১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বিকাল ৩:৫০
শিরোনাম:

১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ: ফিরে দেখা

সুভাষ দাশগুপ্ত : ১৯৭১ সালের শেষ দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারকদের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে বাংলাদেশ নামে একটি রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হতে চলেছে, যার সম্ভাবনা সীমিত কিন্তু সমস্যা পর্বতসংকুল। এ বাস্তবতার নিরিখে ওয়াশিংটনে ১৯৭১ সালের ৬ই
ডিসেম্বর তিন সদস্যের এক কমিটি আলোচনায় বসে। এর নেতৃত্বে¡ ছিলেন পররাষ্টমন্ত্রী (সেক্রেটারী অব স্টেট) হেনরী কিসিঞ্জার। সভা শেষে আলোচনাকারীরা এই অভিমতে পৌছান যে ১৯৭২ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে। এই সভায় উপস্থিত আলেক্সিস জনসন বলেন, বাংলাদেশ একটি “আর্ন্তজাতিক ঝুড়ি” হতে যাচ্ছে। এর উত্তরে কিসিঞ্জার বলেন নিশ্চয়
আমেরিকার ঝুড়ি নয়। সম্ভবত এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে সৃষ্টি হয়েছিল সেই বিখ্যাত উক্তি “বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি” যা আদৌ কিসিঞ্জার বলেননি।

তৎকালীন সময়ে কিসিঞ্জারের মত প্রভাবশালী কুটনীতিকের নামে এই উক্তিটি দেশীয় ও আর্ন্তজাতিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়, যাতে করে সারাবিশে^ নবগঠিত বাংলাদেশ সম্পর্কে বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হয়। নি:সন্দেহে বলা যায় এ বাক্যটি তৎকালীন তথ্য সাম্রাজ্যবাদীদের সৃষ্টি যা দেশীয় ষড়যন্ত্র কারীরা তাদের অভিষ্ট লক্ষ্য (দেশ, জাতি ও বঙ্গবন্ধুকে হত্যা) অর্জনের ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা যোগায়। এদের সাহায্য করার জন্য দেশীয় গণমাধ্যমের একাংশ “বাসন্তি” সৃষ্টি করে। পরাজিত স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির সহিংস কার্যকলাপ, তাদের দোসরদের বর্হিবিশে^ সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশের বিরুদ্ধে অবিরাম অপপ্রচার, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অতি বিপ্লবী রাজনৈতিক দলগুলির পূণরূত্থান ও স্বাধীনতা বিরোধী বক্তব্য প্রচার, জাসদের জন্ম, চীনপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর
স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা, এবং বিভিন্ন জায়গায় আত্মঘাতিমূলক ধ্বংসাত্বক কার্যকলাপরে মধ্য দিয়ে দেশে এক অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি করে।

এছাড়াও বঙ্গবন্ধু তাঁর নিজের পার্টির ভিতর থেকেও প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে প্রতিকুলতার সম্মুখীন হন। এরকম এক অকল্পনীয় বাস্তবতার মধ্যদিয়ে বঙ্গবন্ধু সরকার পরিচালনা করেছিলেন। লক্ষণীয় বিষয় হল, ৬ দফা ঘোষণার ৫ বছরের মধ্যে তিনি দেশকে স্বাধীন করেছিলেন (১৯৬৬-১৯৭১)। অনুরূপভাবে ৫ বছরের মধ্যে (১৯৭৩- ১৯৭৮) তিনি দেশকে খাদ্যে স্বয়ং-সম্পূর্ণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। প্রথম পঞ্চ- বার্ষিক পরিকল্পনার শেষ বছরে (১৯৭৮) দেশে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ৫১ লক্ষ মেট্রিক টন, এর মধ্যে ১০ শতাংশ বীজ ও অপচয় বাদ দিয়ে মোট চালের পরিমান দাঁড়াবে ১ কোটি ৩৬ লক্ষ টন, যা ৮ কোটি ৫৪ লক্ষ লোকের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত হবে। বঙ্গবন্ধুর এই মহৎ উদ্যোগ প্রথম থেকেই দেশীয় ও আর্ন্তজাতকি শক্তির চক্রান্তের শিকার হয়।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, দর্শন ও দূরদর্শিতা ধারণ করার ক্ষমতা তাঁর নিজের মন্ত্রিসভার সদস্যদের এবং তৎকালীন রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যন্ত্রের ছিল না, যা বঙ্গবন্ধু এবং দেশের সাধারণ মানুষের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। এরকম প্রতিকূলতার মধ্যে বঙ্গবন্ধু তাঁর ইস্পাত কঠিন মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন এবং ¯পষ্ঠভাবে দিক নির্দেশনা প্রদান করেন কিভাবে নির্ধারিত মেয়াদে প্রথম পঞ্চ-বার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর থেকেই বাংলাদেশে একটি দীর্ঘমেয়াদী দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির প্রচেষ্টা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম লক্ষ্য ছিল।

