২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ১:২২
শিরোনাম:

ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় আরও বাড়ানো দাবি ব্যবসায়ীদের

বিশেষ প্রতিনিধি : করোনার প্রথম ঢেউ কাটিয়ে উঠতে না উঠতে দ্বিতীয় ঢেউ চলে আসছে। এছাড়া করোনার নতুন অমিক্রনও দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। যা দেশে করোনা ও অমিক্রন দুটি ভয়াবহ পরিস্থিতিতে রূপ নিচ্ছে। দেশে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আট হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তাই সবার মাঝে এখন আতঙ্কের বিরাজ করছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় আরও ৬ মাস বাড়ানো জরুরি। এই মুহূর্তে ব্যাংকের ঋণের টাকা পরিশোধ গেলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠা বন্ধ করে অর্থ পরিশোধ করতে হবে। তাতে হাজার হাজার কর্মকর্তা ও কর্মচারিগণ বেকার হয়ে পড়বে। এছাড়া অর্থনীতি বড় একটা ধস নেমে আসবে। ব্যাংক কর্মকর্তারাও মনে করছেন, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় আরও বাড়ানো উচিত। আর বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, যেহেতু এক বছর সময় দেওয়া হয়েছিল, সেহেতু এখন পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এক্ষেত্রে সময় আরও বাড়ানোর সুযোগ আছে।

অর্থনীতিবিদরা বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন দেশে নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত ও শনাক্তের হার বাড়ছে। মনে হচ্ছে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে। তাই মুহুর্তে দেশে কঠোরভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করা দরকার। তবে দেশের অর্তনীতি সচল রাখতে হবে। অর্থনীতি সচল রাখতে হলে ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। ব্যবসায়ীদের ঋণের কিস্তি পরিশোধের মেয়াদ বাড়াতে হবে। না বাড়ালে বিপাকে পড়বে দেশের ব্যবসায়ীরা।

প্রসঙ্গত, করোনা সংকটের কারণে ২০২০ সালজুড়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়নি ব্যবসায়ীদের। সরকারের নির্দেশনা এবং ব্যাংকার ও ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ সুযোগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ২০২০ সালে কোনও কিস্তি পরিশোধ না করেই খেলাপি হওয়া থেকে বেঁচে গেছেন ঋণগ্রহীতারা। সদ্য বিদায়ী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা শেষ হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই সময়সীমা নতুন করে আরও ছয় মাস থেকে এক বছর বাড়ানো জরুরি।

এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, করোনা মহামারিতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়ায়, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা এখনো ভয়াবহ অবস্থা পার করছে। তাই ঋণ শ্রেণীকরণ সুবিধা আগামী বছরের জুন পর্যন্ত বাড়াতে খুবই জরুরি। তিনি আরো বলেন, পৃথিবীজুড়ে মহামারী করোনা ভাইরাসের পাশাপাশি নতুন করে আবার অমিক্রন নিয়ে অজানা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এতে পৃথিবীজুড়ে অর্থনীতির অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়বে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন দেশের ব্যবসায়ীরা। গত দুই বছর ধরে আয়ের দিকে না তাকিয়ে দেশের অর্থনীতি সচল রেখেছি। দুই বছর ধরে কোন আয় করতে পারিনি। এর মধ্যে আবার শুরু হয়ে গেছে করোনা। তাই সরকারে কাছে গতবারের মত ঋণের কিস্তির সময় চাচ্ছি। বাংলাদেশ ব্যাংককে যত দ্রুত সম্ভব ঋণ শ্রেণীকরণ সুবিধার মেয়াদ বৃদ্ধি সংক্রান্ত ঘোষণা দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। ঋণ শ্রেণীকরণের মেয়াদ বাড়ালে ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি আসবে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার দ্রুত সম্ভব হবে।

