১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বিকাল ৪:২৮
শিরোনাম:

বাংলাদেশের নারী ব্যবসায়ীরা আনতে পারেন সর্বাঙ্গীণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক বিকাশ  

আজ বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক সংকট চলছে তার মোকাবিলা করার একটি উপায় হল সারাবিশ্বে মহিলা ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য দেওয়া। যদিও আজকের দিনে বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ ব্যবসার মালিক নারীরা কিন্তু অসম বন্টন এর ফলে তারা বড় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে এক শতাংশেরও কম ব্যবসা পেয়ে থাকেন। বিশ্ব বিখ্যাত অর্থনীতি বিশারদ McKinsey কোম্পানির রিপোর্ট অনুযায়ী সারা বিশ্বে নারী ব্যবসায়ীদের উন্নতি হলে বিশ্ব অর্থনীতিতে টুয়েলভ ট্রিলিয়ন ডলার যোগ করা যেতে পারে এবং এ থেকে মহিলা ব্যবসায়ীদের হাতে আসতে পারে ৩ ট্রিলিয়ন ডলার|

এছাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলির বিকাশের জন্য যেসব অর্থনৈতিক চালক এর উপর নির্ভর করা হয় যেমন চাষ আবাদ ব্যবসা শিক্ষা এবং জনতাত্ত্বিক বৈচিত্র তার তার মধ্যে নারী ব্যবসার উন্নতি চালককে সবথেকে কম ব্যবহৃত. Moody’s corporation এবং TD Bank গ্রুপ এর একটি বিশেষ প্রতিবেদন হাউ টু বিল্ড গ্লোবাল বিজনেস ফর গুড অনুযায়ী নারী ব্যবসায়ীদের উন্নতিতে পুরো সমাজের লাভ হয় কারণ সাধারণত নারী ব্যবসায়ীরা তাদের লভ্যাংশ কর্মচারী পরিবার সমাজ ও দেশের উন্নয়নের জন্য খরচ করেন।একটি রিপোর্ট অনুযায়ী আমাদের বাংলাদেশের শ্রমজীবী মহিলাদের সংখ্যা বিশ্বমানের থেকে অনেকটাই কম| ২০১৩ তে ১২.৭ শতাংশ নারী ব্যবসায়ী থেকে ২০১৯ এ ৩৬.৭৯ শতাংশ, নারী ব্যবসায়ী যোগদান বেড়েছে, তাই এই অসমতা আমরা অনেকটাই কমিয়ে এনেছি। এবং তার ফল খুব স্পষ্ট. এক দশক আগে জনপ্রতি ১হাজার ডলার আয়ের থেকে আজ ২৬০০ ডলার জনপ্রতি আয় !

বাংলাদেশের সার্বিক উন্নতির জন্য আমাদের নারী ব্যবসায়ীদের দরকার সমান সুযোগ. প্রায়শই বড় টেন্ডার ও কন্ট্রাক্ট গুলির ক্ষেত্রে নারী ব্যবসায়ীদের বিবেচনা করা হয় না| সরকারি এবং বেসরকারি ব্যবসায়ীদের সমর্থন না পাওয়া ও মূলধনের অসম বন্টন তাদের ব্যবসার উন্নতির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়| বড় ব্যবসায়িক চুক্তির সাহায্য ছাড়া ফান্ডিং পাওয়াও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে| সর্বোপরি ব্যাংক লোন এবং বেসরকারি ঋণ ই শেষ কথা নয়, মহিলা ব্যবসায়ীরা চান সমান অধিকার এবং সমান সুযোগ তার মানে তারা উৎপাদন ও পরিষেবার মত বড় উদ্যোগে সুযোগ চান যা তাদের বিনা সুদে ব্যবসা বাড়াতে সাহায্য করবে.

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মহিলা ব্যবসায়ীরা যে সব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে সেগুলো সার্বজনীন, মূলধন প্রযুক্তি এবং ব্যবসার বিস্তার| বাংলাদেশের নারীদের ব্যবসায়িক উন্নয়নের সবথেকে সোজা উপায় হল বেসরকারি এবং সরকারি ব্যবসা বন্টনের ক্ষেত্রে মহিলাদের অংশ সুনিশ্চিত করা, এবং চেষ্টা করা বেশি থেকে বেশি কন্ট্রাকটারদের কাছে স্থানীয় মহিলা ব্যবসায়ীদের অন্তর্ভুক্তি করা| যেহেতু বাংলাদেশের মহিলা ব্যবসাগুলো প্রাথমিক বিকাশের পর্যায় রয়েছে তাই মহিলা ব্যবসায়ীদের উন্নয়নের জন্য সরকারি, বেসরকারি এবং এনজিওদের একসাথে কাজ চালিয়ে যেতে হবে| তবুও এই কথা অনস্বীকার্য যে এই সমস্ত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মহিলা ব্যবসায়ীরা প্রশংসাজনক উন্নতি করে চলেছেন|

আজ উইকানেক্ট বাংলাদেশের মহিলা ব্যবসায়ীদের উন্নতির জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বারোশো মহিলা অধিকৃত ব্যবসাকে ব্যাংক ও সরকারি এবং বেসরকারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত করতে চেষ্টা করছে| উইকানেক্টর সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম বহুজাতিক সংস্থা গুলিকে বাংলাদেশের মহিলা ব্যবসায়ীদের উপরে ভরসা করতে সাহায্য করে|এই প্রোগ্রাম নানা রকম অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাংক ক্রেতা এবং মহিলা ব্যবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগ যোগাযোগ স্থাপন করায়| বিশ্বব্যাপী কানেক্টর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এই ব্যবসায়ীরা যুক্ত হন সারাবিশ্বের ক্রেতাদের সঙ্গে যা তাদের ব্যবসা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রভূত সাহায্য করে | ২০২২ সালের মে মাস অব্দি বাংলাদেশের ৬৮৩ মহিলা মালিকানাধীন ব্যবসাকে উইকানেক্ট সিটি ব্যাংক ,আইপিডিসি ফিনান্স ও আইডিএলসি ফাইন্যান্স সঙ্গে যুক্ত করেছে| উইকানেক্টের এই প্রচেষ্টা গুলি খালি মহিলা ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেই নয় সমগ্র বাংলাদেশে ইতিবাচক অর্থনীতি গড়তে সাহায্য করবে. এ নিয়ে নীতিবিদ অর্থনীতিবিদ এবং ব্যবসা সম্বন্ধিত বিজ্ঞজনদের কোন দ্বিমত নেই যে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য নারী ব্যবসায়ীদের কোন বিকল্প নেই।

লেখক: এরোশান আলাগারেটনাম