তৎকালীন প্রেসিডেন্টদ্বয় নিক্সন এবং ফোর্র্ড এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরী কিসিঞ্জার এই নীতি বাস্তবায়নে র্সবাত্মক চেষ্টা চালায়। প্রথম থেকেই তারা এ ধারণা পোষণ করতেন যে, বাংলাদেশ একটা স্বাধীন দেশ হিসাবে টিকে নাও থাকতে পারে। এর প্রমাণ মিলে যখন ১৯৭৩ সালের জুলাই মাসে প্রেসিডেন্ট নিক্সন তাঁর দেশে সফররত তৎকালীন জাপানী প্রধানমন্ত্রী তানাকাকে বলেছিলেন যে,
বর্তমান বাস্তবতায় বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব নয় (অবমুক্ত দলিল, ইউএসএ)। অধকিন্তু, দেশের অশুভ শক্তিকে আরও উৎসাহিত করার লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ক্ষেত্রে “খাদ্যকে অস্ত্র হিসাবে” ব্যবহার করার নীতি অনুসরণ করে। যদিও এর সাথে যুক্ত তৎকালীন মার্কিন নীতি নির্ধারকরা পরবর্তীতে স্বীকার করেছিলেন যে, ১৯৭৪ সালে তাদের গৃহীত এই নীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভুল সদ্ধিান্ত ছিল। বঙ্গবন্ধুর ৫ বছরের মধ্যে খাদ্যে স্বয়ং-সম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা মার্কিন সরকারের মন-পছন্দ হয়নি, কারণ তারা অপেক্ষায় ছিল কখন বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হবে। ওয়াশিংটনের কাছ থেকে দুর্ভিক্ষের সবুজ সংকেত পেয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা একজোট হয়ে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ ঘটানোর পাঁয়তারা শুরু করে এবং ১৯৭৪ সালে তাদের ষড়যন্ত্রের মাহেন্দ্রক্ষণ আসে।

১৯৭৩ সালে রোপিত আমন ধানের ক্ষতির পরিমান ছিল ৭ লক্ষ ২২ হাজার টন চাল যা ১৯৭৪ সালের জানুয়ারী মাসের শেষের দিক থেকে বাজারে আসার কথা ছিল। এটাই ছিল ১৯৭৪ সালের প্রথম থেকে বাজারে চালের মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এপ্রিল মাসের দিকে চালের মূল্য আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে, কারণ ঐ সময় ১ লক্ষ ৪৫ হাজার টন স্থানীয় জাতের বোরো সম্পূর্ণ ভাবে নষ্ট
হয়ে যায় আগাম বন্যার কারনে। বোরোর ক্ষতি পুষিয়ে উঠার সাথে সাথে ১৯৭৪ সালের আউশ মৌসুমে আবারও বন্যার কারনে ক্ষতির পরিমান দাড়ায় ৬ লক্ষ ১৩ হাজার টন। প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে ক্রমাগতভাবে চালের মূল্য বৃদ্ধি চক্রান্তকারী শক্তির দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির মূল হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায়।

