১৭ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ২:২৭
শিরোনাম:

দল ক্ষমতায় থাকলেও নির্বাচন ষড়যন্ত্রমূলক ছিল: আইভী

দল ক্ষমতায় থাকলেও এবারের নির্বাচন ষড়যন্ত্রমূলক ছিল বলে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। শনিবার (২২ জানুয়ারি) সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত সদ্য সমাপ্ত ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন: জনপ্রতিনিধি নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সংলাপে আরও যুক্ত ছিলেন সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, সিপিডির ফেলো রওনক জাহান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, স্থানীয় সরকার ও শাসন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, বিএনপির সাংসদ ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা প্রমুখ।

সংলাপে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তিনবারের নির্বাচিত মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভি বলেন, ২০১১, ২০১৬ ও ২০২২ এর তিনটি নির্বাচনে পরিবেশও ছিল তিন রকম। কোনও নির্বাচনই ষড়যন্ত্রের বাইরে ছিল না। প্রতিটি সিটি নির্বাচনেই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। যদিও আমার সরকার ক্ষমতায় আছে, তবুও প্রতিনিয়ত নানা বাধার সম্মুখীন হয়ে সাধারণ মানুষের আস্থা নিয়ে তাদের ভোটে টানা তৃতীয়বারের মতো বিজয়ী হয়েছি।

সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, আমি সব সময় দল-মত-নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে গেছি। আমার শক্তি সাধারণ মানুষ। আমি শান্তির পক্ষে, কল্যাণের পক্ষে। আমার কোনো গুণ্ডা বাহিনী নেই আর থাকবেও না। আমি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চাই। আর এই শান্তির পক্ষেই নারায়ণগঞ্জবাসী বরাবরের মতো এবার ভোট দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, আমি বরাবরই ষড়যন্ত্রের শিকার। আমরা দল ক্ষমতায় থাকার পরও এই নির্বাচনে আমি প্রশাসনের কাছ থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা পাইনি। বরং আমার বিরোধী প্রার্থী তৈমূর কাকা আমার থেকে বেশি সুবিধা পেয়েছেন। আমাদের দলীয় কোন্দল ছিল। সে বিষয়ে আমি কিছু বলব না। তবে সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের ভরসা আর ভালোবাসা ও বিশ্বাস আমাকে জয়ী করেছে।

নারায়ণগঞ্জবাসী দীর্ঘদিন জিম্মি ছিল উল্লেখ করে আইভী বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার সব দলের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক। সব মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক। আমি আমার ভোট নিয়ে চিন্তা করি না। আমার কাজ সাধারণ মানুষের সঙ্গে, আমি সেটাই করে যাব। শহরের মানুষের জিম্মি ছিল কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির হাতে, আমি শুধু তাদের সাহস দিয়েছি। আমরা ত্বকী হত্যা নিয়ে আন্দোলন করেছি। সে জায়গা থেকে আমি পিছপা হব না।

তিনি বলেন, দল ক্ষমতায় থেকেও আমার অনেক কাজে বাধা। প্রকল্প দেরিতে পাস হয়। হকার মার্কেট উচ্ছেদ হয় না। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনেরও আমি কোনো সহযোগিতা পাই না। তবে এবার আশা করি সেটা পাব।

আইভী বলেন, ইভিএমের কারণে ভোট কমেছে এটা সত্য। এমন না যে ভোটাররা ভোট দিতে আসেননি। আমার অসংখ্য ভোটার ফেরৎ গেছে।

নির্বাচনের দিন বুথ কমানো ও নারীদের কেন্দ্র চার তলায় দেওয়া নিয়ে আপত্তি তুলে আইভী বলেন, আমি জানি না নির্বাচন কমিশন এটা কেন করল। যে কেন্দ্র বুথ হওয়ার কথা ছিল ১৮টি, সেখানে গিয়ে দেখলাম বুথ হয়েছে ১০টি। মানুষ গাদাগাদি করে ভোট দিচ্ছে। নারীদের ভোটকেন্দ্র করা হয়েছে চার তলায়। কেন নিচতলায় দেওয়া হলো না, এগুলো নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে।

অনুষ্ঠানের সভাপতি সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানের এক প্রশ্নের জবাবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র বলেন, স্থানীয় প্রশাসন, সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় না হওয়ায় অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সময়মত করা যায় না। এমনকি আইনও প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না। এজন্য তিনি একটি ব্যবস্থা সৃষ্টির দাবি জানান তিনি।

কর্মপরিকল্পনা নিয়ে তিনি আরও বলেন, এই শহরের যানজট পুরনো দিনের সমস্যা। একাধিকবার শহর থেকে ট্রাক স্ট্যান্ড সরানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু তাতেও প্রশাসনের সহযোগিতা পাইনি। আমি একধরনের চতুর্মুখী ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে কাজ করছি। তবে আশা করছি বিগত দিনে না করতে পারা কাজগুলো এবার আমি করতে পারব।

অনুষ্ঠানের আরেক প্রধান বক্তা পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, গণতন্ত্রকে দৃঢ় করার জন্য বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন তার উজ্জ্বল উদাহরণ। তবে কয়েকটি রাজনৈতিক দল মাঠে না থেকে মাঠের বাইরে বসে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে, এতে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ধরনের রাজনৈতিক দলকে মাঠে নামানোর জন্য তিনি দেশের গবেষণা সংস্থা ও সুশীল সমাজকে কথা বলার অনুরোধ করেন।

সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি নিরপেক্ষ থাকে এবং প্রার্থী যদি দুর্নীতিগ্রস্ত না হন তাহলে নির্বাচন যে সুষ্ঠু হয় সেটা নারায়ণগঞ্জে প্রমাণিত হয়েছে। এই নির্বাচনে ঝুঁকি না থাকায় সরকার প্রভাবিত করে নাই। এছাড়া নির্বাচন কমিশন গঠন ও মানবাধিকার বিষয়ে দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে সরকারের ওপর চাপ রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের চেয়ে সরকারের ভূমিকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ এটাও প্রমাণিত হয়েছে।