২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ১১:৩৩
শিরোনাম:

মৃত্যুর আগে কী ঘটেছিল কেকে’র কনসার্টে

কলকাতার নজরুল মঞ্চে গতকাল মঙ্গলবার রাতে গাইতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন বলিউড গায়ক কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ। এরপর হোটেল থেকে তাকে দ্রুত নেওয়া হয় কলকাতার সিএমআরআই হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কেকে’র মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দুই বাংলার সংগীত প্রেমীদের মাঝে। এর মধ্যেই কথা উঠেছে এটি শুধু মৃত্যু নয়, হত্যা হিসেবেও দেখছেন অনেকে।

আসলে কেকে’র সঙ্গে কী ঘটেছিল গতকাল অনুষ্ঠিত কলকাতার নজরুল মঞ্চে। জানা যায়, কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ দর্শক প্রবেশ করায় কনসার্টের আয়েজকরা। এর মধ্যে আবার নজরুল মঞ্চের সবগুলো এসি বন্ধ করে দেয়। কেকে বারবার জানান, তার এই গরমে গাইতে কষ্ট হচ্ছে, গানের ফাঁকে বারবার তোয়ালে দিয়ে ঘাম মুছছিলেন! একটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অডিটোরিয়ামে হাজার কিলো লাইটের মাঝে এসি ছাড়া কি করে টিকে থাকা সম্ভব, তার পরে আবার গান করে যাওয়া! ভিড়ে ঠাসা কলকাতার নজরুল মঞ্চ।

নজরুল মঞ্চে কেকে’র গান গাওয়ার পর্বের বেশ কিছু ভিডিও এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, বারবার রুমাল দিয়ে মুখ-কপালের ঘাম মুচ্ছিলেন এই শিল্পী। মাথাতেও ওই রুমাল বোলাচ্ছিলেন। একাধিকবার ছোট বোতল থেকে গলায় পানি ঢেলেছেন। পাশ থেকে মঞ্চে থাকা একজন হিন্দিতে বলে উঠলেন, ‘‌ভীষণ গরম।’ শিল্পী তার দিকে তাকিয়ে হেসে সম্মতি দিলেন যেন। তারপর একজনকে হাতের ইশারায় মঞ্চের উপরের আলোগুলো দেখিয়ে বললেন, ‘নিভিয়ে দাও।’ তার পর ফের গান শুরু।

রোহিত সাউ নামে গুরু নানক ইনস্টিটিউটের এক ছাত্র বলেন, ‘প্রচুর ভিড় হয়েছিল। বাইরেও অনেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন। একটা সময় দরজা খুলে দেওয়া হয়। এত গরম লাগছিল, মনে হচ্ছিল, এসি কাজ করছে না।’

ভাইরাল ভিডিওগুলোতে আরও দেখা যায়, টিকিট ছাড়া বাইরে থাকা হাজারও দর্শক ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছিল। আয়োজকরা তাদের থামাতে ধোঁয়া ব্যবহার করে।

এদিকে, গান শেষ করে গ্রীনরুমে ফিরে যাওয়ার সময় কেকে’র চোখে-মুখে ফুটে উঠে অসুস্থতার ছাপ। দ্রুত গ্রিনরুম ত্যাগ করে বাইরে বের হতে দেখা যায় ৫৩ বছর বয়সী এই শিল্পীকে।

কলকাতার নিলুফার হোসেন নামে একজন দর্শক ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কেকে গতকাল যখন নজরুল মঞ্চে পারফর্ম করছিলেন, তখন একটা পর্যায়ে এসি কাজ করছিল না। প্রচণ্ড ঘেমে যাচ্ছিলেন বলেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি।

প্রথমত, মিলনায়তনটি উন্মুক্ত ছিল না। সেখানকার তাপমাত্র যখন বাড়ছিল তখন কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল সব ধরনের যন্ত্রপাতি ও ভেতরের পরিবেশটা পরীক্ষা করা। ভিডিওটি ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, গায়ক কতটা ঘামছিলেন এবং ঘাম মুছতেছিলেন। বাধ্য হয়ে তিনি ম্যানেজমেন্টকে এসি চালু করতে ও কিছু লাইট বন্ধ করতে বলেছিলেন। তিনি বলতেছিলেন, ‘পিসওয়ারা জল রাহা হে ‘

বহু মানুষ যখন গেট ভেঙে কোনো রকমের পাস ছাড়াই ভেতরে প্রবেশ করল তখন কর্তৃপক্ষ কী করল? কেন তারা নিরাপত্তা দিতে পারল না।

কলকতায় গরমের কথা একবার ভাবুন তো! এ রকম গরমে মানুষে ঠাসা বদ্ধ মিলনায়তনে একজন মানুষ গান গেয়ে চলেছিলেন। তার মৃত্যু কোনো স্বাভাবিক ‘হার্ট অ্যাটাকে’ হয়নি। এই মৃত্যু আমাকে হতভম্ব করেছে।’

উল্লেখ্য, কেকে’র জনপ্রিয় গানের তালিকায় রয়েছে- ‘কেয়া মুঝে পেয়ার হ্যায়’ (কেকে), ‘তুঝে সোচতা হু’ (জান্নাত টু), ‘দিল কিউ ইয়ে মেরা শোর কারে’ এবং ‘জিন্দেগি দো পাল কি’ (কাইটস), ‘মুঝকো পেহচানলো’ (ডন টু), ‘তুনে মারি এন্ট্রিয়া’ (গুন্ডে), ‘পার্টি অন মাই মাইন্ড’ (রেস টু), ‘আভি আভি’ (জিসম টু), ‘মাত আজমা রে’ (মার্ডার থ্রি), ‘পিয়া আয়ে না’ (আশিকি টু), ‘জাবিদা হ্যায়’ (১৯২০: এভিল রিটার্নস), ‘লাপাতা’ (এক থা টাইগার), ‘খাবো খাবো’ (ফোর্স), ‘হ্যায় জুনুন’ (নিউইয়র্ক), ‘হা ম্যায় জিতনি মারতাবা’ (অল দ্য বেস্ট) ইত্যাদি।