২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ভোর ৫:২৫
শিরোনাম:

কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া ‘সুইসড্রাম কোম্পানির’ পরিচালকসহ গ্রেপ্তার ১৭

সাম্প্রতিককালে নতুন নতুন কৌশল ব্যবহার করে প্রতারণা করছে একাধিক চক্র। বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। সম্প্রতি মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ও ই-কমার্স ব্যবসার মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে দেশজুড়ে সমালোচিত হয়েছে ই-কমার্স নামক ব্যবসা। এমন কিছু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সুইসড্রাম কোম্পানির পরিচালক কাজী আল-আমিনসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-৪। প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত র‍্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল মহানগরীর পল্টন থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে সুইসড্রাম কোম্পানির অন্যতম পরিচালক কাজী আল-আমিনসহ মোট ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে। র‍্যাব-৪ এর অপারেশন অফিসার মো. জিয়াউর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেপ্তার অন্য আসামিরা হলেন মো. সালাউদ্দিন (৪৬), শেখ মো. আব্দুল্লাহ (৫৯), মনিরা ইয়াসমিন (৪৩), মো. জাহিদ হাসান (৪২), মো. স্বপন মিয়া (৩৮), মো. শাহজাহান (২৫), মো. মিজানুর রহমান (৫০), মো. বাদশা ওরফে সুলাইমান (২৬), ইমাম হোসাইন (৩৫), মো. আব্দুর রাজ্জাক ওরফে আনারুল ইসলাম (৪২), মিজানুর রহমান (৩৯), মো. ফারুক উদ্দিন (৪৭), আঞ্জমানআরা বেগম (৫২), শেখ রবিন (৩৩), ইমাম হোসাইন (৩৫) ও মোছা. আছমা বেগম (৩৫)।

র‍্যাব-৪ এর এই কর্মকর্তা জানান, অভিযানকালে প্রতারণায় ব্যবহৃত দুটি ল্যাপটপ, একটি প্রজেক্টর, কোম্পানির ব্যবহৃত দুটি সিল, দুটি ব্যানার, বিভিন্ন ধরনের চারটি ডায়েরি ও খাতা, একটি রেজিস্টার, কোম্পানির ১২৫টি লিফলেট, প্রতারণায় ব্যবহৃত সুইসড্রাম কোম্পানির ভুয়া ওষুধ/প্রসাধনী সামগ্রী, ২৫ সেট ডিসট্রিবিউটর ওয়ার্কিং ফাইল, ২৩টি মোবাইল ফোন এবং নগদ এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৫ টাকা জব্দ করা হয়।

প্রতারক সংগঠনের টার্গেট

র‍্যাব জানায়, প্রতারক চক্রের প্রতিটি সদস্য প্রতারণাকে তাদের পেশা হিসেবে গ্রহণ করায় তাদের একটি সুনির্দিষ্ট সাংগঠনিক কাঠামো রয়েছে। এই প্রতারক চক্রের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মী/সদস্য রয়েছে। এরা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বেকার ও অস্বচ্ছল যুবক-যুবতী এমনকি শিক্ষিত লোকজনকে স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা লাভের প্রলোভন দেখিয়ে প্লাটিনাম, গোল্ড, সিলভার ও সাধারণ সদস্য হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করে। আর্থিকভাবে মোটামুটি স্বচ্ছলদেরকে সদস্য সংগ্রহের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। তাদের মোটা অঙ্কের টাকা প্রদানে বাধ্য করে এবং নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে অর্থআত্মসাৎ করা হয়।

এছাড়াও, গ্রেপ্তার কাজী আল-আমিন দামি ব্রান্ডের গাড়ি নিয়ে কোম্পানির নতুন সদস্যদের নিকট প্রবাসী এবং বিভিন্ন দপ্তরের পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিত। তাদেরকে প্রলুব্ধ করে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে মনোনয়ন প্রদান করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতো। ভুক্তভোগীদের প্রলুব্ধ করে এবং তথ্যাদি সংগ্রহ করে নানান কৌশলে প্রতারক চক্রের অফিস কার্যালয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হতো। এদের প্রতি গ্রাহক/টার্গেট সংগ্রহের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করা হতো এবং অধিক মুনাফা লাভের স্বপ্ন দেখানো হতো।

প্রতারণার কৌশল

এই চক্রের প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে র‍্যাব জানায়, প্রতারক চক্রটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল এবং রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ভুক্তভোগীদের নিয়ে এসে প্রতারণামূলক সভা/সেমিনার/মোটিভেশনাল ওয়ার্কশপ লাঞ্চ ও ডিনার পার্টির আয়োজন করতো। ফলে খুব সহজেই তাদের প্রতারণার ফাঁদে পা দিতো ভুক্তভোগীরা।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাব জানায়, কোম্পানিটি বেকার ও নিরীহ যুবক এবং শিক্ষিত সরল শ্রেণির লোকজনদের মোটিভেশনাল বক্তব্য প্রদান ও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সদস্য হিসেবে সুইসড্রাম অ্যাপসে একাউন্ট খোলার মাধ্যমে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

কোম্পানিতে নতুন সদস্যদের পাঁচটি ক্যাটাগরির মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করা হতো। এক ও দুই ক্যাটাগরিতে চার হাজার ২০০ থেকে ছয় হাজার ২০০ টাকার বিনিময়ে এক প্যাকেট ওষুধ ও ৩, ৪ নম্বর ক্যাটাগরিতে ২৬ হাজার ২০০ থেকে ৫৮ হাজার টাকার বিনিময়ে ছয় থেকে ১৪ প্যাকেট ওষুধ দেওয়া হতো।

এছাড়াও, ৫ নম্বর ক্যাটাগরিতে এক লাখ ১৭ হাজার টাকার বিনিময়ে ২৮ প্যাকেট ভুয়া ওষুধ প্রদান করে প্রতিষ্ঠানটি প্রতারণা করে আসছিল। উল্লেখ্য যে, প্রতিষ্ঠানটি তাদের নির্দিষ্ট কোনো সাইনবোর্ড ও ঠিকানা ব্যবহার করতো না।

সুইসড্রাম কোম্পানি তাদের প্রচারিত ওষুধ ও সৌন্দর্যবর্ধনকারী প্রসাধনী সামগ্রী উচ্চমূল্যে বিক্রয় করে যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিকর এমনকি যা ক্যান্সার ও অন্যান্য জটিল রোগের সৃষ্টি করে বলেও জানিয়েছে র‍্যাব।