২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ৪:১৩
শিরোনাম:

ড. দিলারা বেগম: যুক্তরাষ্ট্রে ফেব্রুয়ারি মাসের গুরুত্ব

ড. দিলারা বেগম: প্রতি বছর ফেব্রুয়ারী মাসকে  ব্লাক হিষ্ট্রি মাস ঘোষণার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ অফ্রিকান-আমেরিকানদের ইতিহাসকে স্মরন, সংরক্ষন ও সম্মান্বিত করা হয়। ১৯১৫ সালে আমেরিকার ইতিহাসবিদ কার্টার জি উডসন এবং তাঁর সহকর্মীরা এ্যাসোসিয়েশন ফর দা ষ্ট্যাডি অফ নিগ্রো লাইফ এ্যাণ্ড হিস্ট্রি (এ এস এন এল এইচ এবং পরে এ এস এ এল এইচ) নামে প্রথম ব্লাক হিষ্ট্রি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত করেন যা সফল ভাবে কৃষ্ণাঙ্গ অফ্রিকানদের জীবন-যাপন, দাসত্বের ইতিহাস, ও সংস্কৃতি বিশ্ব মানব সমাজের কাছে তুলে ধরে। এ প্রতিষ্ঠানটির সদস্যবৃন্দ কৃষ্ণাঙ্গ অফ্রিকানদের ইতিহাসকে যুক্তরাষ্ট্রে দৃঢ়ভাবে প্রাতিষ্ঠানিকি করনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং ১৯১৫ থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যে কিণ্ডারগার্টেন ও দ্বাদশ শ্রেণীর উপযেগী বেশ কিছু কৃষ্ণাঙ্গ ইতিহাস পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন। ১৯২৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে  উডসন ”নিগ্রো হিস্ট্রি উইক” ঘোষণা করেন। (ফেব্রুয়ারী মাসকেই নির্ধারণ করা হয় কারন উনিশ শতকের শেষ দিকে কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে  ১২ই ফেব্রুয়ারী আব্রাহাম লিংকন এবং ১৪ই ফেব্রুয়ারি ফেড্রিক ডগলাসের জন্মদিন পালন করে এই দুই মহান নেতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হত)। এই দুই মহন নেতা দাস প্রথার রোহিত করনে গুরুত্ব পূর্ন ভুমিকা পালন করেন। ১৯৭৬ সালে প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড ব্লাক হিষ্ট্রি মাসকে দাপ্তরিক ভাবে ঘোষণা করেন।

কৃষ্ণাঙ্গ অফ্রিকানদের ইতিহাসকে সংহত করার লক্ষেই উডসন  যুক্তরার্ষ্টের মূলধারার শিক্ষাক্রমের সাথে কৃষ্ণাঙ্গদের ইতিহাসকে সমপৃক্ত কারার চেষ্টা করেন। সে সময় তার এ প্রচেষ্টার সূত্র ধরেই পরবর্তীতে ১৯৫৪ সালে ব্রাউন ভারসেস বোর্ড অফ এডুকেসন মামালায় জয়ের পর বেশ কিছু বিদ্যালয়ে কৃষ্ণাঙ্গ গোষ্ঠির বিদ্যালয়ে অংশ গ্রহন, ব্লাক স্টাডিজ প্রোগ্রামের উন্ন্য়ন ও তাদের নিজস্ব পাঠ্য-পুস্তক সোসাল স্টাডিজ কারিকুলামে অন্তৃভূক্ত করা হয়। কিন্তু এই পাঠক্রমে অনেকাংশে কৃষ্ণাঙ্গ ইতিহাসকে  অবজ্ঞা ও ভূল ব্যাখ্যা করা হয়। মনে করা হয় যে সংখ্যা গরিষ্ঠ  শিক্ষাবিদ দ্বারা রচিত কৃষ্ণাঙ্গদের ইতিহাস পড়ে আফ্রিকান ইতিহাস সম্পর্কে শিক্ষাথীরা যথার্থ জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হবেনা।