কেউ কেউ একে বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় দুর্ভিক্ষ বলে আখ্যায়িত করারও অপচেষ্টা চালায়। উল্লেখ্য, ১৯৭৪ এর দুর্ভিক্ষ পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম যা সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়। এর ফলে সরকারী ভাবে কোন কিছু গোপন করার সুযোগ ছিল না। বরং রাষ্ট্রযন্ত্রের কিছু অংশ স্বপ্রণোদিত হয়ে বিশ^-মিডিয়ার হাতে বিভিন্ন তথ্য তুলে দিয়ে দুর্ভিক্ষের উপর প্রচারণা চালানোর সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। দেশি-বিদেশি অনেক বিশেষজ্ঞ এই দুর্ভিক্ষের কারণ বিশ্লেষণ করেছেন। এদের মাঝে তারাও ছিলেন, যারা পরবর্তীতে এই সংকটকালে পরিকল্পনা কমিশনের নেতৃত্বে ছিলেন। তাদের বিশ্লেষণে দুর্ভিক্ষের একাধিক কারণ উল্লেখিত হয়েছে। কিন্তু এদের মধ্যে কোনগুলি মূখ্য আর কোনগুলি গৌণ তার বিস্তারিত ও তথ্য-নির্ভর এবং বিশ^াস যোগ্য বিশ্লেষণ পাওয়া যায় না। এবছর বঙ্গবন্ধু বলেন “আমি দেশের প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদদের নিয়োগ দিয়ে পরিকল্পনা কমিশন গঠন করি, কিন্তু তারা আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সফলতা দেখাতে পারেননি। সত্যি বলতে, তথ্য এবং বাস্তবতার মাঝে ফারাক অনেক। তারা হতে পারেন পন্ডিত, ভাল মানুষ কিন্তু সম্ভবত তারা গ্রামীণ বাংলাদেশ এবং এর অর্থনীতির সঙ্গে পরিচিত নন” (তথ্যসূত্র: মৃত্যুঞ্জয় শেখ মুজিব, ১৯৯৮, সম্পাদক: ইমদাদুল হক মিলন, পৃষ্ঠা: ৫৫)।

আমলাতন্ত্রের কারসাজির ফলে ত্রাণের খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা স¤পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ে। এবং ত্রাণ সামগ্রী খোলা বাজারে বিক্রি হতে শুরু করে। দূর্নীতিতে নিমজ্জিত সরকারী যন্ত্র, মন্ত্রিসভার কিছু সদস্য, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও উঁচু শ্রেণীর কিছু ব্যক্তি ত্রাণ বরাদ্দ ও বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের আশ্রয় নেয়। এমনকি তাদের নিজস্ব এলাকাগুলোতে ত্রাণ বিতরণের যেটুকু সামগ্রী বরাদ্দ রাখা হয়েছিল তাও বন্যার্তদের কাছে পৌছায়নি। এটি জোর দিয়ে বলা যায়, ত্রাণ বিতরণ যদি ক্ষতগ্রিস্থ মানুষের সংখ্যানুপাতে করা হত, তা হলে ১৯৭৪ সালের দুই সপ্তাহ স্থায়ী দুর্ভিক্ষ এড়ানো সম্ভব হত।

প্রচলিত রীতি অনুযায়ী কোন দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা বিচার করা হয় মানুষের মৃত্যুসংখ্যার হিসাব দিয়ে। সরকারী হিসাবে দুর্ভিক্ষে প্রাণহানির সংখ্যা ২৭ হাজার। এই সংখ্যায় লুকোচুরির কোন সুযোগ ছিল না কারণ বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ বিশ^-মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হয়। দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা যাচাই এর আরেকটি উপায় হলো কৃষকরা বিদ্যমান খাদ্য সংকটের সময় মজুতকৃত
বীজ খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করেছে কিনা? কিন্তু দেখা যায় এটি ঘটেনি কারণ ১৯৭৫ সালের শস্য মৌসুমে বীজের কোন সংকট দেখা যায়নি। আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয় তা হলো স্বাধীনতার পর দাতাগোষ্ঠী বাংলাদেশের কাছ থেকে ১২০০ কোটি টাকা দাবী করে যা পাকিস্তানকে দেয়া হয়েছিল তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে ব্যয় করার জন্য। কিন্তু বাংলাদেশে যখন তীব্র আর্থিক সংকট বিরাজ করছিল তখন সরকার ১২০০ কোটি টাকার পরিবর্র্তে ৪০০ কোটি টাকা শোধ করতে রাজী হয়। দেশের
এরকম পরিস্থিতিতে এধরনের সদ্ধিান্ত অবশ্যই বির্তকিত ছিল। এখন প্রশ্ন জাগে সরকারের কাছে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে প্রয়োজনীয় চাল ক্রয় করার সামর্থ ছিল কিনা। এখানে বলা প্রয়োজন ১৯৭৩-৭৪ সালে চাল আমদানির জন্য ৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। তখন ১ লক্ষ টন চাল আমদানি বাবদ খরচ হতো ২০ কোটি টাকা।

