২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বিকাল ৪:৫৪
শিরোনাম:

আবেদন শুরু ৮ ডিসেম্বর, ভর্তি মেধার ভিত্তিতে

উচ্চমাধ্যমিকে (একাদশ শ্রেণি) শিগগির শুরু হচ্ছে ভর্তি প্রক্রিয়া। এবারো কলেজগুলোতে ভর্তি করা হবে মেধার ভিত্তিতে। ব্যতিক্রম শুধু চার্চ পরিচালিত তিন কলেজ। সেখানে ভর্তি পরীক্ষা হবে। ৮ ডিসেম্বর অনলাইনে ভর্তির আবেদন নেওয়ার চিন্তা করছে বোর্ডগুলো। দু’মাস ধরে চলবে ভর্তি কার্যক্রম। তিন থেকে চার ধাপে আবেদন কার্যক্রম ও ফল প্রকাশ করা হবে। ফেব্রুয়ারির শুরুতে ক্লাস শুরুর চিন্তা। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেই চূড়ান্ত হবে সব।

পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতেও একই তারিখ থেকে আবেদন নেওয়ার চিন্তা চলছে। আর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ক্লাস শুরু করা হবে ৭ ফেব্রুয়ারি। কলেজে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করতে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে আলাদা দু’টি ভর্তি নীতিমালায় এসব প্রস্তাব করা হয়েছে, যা অনুমোদনে পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। এই দুই নীতিমালা চূড়ান্ত করতে বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে।

জানা যায়, সারাদেশে ৯ হাজার ১৮১টি কলেজ ও মাদরাসায় একদশ শ্রেণিতে পড়ালেখা চলে। সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট আছে ৫৬৫টি। এছাড়া ডিপ্লোমা ইন কমার্স প্রতিষ্ঠান সাতটি এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে এইচএসসি (ভোকেশনাল, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তি) পর্যায়ে প্রতিষ্ঠান আছে প্রায় ১৮শ। কলেজ ও মাদরাসায় আসন আছে ২৪ লাখ ৪০ হাজার ২৪৯টি, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিকে আছে প্রায় ২ লাখ ৪৩ হাজার।

এছাড়া কারিগরি বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পর্যায়ে প্রায় ৯ লাখ আসন রয়েছে। এর মধ্যে এইচএসসি ভোকেশনালে পৌনে তিন লাখ, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তিতে (বিএমটি) চার লাখ আসন। সব মিলে আসন সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩৩ লাখ। এবার এসএসসি, দাখিল এবং এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালে মোট পাস করেছে ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৯ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ শিক্ষার্থী। এতে এসএসসি, দাখিল আর কারিগরি- এই তিন স্তরে শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে শুধু এসএসসিতে পাস করেছে ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ৫৭১ জন, মাদরাসায় ২ লাখ ১৩ হাজার ৮৮৩ জন, আর কারিগরিতে ১ লাখ ৩০ হাজার ১৬৫ জন। সব শিক্ষার্থী ভর্তির পরও আসন শূন্য থাকছে প্রায় ১৬ লাখ।

বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড থেকে জানা যায়, দেশে সাড়ে ১১ হাজার প্রতিষ্ঠানে একদশ শ্রেণিতে পড়ালেখা হলেও আড়াইশো কলেজে ভর্তির আগ্রহ থাকে শিক্ষার্থীদের। এর মধ্যে প্রায় ২শ কলেজ ও মাদরাসা এবং ৪৭টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, একটি গ্রাফিক্স আর্ট ইনস্টিটিউট ও একটি গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকস ইনস্টিটিউট রয়েছে। এছাড়া ৫১৫টি বেসরকারি পলিটেকনিক থাকলেও হাতে গোনা ডজনখানেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী আকৃষ্ট করার ক্ষমতা রাখে। ডিপ্লোমা ইন কমার্সের ৭ প্রতিষ্ঠান ও বিএমটি এবং ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠানেও কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি হয়।

