১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ১১:৩৫
শিরোনাম:

টাক মাথায় চুল গজানোর ওষুধ আবিষ্কারের দাবি

মাথার চুল হারিয়ে টেকো হয়ে যাওয়া বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ একটি ওষুধের কল্যাণে চুল ফিরে পাওয়ার নতুন আশা দেখতে পারেন। মার্কিন ওষুধ কোম্পানি কনসার্ট ফার্মাসিউটিক্যালস বলছে, তারা নতুন একটি ওষুধ আবিষ্কার করেছে। এই ওষুধটি পরীক্ষামূলকভাবে টাক মাথার মানুষের মাঝে ব্যবহারের ছয় মাসের মধ্যে পুরো মাথায় চুল গজিয়েছে।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য সান বলছে, গবেষণায় অংশ নেওয়া প্রায় অর্ধেক মানুষের পুরো মাথায় চুল গজিয়েছে মাত্র ছয় মাসের মধ্যে। টাক নিয়ন্ত্রণে নতুন এই ওষুধের আবিষ্কারকে ‘গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক’ বলে অভিহিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। কনসার্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি এই ওষুধ দিনে দু’বার সেবন করতে হয়।

অ্যালোপেসিয়া অ্যারিয়াটা বা টাক রোগ হল একটি অটোইমিউন ব্যাধি। যেখানে চুলের গ্রন্থিকোষ ভুলভাবে ইমিউন সিস্টেম দ্বারা আক্রান্ত হয়। যার ফলে চুল পড়ে যায়। কারও কারও মাথায় একাধিক ছোট ছোট টাক থাকে এবং তাদের চুল স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে।

কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রে মাথার ত্বকের সব চুল পড়ে যায়। এই টাক অবস্থার কোনও প্রতিকার নেই। তবে কিছু ওষুধ পুনরায় চুল গজাতে সাহায্য করতে পারে। ওষুধ কোম্পানি কনসার্ট ফার্মাসিউটিক্যালস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৭০৬ জন মানুষের ওপর তাদের ওষুধের পরীক্ষা চালিয়েছে। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সবারই মাঝারি থেকে গুরুতর অ্যালোপেসিয়া অ্যারিয়াটা ছিল।

তাদের প্রাথমিকভাবে তিনটি দলে ভাগ করা হয়। একটি দলকে ৮ মিলিগ্রামের দু’টি বড়ি দিনে দু’বার সেবন করার জন্য দেওয়া হয়। আরেকটি দলকে দৈনিক ১২ মিলিগ্রামের দু’টি বড়ি দেওয়া হয়। এছাড়া অপর গ্রুপকে দেওয়া হয় প্ল্যাসেবো।

পরীক্ষায় দেখা যায়, যাদের প্ল্যাসেবো দেওয়া হয়েছিল তাদের তুলনায় যারা বড়িগুলো সেবন করেছিলেন, তাদের মাথার ত্বকে চুলের বৃদ্ধি বেশি হয়েছে। ১২ মিলিগ্রাম ডোজ যারা গ্রহণ করেছিলেন, তাদের প্রায় ৪২ শতাংশ রোগীর ৮০ শতাংশ বা তারও বেশি চুল গজিয়েছে। এছাড়া ৮ মিলিগ্রাম ডোজ গ্রহণকারীদের ৩০ শতাংশ চুল আবার গজিয়েছে।

পরীক্ষায় অংশ নেওয়া কিছু রোগীর ক্ষেত্রে মাথাব্যথা এবং ব্রণসহ অন্যান্য হালকা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সিটিপি-৫৪৩ নামের এই ওষুধটির অ্যালোপেসিয়ার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের চূড়ান্ত ফলে মিলছে এসব।

শেষ ধাপের পরীক্ষায় দেখা যায়, প্রতি ১০ জন রোগীর মধ্যে চারজনের ৮০ শতাংশ অথবা তারও বেশি চুল এক বছরের মধ্যে ফের গজিয়েছে। এই গবেষণায় যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের বিক্ষিপ্তভাবে এবং ডাবল-ব্লাইন্ড পদ্ধতি অনুসারে বেছে নেওয়া হয়েছিল।

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেডিসিনের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ব্রেট কিং এই গবেষণার সাথে সংশ্লিষ্ট। তিনি বলেছেন, আজকের এই ফল অ্যালোপেসিয়া অ্যারিয়াটার নতুন চিকিত্সার ‘গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক’। তিনি বলেন, আমি সিটিপি-৫৪৩’র প্রথম দফার তিন ধাপের পরীক্ষার ইতিবাচক এই ফল দেখে অত্যন্ত খুশি। চ্যালেঞ্জিং এই রোগের চিকিৎসায় ওষুধের আবিষ্কার অত্যন্ত প্রয়োজন।

ইয়েলের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, থ্রাইভ-এএ১ পরীক্ষায় অ্যালোপেসিয়া অ্যারিয়াটা বা টাকের চিকিৎসায় সিটিপি-৫৪৩ সম্ভবত গুরুত্বপূর্ণ থেরাপি হিসেবে কাজ করতে পারে। সিটিপি-৫৪৩ টাক রোগীদের জন্য সর্বোত্তম চিকিত্সা হতে পারে, যে রোগটি দীর্ঘদিন উপেক্ষিত থেকেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) সিটিপি-৫৪৩’র অনুমোদন দেবে বলে আশা কনসার্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের। অনুমোদন পাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে টাকের চিকিৎসায় এটি প্রথম কোনও ওষুধ হবে বলেও প্রত্যাশা তাদের।

ব্রিটেনের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এনএইচএস বলছে, চুল পড়ে যাওয়া একেবারে স্বাভাবিক এবং এটি নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। অতিরিক্ত চাপ, ওজন কমে যাওয়া অথবা আয়রনের ঘাটতির কারণে অস্থায়ী অথবা স্থায়ীভাবে চুল পড়ে যেতে পারে।