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনার নানা ধরনের কারণে আরও গভীর সংকটের মুখে পড়েছে তৈরি পোশাক শিল্প খাত। এ শিল্পের মালিকরা পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ, বিনিয়োগ পরিস্থিতি ও শ্রমিকদের মজুরিসহ অন্যান্য কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন। করোনাভাইরাসের কারণে বড় ধরনের হুমকির মধ্যে পড়বে এ খাত।

সরকারের সহযোগিতার কারণে এ শিল্পের উদ্যোক্তারা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা এখনো অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু করোনার নানা ধরনের কারণে বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার দেওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করছে। এছাড়া রপ্তানি করা পণ্যের মূল্য পরিশোধে অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান সময় নিচ্ছেন। অধিকাংশ ক্রেতা সময়মতো মূল্য পরিশোধ করছেন না। নির্দিষ্ট সময়ে পেমেন্ট না পাওয়ার কারণে শিল্পে তারল্য সংকট ক্রমেই বাড়ছে। তাই এই সংকটকালীন সময়ে কর্মীদের বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধে কিস্তির সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন।

এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, কভিড-১৯ কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য একেবারেই বন্ধছিল। এখনো দেশে করোনা বিদ্ধমান। এছাড়া দেশের ব্যবসা- বাণিজ্য পুরোদমে চালু হয়নি। তাই মুহুর্তে ঋণের কিস্তি নেয়া ঠিক হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণের কিস্তির মেয়াদ আরো বাড়ানো উচিত। তিনি আরো বলেন, কভিড পরিস্থিতির সাথে ভীতির কারণ হিসাবে আরেকটি ধরণ যোগ হয়েছে তা হলো অমিক্রন। ইতোমধ্যে ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে কভিডের সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে কোন কোন দেশে লকডাউন কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপিত হয়েছে। ফলে উক্ত দেশগুলির অর্থনীতি পাশাপাশি আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রভাব পড়েছে। তাই এখন কর্মকর্তা-কর্মচারি বেতন দিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই হলো চ্যালেঞ্জ।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, আমরা বলেছি ঋণ পরিশোধের সময়সীমা আরও ছয় মাস বাড়ানো উচিত। কারণ, ব্যবসা-বাণিজ্য এখনও ঠিক হয়নি। এখনও করোনা মহামারি চলছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে করোনার দ্বিতীয় ধাপ চলছে। এর ফলে আমাদের দেশের অর্থনীতিও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, যদি সময় বাড়ানো না হয় তাহলে অধিকাংশ ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হবে আর ব্যবসায়ীরা যদি ক্ষতিগ্রস্ত হন সেক্ষেত্রে ব্যাংকও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ কারণে আমাদের দাবি, অন্তত আরও ছয় মাস ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়াতে হবে।

এ ব্যাপারে রিহ্যাবের সহসভাপতি কামাল মাহমুদ বলেন, দেশের অর্থনীতি এখনো ঘুঁরে দাঁড়াতে পারিনি। এছাড়া করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কতবছর লাগবে তা কেউ বলতে পারে না। গত দুই বছরে চারটি ঈদে কোন ব্যবসা করতে পারিনি। এর মধ্যে আবার দ্বিতীয় ঢেউ চলে আসছে। আমরা ব্যবসায়ীরা খুবই আতঙ্কে আছি। এই মুুহুর্তে ঋণের কিস্তি দিলে গেলে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে। তাই ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় আরও অন্তত ছয় মাস বাড়ানো জরুরি। কারণ এই মুর্হুতে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে গেলে বাধা পড়বে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে। একদিকে ঋণের কিস্তি অন্য দিকে ব্যবসায় মূলধণ খাটানো।

দুইটি একসাথে করতে গেলে এই মুর্হুতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়বো আমরা। এর ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, এব্যাপারে আগামীকাল একটি বৈঠক আছে। সেই বৈঠক সিন্ধান্ত নেয়া হবে। সবকিছু বিবেচনা করে সিন্ধান্ত নেয়া হবে। ব্যাংক ও ব্যবসায়ীদের উভয়ের দিক বিবেচনা করতে হবে।