২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ১১:০৮
শিরোনাম:

এবার ই-টিকিটিংয়ের ফাঁদে যাত্রীরা, বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ

অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ঠেকাতে রাজধানীর চারটি গণপরিবহনে পরীক্ষামূলক ই-টিকিটিং শুরু হয়েছে। তবে এ পদ্ধতিতে নতুন প্রতারণা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। তারা বলছেন, ই-টিকিটিং বাসে টিকিট ছাড়াও যাত্রী তোলা হচ্ছে। কোনো কোনো স্টপেজে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। অন্যদিকে টিকিট বিক্রেতাদের দাবি, ই-টিকিটিং আগের চাইতে প্রতি স্টপেজে ভাড়া দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত কমে গেছে।

শনিবার (১ অক্টোবর) মিরপুরের বিভিন্ন বাসস্টপেজ ঘুরে এসব তথ্য জানা যায়।

মিরপুর-১০ নম্বর বাসস্ট্যান্ড থেকে তিন সহপাঠী পরিস্থান পরিবহনে শেওড়াপাড়া যেতে ২২ টাকা করে ই-টিকিট নিয়েছেন হৃদয়। মিরপুর কলেজের এ শিক্ষার্থীরা সেখানে এক বন্ধুর বাড়িতে যাচ্ছেন। হৃদয় জাগো নিউজকে বলেন, ই-টিকিটিং পদ্ধতি চালু হওয়ায় ভালো হয়েছে। তবে বাসের মধ্যে টিকিট ছাড়া যাত্রী উঠানো হচ্ছে। ড্রাইভার-হেলপাররা বাড়তি আয়ের উদ্দেশ্যে নিয়ম ভঙ্গ করছেন।

পরিস্থান পরিবহনে মিরপুরের ইনচার্জ মো. আসাদ জাগো নিউজকে বলেন, ই-টিকিটের ভাড়া সরকার থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার সুযোগ নেই। তবে পরীক্ষামূলক হওয়ায় কয়েকটি স্টপেজের ভাড়া এখনো নির্ধারণ না হওয়ায় কিছুটা অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে দু-একজন যাত্রীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হচ্ছে। তাদের বুঝিয়ে বললে তারা মানছেন। আগামী দু-তিনদিনের মধ্যে এসব স্থানের ভাড়া আলাদা করা হবে।

তিনি বলেন, প্রজাপতি ও পরিস্থান পরিবহনের শতাধিক বাস রয়েছে। এটি মোহাম্মদপুর বসিলা থেকে আব্দুলাহপুর হয়ে কামারপড়া পর্যন্ত চলাচল করে। মোট ৬৩টি বাসস্ট্যান্ডে টিকিট দেওয়া হচ্ছে। আগের চেয়ে স্টপেজ বাড়ানো হয়েছে। ই-টিকিটিং পদ্ধতি চালু হওয়ায় যাত্রীদের জন্য ভালো হলেও বাসস্টাফদের বাড়তি আয় কমে গেছে। অনেক চালক ডিউটি করতে চাচ্ছেন না। সে কারণে শনিবার রাস্তায় পরিস্থান পরিবহনের বাস সংকট দেখা গেছে।

মাহমুদা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। মিরপুর সেনপাড়ায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করেন। মিরপুর-১০ নম্বর থেকে খিলক্ষেত যেতে তার কাছে ৩৫ টাকা ভাড়া রাখা হয়েছে। অথচ উত্তরা পর্যন্ত ৩৫ টাকা ভাড়া হলেও বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়েছে। নতুন পদ্ধতিতে নতুন চুরি বেড়েছে বলে অভিযোগ তার।

এ বাসস্ট্যান্ডে ই-টিকিট বিক্রেতা জুয়েল জানান, ছাত্র ও কোনো কোনো যাত্রী টিকিট না নিয়ে জোর করে বাসের মধ্যে উঠে যাচ্ছেন। বাধা দিলে বাস হেলপারকে হুমকি দিচ্ছেন। কারও কথা তারা মানছেন না। অনেক স্থানে চেকপোস্ট রয়েছে। কেউ টিকিট ছাড়া উঠলে সেই বাসের হেলপারকে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হচ্ছে। শুক্রবার ৮-১০ জন হেলপারের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

