্নাত আলী সে বছরের ডিসেম্বরে ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। তবে দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিচারক মঙ্গলবার সবাইকে খালাস দেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী সিদ্দিকুর জানান, সাক্ষ্যগ্রহণের সময় মামলার বাদী শিশুটির বাবা আশেক আলী দাবি করেন, এ ঘটনায় তার ভাই রাজ্জাক জড়িত নন। আরেক আসামি কবিরের কাছ থেকে পুলিশ জোর করে জবানবন্দি আদায় করেছে।

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন বাদীর আইনজীবী শাহীন গুলশান নাহার মুনমুন।

তিনি জানান, জেরার সময় আশেক আলী বলেছেন, তার ভাই রাজ্জাক এই হত্যার পরিকল্পনাকারী- এমনটা তিনি সন্দেহ করেন না। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক এই রায় দিলেন কি না তা জানতে রায়ের কপি হাতে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।