এর বিপরীতে দেখা যায়, এবছর এসএসসি-সমমানে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন শিক্ষার্থী। এছাড়া জিপিএ-৫ এর নিচে কিন্তু জিপিএ-৩ দশমিক ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী আছে আরও ৭ লাখ ৩৬ হাজার ৮৬৯ জন। এসব শিক্ষার্থীরও ভালোমানের প্রতিষ্ঠানের দিকে ছুটতে দেখা যায়। ফলে ভর্তি নিয়ে এক ধরনের তুমুল প্রতিযোগিতা তৈরি হয় প্রতিবছর। ভালো প্রতিষ্ঠানে সীমিত আসনের কারণে জিপিএ-৫ পেয়েও অনেকে পছন্দের কলেজে আবেদন করেও ভর্তির সুযোগ পায় না।

বোর্ডের সংশ্লিষ্টদের কাছে জানা যায়, এসএসসি পরীক্ষার এই ফল সামনে রেখে আগেই আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড একাদশ শ্রেণি এবং বিভিন্ন ডিপ্লোমা কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে। সে অনুযায়ী আগামী ৮ ডিসেম্বর অনলাইনে ভর্তির আবেদন শুরুর প্রস্তাব করা হয়েছে। তিন থেকে চার ধাপে দু’মাস ধরে চলবে ভর্তি কার্যক্রম। ১ ফেব্রুয়ারি কলেজ ও মাদরাসায় একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু হবে। অন্যদিকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতেও একই তারিখ থেকে আবেদন নেওয়ার চিন্তা চলছে।

চার্চ পরিচালিত ঢাকার তিন কলেজ চার্চ পরিচালিত তিনটি কলেজ হলিক্রস, সেন্ট যোসেফ এবং নটর ডেম কলেজ এবারও ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে আলাদা শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। এছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের জন্য আর যত ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, তার সব প্রতিষ্ঠানেই অনলাইনে শিক্ষার্থীর এসএসসিতে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তি করা হবে। এক্ষেত্রে এসএসসি, দাখিল ও এসএসসি ভোকেশনালে প্রাপ্ত নম্বরই (জিপিএ নয়) ভর্তির মেধাক্রম তৈরি করবে।

যে প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থী পাস করছে সেখানে কলেজ স্তর থাকলে ভর্তির ক্ষেত্রে তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এখন এই কোটায় যদি দুই হাজার ভর্তির চান্স পায়, তাহলে বাকি ৫শ আসনে বাইরে থেকে শিক্ষার্থী নেওয়া হবে। এখন ওই ৫শ আসনের বিপরীতে ২০ হাজার আবেদন পড়লে সাড়ে ১৯ হাজারই বাদ পড়বে।

ভর্তির জন্য ওয়েবসাইট xiclassadmission.gov.bd-তে আবেদন করতে হবে। সেখানে শিক্ষার্থীরা সর্বনিন্ম পাঁচটি ও সর্বোচ্চ ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করতে পারবে। খসড়া নীতিমালায় উন্মুক্ত বিশ্বিবিদ্যালয়ের এইচএসসি প্রোগ্রাম আর পলিটেকনিকের মতোই বয়সসীমা তুলে দেওয়ার চিন্তা আছে। যেসব শিক্ষার্থী এসএসসি ও দাখিলের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করেছে তাদের আবেদনের শেষ তারিখ আলাদাভাবে ঠিক করা হবে। এসব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য ১ জানুয়ারি প্রকাশ করা হবে বলে জানা যায়।

এসব বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তির খসড়া নীতিমালা অনুমোদনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এটি চূড়ান্ত করতে বৃহস্পতিবার সভা ডাকা হয়েছে। চূড়ান্ত হওয়ার পর সেটি প্রকাশ করা হবে। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে একাদশে ভর্তির আবেদন আগামী ৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু করার প্রস্তাব রয়েছে।