মিরপুর-১ নম্বরে রাজধানী পরিবহনের ই-টিকিট দেন মো. হিরা। নির্ধারিত ইউনিফর্ম শরীরে থাকার কথা থাকলেও সাধারণ পোশাকে তাকে টিকিট বিক্রি করতে দেখা গেছে। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ই-টিকিটিং হওয়ায় বাসভাড়া কমেছে। তবে কিছু স্থানে ভাড়া বেশি দিতে হচ্ছে। অ্যাপে যে ভাড়া সরকারিভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে তাই আদায় করা হচ্ছে। ভাড়ার পরিমাণ টিকিটে উল্লেখ থাকে। গন্তব্য অনুযায়ী সেই ভাড়া যাত্রীদের পরিশোধ করতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, অ্যাপে টিকিট পদ্ধতি চালু হওয়ায় বাসভাড়া আগের চাইতে কিছুটা কমেছে। বাড়তি ভাড়া আদায় করার কোনো সুযোগ থাকছে না। ওয়েবিল ও চেকার বন্ধ হলেও প্রতিটি এলাকার জন্য একজন ম্যানেজার রয়েছে। তারা চেকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন মাহমুদা আক্তার। বাসা মিরপুর-১ নম্বরে। প্রতিদিন বাসে যাতায়াত করেন। বললেন, সকালে দিশারি পরিবহনের বাসে ধানমন্ডি আসেন। ভাড়া দিতে হয়েছে ২৫ টাকা। রাতে ফেরার সময় আসাদগেট থেকে প্রজাপতি পরিবহনের বাসে যেতে ২০ টাকা দিতে হতো। তবে দুদিন ধরে প্রজাপতি বাসে ই-টিকিটিং ব্যবস্থা চালুর ফলে রাতে ফেরার সময় একদিন ১৩ টাকা, আরেক দিন ১৫ টাকা ভাড়া দিয়েছেন।

রাজধানীর পরিবহনে মিরপুর আনসার ক্যাম্প থেকে উত্তর বাড্ডা পর্যন্ত ৩০ টাকা নেওয়া হলেও ই-টিকিটিংয়ের মাধ্যমে ৪৩ টাকা আদায় করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রফিকুল ইসলাম আজাদ নামে এক যাত্রী।

জাগো নিউজকে তিনি বলেন, আনসার ক্যাম্প থেকে উত্তর বাড্ডার ভাড়া ছিল ৩০ টাকা। টিকিট সিস্টেম চালু হয়েছে কয়েকদিন। একলাফে ভাড়া বেড়েছে ১৩ টাকা। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর ভাড়া সমন্বয় করা হলে সেটি ৩০ টাকা হয়। এখন আবার কীসের বৃদ্ধি? সিটিং সার্ভিসের কথা বলা হলেও দাঁড়িয়ে লোক নেওয়া হচ্ছে। সব লাইনের বাসেই একই অবস্থা। কিলোমিটার হিসাব করলে ভাড়া হবে অনেক কম। এগুলো কি দেখার কেউ নেই? এই পরিবহন সন্ত্রাস, ভাড়া নৈরাজ্য কতদিন চলবে বলে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

সরকারের নির্দেশনা অনুসারে কিলোমিটারপ্রতি বাসভাড়া নির্ধারণ হওয়ার কথা। কিন্তু যাত্রী ও স্টাফদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ই-টিকিটিং অ্যাপে সব বাস স্টপেজের জন্য কিলোমিটার অনুযায়ী বাস ভাড়া নির্ধারণ করা হয়নি, ভাড়া নেওয়া হচ্ছে এক স্টপেজ থেকে আরেক স্টপেজ ধরে। এজন্য নিকটতম স্টপেজের ভাড়া কম হলেও দূরের স্টপেজের ভাড়া ধরা হচ্ছে অনেক বেশি।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জাগো নিউজকে বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে চারটি পরিবহনে ই-টিকিটিং শুরু হয়েছে। প্রথম এ পদ্ধতি চালু করেছে মিরপুর-১২ নম্বর থেকে ঢাকেশ্বরীগামী মিরপুর সুপার লিংক, ঘাটারচর থেকে উত্তরাগামী প্রজাপতি ও পরিস্থান, গাবতলী থেকে গাজীপুরগামী বসুমতি পরিবহনের বাস। ২৮ অক্টোবর আরও তিনটি অছিম পরিবহন, রাজধানী পরিবহন ও নূরে মক্কা পরিবহনে এ ব্যবস্থা চালু হবে। সহজ ডটকম ও যাত্রী নামে দুটি কোম্পানি এ কাজে সহায়তা করছে।

তিনি বলেন, পরিবহন খাতকে নিয়মনীতির আওতায় আনার জন্য বিশাল কাজ হাতে নিয়েছি। বর্তমানে পরীক্ষামূলকভাবে নতুন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এতে যেসব সমস্যা তৈরি হবে ধীরে ধীরে তা সমাধান করা হবে। বাড়তি ভাড়া, টিকিট ছাড়া যাত্রী বাসে নেওয়া যাবে না। সে কারণে রোববার বাসমালিকদের সঙ্গে বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে এসব বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি রাজধানীতে অতিরিক্ত বাসভাড়া আদায় নিয়ে বিভিন্ন সময় যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিরসনে ই-টিকিটিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় ঠেকাতে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে পরীক্ষামূলকভাবে চারটি পরিবহন কোম্পানিতে ই-টিকিটিং চালু হয়েছে। ২২ সেপ্টেম্বর এটি চালু হয়। স্টপেজে গিয়ে যাত্রী কোথায় যাবেন, তা বলার সঙ্গে সঙ্গে টিকিট বের করে তা হাতে তুলে দিচ্ছেন বিশেষ পোশাক গায়ে দেওয়া কর্মীরা।