১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, দুপুর ১২:৫০
শিরোনাম:

কৃষি জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ- জেলা প্রশাসক মুন্সীগঞ্জ

নেয়ামুল হক নয়ন গজারিয়া মুন্সিগঞ্জ: কৃষিজমি কমলে নিঃসন্দেহে আমাদের ফসল উৎপাদন কম হবে। আমাদের সবসময় চিন্তা করতে হবে ফসলি জমি যাতে না কমে। কিন্তু বাড়িঘর, কলকারখানা তৈরির জন্য কিছু জমি নষ্ট হবেই। তারপরও আমরা পরিকল্পিত উপায়ে এটি এ হার কমাতে পারি।

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিতে প্রধান অতিথি কাজী নাহিদ রাসুল (জেলা প্রশাসক মুন্সিগঞ্জ) বলেন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কৃষি জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরনে সমন্বিত উদ্যোগ খাদ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখবে।

যেমন: সমন্বিত উদ্যোগে বহুতল ভবন নির্মাণ করে বসবাস করতে পারি। বাইরের দেশে অনেক আগে থেকে এ ধারণাটি কাজে লাগানো হচ্ছে। বাংলাদেশে বছরে এক শতাংশ হারে কমছে কৃষিজমি। বিপরীতে প্রতিবছর প্রায় ২২ লাখ নতুন মুখ জনসংখ্যার সঙ্গে যোগ হচ্ছে। এটি চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ অবস্থায় জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে দরকার সমন্বিত কৃষি চাষ পদ্ধতির পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রকল্প ও আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি। আবার কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হলেও সেগুলো কতখানি পরিবেশবান্ধব, সেগুলোও বিবেচনায় আনতে হবে। বাংলাদেশের কৃষিতে এ ধরনের চিন্তাভাবনা একদম করা হয় না বলে জানান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. এহসানুল কবীর। এই গবেষক বলেন, কৃষি জমি কমলে নিঃসন্দেহে আমাদের ফসল উৎপাদন কম হবে। আমাদের সবসময় চিন্তা করতে হবে ফসলি জমি যাতে না কমে। কিন্তু বাড়িঘর, কলকারখানা তৈরির জন্য কিছু জমি নষ্ট হবেই। তারপরও আমরা পরিকল্পিত উপায়ে এটি এ হার কমাতে পারি। যেমন: সমন্বিত উদ্যোগে বহুতল ভবন নির্মাণ করে বসবাস করতে পারি।

বাইরের দেশে অনেক আগে থেকে এ ধারণাটি কাজে লাগানো হচ্ছে। বাংলাদেশের মতো কম আয়তনের দেশেও বর্তমানে বিষয়টি ভাবার সময় এসেছে। কৃষিতে এখন অনেক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে তবে তা পরিবেশের জন্যও কিছুটা হুমকি হয়ে পড়বে যদি সেগুলো ঠিকমত ব্যবহার করতে না পারি। অনেক সময় মেশিনের জন্য যে অ্যানার্জি/ফুয়েল ব্যবহার করা হয় যেমন ব্যাটারি, ডিজেল মাটির সঙ্গে মিশে মাটির ক্ষতি করে, সেগুলো খেয়াল রাখতে হবে। কৃষি প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে কৃষকের পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতে হবে। আর এ দায়িত্ব তাদেরই বেশি ভূমিকা পালন করা দরকার, যারা এ প্রযুক্তিগুলো মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যাবেন। দেখা যায়, কৃষকের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের যথাযথ জ্ঞান না থাকায়, একটি যন্ত্র একটানা বেশি সময় ব্যবহার করার কারণে যন্ত্রের কর্মদক্ষতা কমে যাচ্ছে। আবার একটি যন্ত্র কর্মদক্ষতা হারানোর পর ব্যবহার করা হলে সেটি তখন পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এগুলো আমাদের ভাবতে হবে। কোনো প্রযুক্তি কিংবা যন্ত্রপাতি মাঠপর্যায়ে ছড়ানো আগে আমাদের অবশ্যই বাজার পর্যালোচনা করতে হবে।

বাজারে অর্থাৎ কৃষকের কল্যাণে কাজে লাগবে এমন প্রযুক্তিই কেবল সম্প্রসারণ করতে হবে। নয়তো উল্টো সেটি আমাদের উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটাবে। অনেক সময় দেখা যায় মাটি পরীক্ষা না করেই কৃষক ফসল ফলাচ্ছেন। কিন্তু এটি কোনোভাবেই ঠিক না। কোন জমিতে কোন ফসল উপযোগী সেটিও আমরা মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে জেনে নিতে পারি। তখন সেই ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে আমরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারি। অন্যদিকে জমিতে অধিক উৎপাদনের জন্য মাত্রারিক্ত সার ব্যবহার করায় মাটির গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে, একইসঙ্গে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। সার ব্যবহারের এ জ্ঞান না থাকার দরুণ প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ সারেরও অপচয় হচ্ছে বলেও জানান এই গবেষক। গবেষক আরো বলেন, একটা সময় আমরা খাদ্যশস্য উৎপাদনে পরিমাণের ওপর জোর দিয়েছিলাম, সেটি বলতে গেলে আমরা সফল হয়েছি। বতর্মানে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূণর্তার দেশে পরিণত হয়েছে। এখন আমাদের খাদ্যমান অর্থাৎ নিরাপদ খাদ্যের দিকে অগ্রসর হতে হবে। ব্যবহার করতে হবে পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি।

উক্ত আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন গজারিয়া উপজেলার সুযোগ্য চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) জিএম রাশিদুল ইসলাম সহ সরকারি দপ্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তা গন।