২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, দুপুর ২:৩১
শিরোনাম:

অপশক্তি ইসলাম ও দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করছে

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর) বলেছেন, যারা ইসলামকে ধ্বংস করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে আজ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে অবস্থান নিয়েছে। এই বাংলার জমিনে তাদের অবস্থান কখনোই মানুষ হতে দেবে না ইনশা আল্লাহ। এর প্রতিবাদে যদি আমাদের রক্ত দিতে হয়, রক্ত দেব, জান দেব।

সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সিলেটে বন্যায় মানুষ পানিবন্দী হয়ে রয়েছে। তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অসহায় অবস্থায় দিন-রাত যাপন করছে। যদি প্রয়োজনে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে পানিবন্দী মানুষের কাছে সহযোগিতার জন্য পাশে দাঁড়াবেন। সঙ্গে সঙ্গে বিত্তবানরা তাদের পাশে দাঁড়াবেন। এ ছাড়া বন্যায় পানিবন্দী দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান চরমোনাই পীর।

শনিবার (২১ মে) বিকেলে খুলনা রেলস্টেশন-সংলগ্ন কদমতলা রোডে দলটির অনুষ্ঠিত খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন তিনি।

এর আগে দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে খুলনা বিভাগের ১০ জেলা ও সব উপজেলা থেকে নেতা-কর্মীরা জমায়েত হন। সমাবেশ শুরুর পর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টির মধ্যেই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

কথিত ‘গণকমিশন’ দেশের সম্মানিত ১১৬ জন আলেম ও ১০০০ মাদরাসার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ এবং ইসলাম ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের প্রতিবাদ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ, শিক্ষা-সিলেবাসে ধর্মীয় শিক্ষার সংকোচন বন্ধ, ইসলাম, দেশ ও মানবতাবিরোধী মদের বিধিমালা বাতিল, স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য-সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত কল্যাণরাষ্ট্র গঠনে ইসলামি হুকুমত কায়েমের লক্ষ্যে ইসলামী আন্দোলন খুলনা বিভাগের উদ্যোগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দলের নায়েবে আমির অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়াল।

সমাবেশে দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, বিভাগীয় সমাবেশ দিয়েছিল ঘরের মধ্যে। এই সমাবেশ কি ঘরের মধ্যে হয়? রাজপথে অবস্থান নিয়ে আমরা প্রমাণ করেছি, বিভাগীয় সমাবেশ রাস্তায় হয়। আন্দোলন-সংগ্রাম চলবে। আমরা দাবি আদায় করব।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, একটি অপশক্তি ইসলাম ও দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করছে। তারা সাম্প্রদায়িকতাকে কৃত্রিমভাবে উপস্থাপন করে বৈশ্বিক হানাদার শক্তির দৃষ্টি আকর্ষণের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ ধরনের দেশ ও ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড রুখে দিতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন, জনগণ আজ ভালো নেই, সাধারণ মানুষ তাদের চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ করতে পারছে না কারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভোজ্যতেল, চাল, ডাল, গ্যাসসহ সব নির্মাণসামগ্রী মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। অথচ সরকার এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

চরমোনাই পীরের ১৫ দফা দাবি
যেকোনো মূল্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে হবে। বাজার কারসাজির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে হবে। দেশে মদ ও সব ধরনের মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ করতে হবে।

শিক্ষার সব স্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। পূর্ণ ও আবশ্যিক বিষয় হিসেবে গণ্য করতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুসলিম শিশুদের জন্য নামাজ শিক্ষা ও কোরআন শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।

শিক্ষা সিলেবাস থেকে চরম নাস্তিকক্যবাদী সব ধর্মবিরোধী, অবৈজ্ঞানিক ও বস্তাপচা ডারউইনের থিউরি বাদ দিতে হবে। কারান্তরীণ সব মজলুম আলেম ও রাজবন্দিকে মুক্তি দিতে হবে।

জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে। সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে।

তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণের আগ পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং নির্বাচনের দিন সশস্ত্র বাহিনীর হাতে বিচারিক ক্ষমতা দিতে হবে।

নির্বাচনে সব দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে। রেডিও, টিভিসহ সব সরকারি-বেসরকারি গণমাধ্যমে সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে এবং রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সব ধরনের হয়রানি নবন্ধ করতে হবে।

দুর্নীতিবাজদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জাতীয় সংহতি ও কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠায় জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির (চ. জ) নির্বাচনব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে। সব রাজনৈতিক দলের জন্য সভা-সমাবেশসহ সাংবিধানিক স্বীকৃত সব রাজনৈতিক কর্মসূচি ও বাকস্বাধীনতা উন্মুক্ত করতে হবে।