যুক্তরােেষ্ট্রর সমাজিক অবস্থানে এবং শিক্ষাক্ষেত্রে সাদা-কালো বৈষম্যই সম্পূর্ণ ব্লাক হিষ্ট্রি নয়। ঘটনাগুলো ইতিহাসের কিছু অংশ মাত্র। এ সত্য প্রতিষ্ঠিত করতে হবে যে ব্লাক হিষ্ট্রি ও আমেরিকান হিষ্ট্রি। যুক্তরাষ্টে শিক্ষা সংক্রন্ত যতগুলো মামালা হয়েছে এ মামলা গুলোর বিস্তারিত ঘটনাবলী উচ্চ শিক্ষায় এডুকেশন শিক্ষাক্রমে  ও পাঠক্রমে স্কুল ’ল’আবশ্যিক বিষয় হিসাবে সংযোজন করা হয়েছে।  বিষয়ের নাম করণ ও একাডেমিক ক্রেডিট আওয়ার উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী নিধারণ করে থাকে। বহু আমেরিকান একমত যে ব্লাক হিষ্ট্রির সঠিক ইতিহাস ব্যাপক ও বিস্তৃত ভাবে  যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার শিক্ষাক্রমের  সাথে সম্পৃক্ত হ্ওয়া প্রয়োজন যাতে শিক্ষার্থীরা পদ্ধতিগত ভাবে যুক্তরাষ্ট্রে মানুষের সমাজিক অবস্থানে বর্ণবাদের বৈষম্য বুঝতে পারে, বর্ণবাদ বৈষম্যের  বিরুদ্ধে লড়াই করে দাস প্রথার বিলপ্তি ঘটিয়ে সাম্য ও মানবাধিকার প্রষ্ঠিার জন্য যারা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তাদের কথা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করতে পারে এবং আফ্রিকান সংস্কৃতির  উন্নত ঐতহ্যবাহি দিক গুলি জানতে পারে।

২০২১ -এ এক জার্নালে প্রকাশ করা হয় যে ব্লাক হিষ্ট্রি অবশ্যিক বিষয় হিসাবে সংযুক্ত করার কোন ফেডারেল নির্দেশ নেই। যুক্তরাষ্ট্রের  প্রতিটি স্টেটের শিক্ষাবিদগন ইতিহাস পাঠের শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যক্রম তৈরি করেন। যুক্তরাষ্ট্রের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবশ্যক ও ঐচ্ছিক বিষয় হিসাবে আফ্রিকান ইতিহাস সংযোজিত হয়েছে। কিন্তু ব্লাক হিষ্ট্রির জাতীয় পাঠক্রম আফ্রিকান হিষ্ট্রির উন্ন্ত দিকগুলি আলোকপাত না করে ব্লাক হিষ্ট্রির ঘটনাবলীর উপর  বেশী গুরুত্ব  আরোপ করেছে।  এতে আফ্রিকান ও  অন্যান্য দেশের অভিবাসি শিক্ষার্থীরা আফ্রিকান ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

শিক্ষাক্রম ও পাঠক্রমে আফ্রিকান ইতিহাসের সংযোজন মানসম্মত নয় এ বিষয়টির সাথে আরও বহু ধরনের বৈষম্য বর্তমান কালেও বিরাজমান। ২০১৬ ইউ এস ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশনর এক রিপোর্টে প্রকাশ করা হয় ২০১১-১২ সালে পাবলিক স্কুলে কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যক্ষ সংখ্যা ছিল মাত্র ১০ শতাংশ, যেখনে সাদা আমেরিকানের সংখ্যা ছিল ৮০ শতাংশ। ২০১২-১৩ সালে টিচার এডুকেশন প্রোগ্রমে যারা অংশ গ্রহণ করেছিল এদের একটি বিরাট অংশই ছিল সাদা আমেকিান। বর্তমানে এই নবীন শিক্ষকগনই বর্তমানে বহু প্রাক-প্রাথমিক,প্রাথমিক, ও মাধ্যমিক  সরকারী ও বেসরকারী বিদ্যলয়ে কর্মরত। থ্রি-কে এবং প্রি-কে শিশুদের জন্য শিক্ষার অবারিত দ্বার উন্মোচন করায় বর্ণবাদ ভেদাভেদ ভেঙ্গে সব বর্ণের শিশুরা যুক্তরাষ্ট্রের শিশু শ্রেণীতে একসারিতে বসে শুধু কৃষ্ণাঙ্গ নয় বহু জাতির শিশুদের সাথে লেখা-পড়া শিখছে।

লেখক: পিএসডি এডুকেশনাল ডিরেক্টর, যুক্তরাষ্ট্র