এর উপর আলোচনা করতে গেলে দেখা যাবে ১৯৭৩-৭৪ সালে সরকার প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও বেতন ভাতা বৃদ্ধি বরাদ্দ বাবদ অতিরিক্ত ১০৫ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা খরচ করে। এ-টাকা দিয়ে কমপক্ষে ৫ লক্ষ টন খাদ্য কেনা যেত। পাকিস্তান থেকে ফেরত সেনা কর্মকর্তাদের পুনর্বাসনের জন্য ১৯৭৩-৭৪ বাজেটে সরকারকে আরো ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখতে হয়। এ টাকা দিয়ে আরো ৫ লক্ষ টন খাদ্য কেনা যেত। এ প্রসঙ্গে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে প্রথম পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দাতা দেশ এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ১৯৭৩ এর জুলাই থেকে ১৯৭৪ এর জুন অব্দি ১ হাজার ৯৪ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকা বাংলাদেশকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়। এর থেকে কত অর্থ অবমুক্ত হয় এবং কি পরিমাণ অর্র্থ খাদ্য ক্রয় ও গ্রামীণ গরীবও দুঃস্থ জনগণের নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরির কাজে ব্যয় হয় তা জানা যায়নি। উপরে সন্নিবেশিত তথ্যগুলো পর্যালোচনা করলে

দেখা যায় আন্তজার্তিক বাজারে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিলেও অতিরিক্ত মূল্যে খাদ্য কেনার জন্য যথেষ্ট অর্থের সংকুলান থাকা সত্ত্বেও বিদেশ থেকে চাল ক্রয়ে আমলাতন্ত্রের প্রতিবন্ধকতা ও অনীহার কারণে যথাসময়ে খাদ্য আমদানী সম্ভব হয়নি এবং এর ফলে ত্রাণ সরবরাহ ব্যবস্থা স¤পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ে। ১৯৭৪ এর দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি বিরাজমান ছিল তিন মাস (আগস্ট-সেপ্টেম্বর-
আক্টোবর) এর মাঝে সেপ্টেম্বরের শেষ দু’সপ্তাহ ছিল সবচেয়ে সংকটজনক। অক্টোবরের শুরু থেকে দুর্ভিক্ষের তীব্রতা হ্রাস পায়। অথচ সেপ্টেম্বরের শেষে দাতা গোষ্ঠীর চাপের মুখে দেশে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়। তখনকার খাদ্য সচিব এমনও উল্লেখ করেছিলেন যে, ১৯৭৫ এর ফেব্রুয়ারীতে আবারো দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।

বাংলাদেশে সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষের আভাস পাওয়ার পর আমলারা সেটাকে তাদের মুল অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে থাকে। তাই ১৯৭৪ সালের স্বল্পস্থায়ী দুর্ভিক্ষ প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্টি হয়নি। মনুষ্য-সৃষ্ট কারণ এর জন্য দায়ী। ১৯৪৩ এর দুর্ভিক্ষ ও মনুষ্য-সৃষ্ট কারণে হয়েছিল। তবে তখন মূলত: দায়ী ছিল বৃটিশ সরকারের ভ্রান্ত নীতি। ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির অন্যতম কারণ ছিল অনঅভিজ্ঞ, অদক্ষ ও খন্দকার মোস্তাকপন্থী মন্ত্রিপরিষদ ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সহযোগিতায় তৎকালীন পাকিস্তান ফেরত আমলাগোষ্টির গভীর ষড়যন্ত্র। এর ধারাবাহিকতায় আসে ১৫ই আগস্ট।