২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ১০:৪৮
শিরোনাম:

ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে মা-মেয়েকে হত্যা করেন আনোয়ার

জামালপুরের মেলান্দহের গোবিন্দপুর এলাকার মোছা. আকলিমা আক্তার স্বপ্নার (৩২) সঙ্গে দীর্ঘ পাঁচ বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল অটোরিকশাচালক আনোয়ার হোসেনের। মাস তিনেক আগে তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে রিকশা বিক্রি করে নিজ এলাকায় চলে যান। উদ্দেশ্য ছিল স্বপ্নাকে বিয়ে করা।

বিয়েতে রাজি ছিলেন না স্বপ্না। এরইমধ্যে একাধিকবার ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন আনোয়ার।  সবশেষ ১ জানুয়ারি ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে স্বপ্না ও তার মাকে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যান  আনোয়ার।

ঘটনার পর হত্যার ক্লু পাচ্ছিল না পুলিশ। ডাবল মার্ডারের ঘটনায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ছায়া তদন্ত শুরু করে। তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় শনিবার রাতে আনোয়ারকে শনাক্ত ও নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ গ্রেফতার করে সিআইডির এলআইসি শাখার একটি টিম।

সিআইডি বলছে, প্রেমের সম্পর্কের জেরে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধা ও বিয়েতে রাজি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে স্বপ্নাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে আনোয়ার। বাধা দেয়ায় স্বপ্না ও তার মাকে কুপিয়ে হত্যা করে আনোয়ার।

রোববার দুপুরে মালিবাগে সিআইডির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।

তিনি বলেন, ১ জানুয়ারি জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার গোবিন্দপুরে একটি বাড়ির আলাদা ঘর থেকে মা মোছা. জয়ফুল বেগম (৫০) ও মেয়ে আকলিমা আক্তার ওরফে স্বপ্নার গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

জয়ফুল বেগমের ওমান প্রবাসী দুই ছেলে হাসান চৌধুরী (২৮) ও খালেক চৌধুরী (২৬) সেই দেশ থেকে কল করে মা-বোনকে না পেয়ে মামা মানিক মিয়াকে তাদের বাড়িতে পাঠান। মামা তাদের বাড়ি গিয়ে দরজা-জানালা বন্ধ পেয়ে প্রতিবেশীদের সহায়তায় ঘরে প্রবেশ করেন। এরপর আলাদা দুটি ঘরে তার বোন ও ভাগ্নির গলাকাটা মরদেহ দেখতে পান। ওই ঘটনায় জয়ফুল বেগমের ভাই মানিক মিয়া অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মেলান্দহ থানায় মামলা দায়ের করেন।

মুক্তা ধর বলেন, মা-মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যা করে মরদেহ ঘরের মধ্যে রেখে বাইরে থেকে দরজা জিআই তার দিয়ে আটকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। সিআইডির এলআইসি শাখা ছায়া তদন্ত শুরু করে। হত্যার ঘটনাটি কেন এবং কীভাবে সংগঠিত হয়েছে, ঘটনায় কে বা কারা জড়িত, কারো সঙ্গে পারিবারিক ব্যবসায়িক পূর্ব কোনো বিরোধ ছিল কি না, বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর ভুক্তভোগীর পরিবার ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন উৎস থেকে সরেজমিনে সংগ্রহ করা হয়।

পরে বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত বিচার বিশ্লেষণ করে আনোয়ার হোসেনের যোগসূত্র পাওয়া যায়। শনিবার রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

হত্যার ঘটনার নেপথ্যের কারণ সম্পর্কে মুক্তা ধর বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আনোয়ার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি সিআইডিকে জানিয়েছেন, প্রায় পাঁচ বছর আগে নারায়ণগঞ্জে অবস্থানকালে স্বপ্নার সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দীর্ঘদিন ধরে আনোয়ার হোসেন স্বপ্নার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করলেও স্বপ্নার জোড়ালো অসম্মতির কারণে তা সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, প্রায় ২০/২৫ দিন ধরে আনোয়ার হোসেন স্বপ্নার বড় ভাই জহুরুল চৌধুরীর (৩৫) বাড়িতে দালান নির্মাণের কাজ করে আসছিল। ১ জানুয়ারি রাতে স্বপ্না আনোয়ারকে ডেকে বলেন, তার ও তার মায়ের তীব্র মাথাব্যথা করছে। তিনি যেন কাজ শেষ করে তাদের জন্য ওষুধ নিয়ে আসেন।

কাজ শেষে সন্ধ্যার পর আনোয়ার স্বপ্নাদের বাড়ি গিয়ে গল্প করতে থাকে। একপর্যায়ে স্বপ্না ও তার মায়ের রাতের খাবার শেষ হলে আনোয়ারের কাছে মাথাব্যথার ওষুধ চান। আনোয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে তার সঙ্গে নিয়ে আসা ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেন।

কিছুক্ষণের মধ্যে একই কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন মা-মেয়ে। তখন আনোয়ার হোসেন তার অবৈধ ইচ্ছা চরিতার্থ করার হীন উদ্দেশ্যে অচেতন স্বপ্নাকে পাশের কক্ষে নিয়ে যেতে চান। একপর্যায়ে স্বপ্না জেগে যান। আনোয়ার জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করার চেষ্টা করলে স্বপ্না বাধা দেন।

আনোয়ার হোসেন অসৎ উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হয়ে ঘরে থাকা গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত ধারালো বটি দিয়ে স্বপ্নাকে হত্যা করেন। মা জয়ফুল বেগমও জেগে গেলে তাকেও গলায় কুপিয়ে হত্যা করে দরজা বন্ধ করে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান আনোয়ার। তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।