২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ২:১২
শিরোনাম:

দাবিতে অনড় অনশনকারীরা, হাসপাতালে ১৬ জন

দাবিতে অনড় অনশনকারীরা, হাসপাতালে ১৬ জনশাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন | শাবিপ্রবি (সিলেট): এ যেন শরণার্থী শিবিরের অস্থায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্র। মাথার ওপর ত্রিপল, চারপাশে কাপড়ের প্রাচীর, মাঝখানে মুমূর্ষু রোগীর মতো স্ট্যান্ডে ঝোলানো স্যালাইন নিয়ে শুয়ে আছেন শিক্ষার্থীরা।

আমরণ অনশনে বসেছেন তারা। অনশনের ৭২ ঘণ্টা পার হয়েছে, প্রত্যেকের শরীরে দেওয়া হচ্ছে স্যালাইন। কেউ কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, অ্যাম্ব্যুলেন্সে তাদের নেওয়া হচ্ছে হাসপাতালে। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশনরতদের ঘিরে বসে আছেন তাদের সহপাঠী সহযোদ্ধারা। বন্ধু, সহপাঠী, সিনিয়র-জুনিয়র সবাই মিলে গভীর মমত্বে যত্ন নিচ্ছেন অনশনরতদের। চোখের জল ফেলছেন কেউ কেউ।

এমনই করুণ দৃশ্য শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে। অনশনের ৭২ ঘণ্টা পার হলেও সন্তোষজনক কোনো সিদ্ধান্ত বা সমাধান আসেনি কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে।

গত ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের নির্বিচার লাঠিচার্জ আর সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার পরে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাস। গত বুধবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুর পৌঁনে ৩টা থেকে ২৪ জন শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসেন। এর মধ্যে একজনের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি অনশন শুরুর পরের দিনই বাড়ি চলে যান। এখন পর্যন্ত ২৩ অনশনকারীর ১৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বাকি ৭ শিক্ষার্থী উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।

শুক্রবার রাতে অনশনরত শিক্ষার্থী মরিয়ম তার নানার মৃত্যুর সংবাদ পান, কান্নায় ভেঙে পড়লেও অনশন অব্যাহত রাখেন তিনি। মরিয়ম বলেন, ‘আমি আমার নানাভাইকে শেষ বারের মতো একবার দেখতে চাই। তবে আমি অনশনে থেকেই নানাকে দেখতে যাব’।

এদিকে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের মধ্যে কাজল দাস ও আব্দুল্লাহ আল রাফি হাসপাতাল থেকে ক্যাম্পাসে ফিরে আবারো অনশনস্থলে এসেছেন। রাফি বলেন, ‘শরীর একটু স্বাভাবিক বোধ করায় আমি আবার এসেছি। আমার সঙ্গীরা এখানে শীতের মাঝে কষ্ট করছে, আমি যতক্ষণ স্বাভাবিক আছি ততক্ষণ এখানেই থাকতে চাই। উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমি অনশন চালিয়ে যাবো। ’

অনশনস্থলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. মোস্তাকিম বলেন, অনশনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে কারো গ্লুকোজ লেভেল কমে গেছে। কারও ব্লাড প্রেশার লো হয়ে গেছে। আমরা তাদের স্যালাইন দিয়েছি। যারা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তাদের মেডিক্যালে রেফার করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা ১৫ জন চিকিৎসক তাদের সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। এদের মধ্যে একজন অ্যাজমা রোগী, রাতে বেশি শীত থাকায় তার শ্বাসকষ্ট বেড়েছে। তাই তাদের পালস বেশি হচ্ছে। দীর্ঘ সময় না খাওয়ার কারণে এই সমস্যা হচ্ছে। এভাবে না খেয়ে থাকলে তাদের অবস্থার আরও অবনতি হবে।

এদিকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন। তবে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদল মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে ঢাকায় না গেলেও শিক্ষকদের পাঁচ সদস্যের একটি টিম ঢাকা গিয়েছেন। শনিবার (২২ জানুয়ারি) শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে তাদের বৈঠকের কথা রয়েছে।

শনিবার দুপুরে শিক্ষকরা মেডিকেলের অনশনরত শিক্ষার্থীদেও দেখতে যান। অসুস্থ শিক্ষার্থীদের জুস খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন শিক্ষকরা। তবে শিক্ষার্থীরা তাদের অনশনে অনড় থেকে জুস পান করেননি।