২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সন্ধ্যা ৭:১২
শিরোনাম:

ডিবির জ্যাকেটে ‘কিউআর কোড’, তবু থামছে না প্রতারকরা

গায়ে ডিবির জ্যাকেট। কোমরে অস্ত্র। হাতে ওয়াকিটকি আর হ্যান্ডকাফ। প্রথমে দেখে যে কেউ মনে করতে পারেন গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সদস্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও সন্দেহ হবে না। এই ছদ্মবেশে নির্জন সড়কে ভুয়া চেকপোস্ট বসিয়ে হচ্ছে ছিনতাই ও ডাকাতি। কালো গ্লাসের মাইক্রোবাস ব্যবহার করেও ডিবি পরিচয়ে চলছে অপহরণ।

এই ‘বদনাম’ থেকে রেহাই পেতে প্রকৃত ডিবি কর্মকর্তাদের জ্যাকেটে বসানো হয়েছে ‘কুইক রেসপন্স কোড’ বা ‘কিউআর কোড’। কিন্তু প্রতারকরা পুরোনো নকল জ্যাকেট ব্যবহার করে ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে তাদের প্রতারণা।

জানা যায়, গত বছরের ১ আগস্ট ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের জ্যাকেটে যুক্ত হয় অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ‘কুইক রেসপন্স কোড’ বা ‘কিউআর কোড’। এ জ্যাকেটের কিউআর কোডে কর্মকর্তাদের তথ্য আগে থেকেই জমা থাকে ডিবির নিজস্ব সার্ভারে। মোবাইল অ্যাপ দিয়ে সদস্যের কিউআর কোড স্ক্যান করলেই তাদের পরিচয় দেখা যায়। এক্ষেত্রে যদি কোনো ভুয়া ডিবির পোশাকের কোড স্ক্যান করা হয় তাহলে ‘ইনভ্যালিড কিউআর কোড’ নামে একটি বার্তা দেখা যাবে।

নতুন এই জ্যাকেটেও মিলছে না সমাধান। প্রতারকরা পুরোনো জ্যাকেট পরেই চালাচ্ছেন প্রতারণা। কিউআর কোড প্রযুক্তিসম্পন্ন জ্যাকেট দেওয়ার পরেও বেশকিছু অভিযানে ভুয়া ডিবি গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, তাদের পুরোনো জ্যাকেট বাতিল করে প্রায় পাঁচ মাস আগে কিউআর কোড সম্বলিত নতুন প্রযুক্তির জ্যাকেট দেওয়া হয়েছে। তবে প্রতারকরা আগের জ্যাকেটেই তাদের প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে। ডিবি বলে পরিচয় দিলেই ডিবির লোক ভেবে কোনো গাড়িতে কিংবা নির্জন স্থানে যাওয়া যাবে না। ডিবির জ্যাকেটে ‘কিউআর কোড’, তবু থামছে না প্রতারকরা

অনুসন্ধানে জানা যায়, বুথ বা ব্যাংকের সামনে, যেখানে মোটা অঙ্কের লেনদেন হয় সেখানে প্রতারকদের সোর্স থাকে। আবার গার্মেন্টসে বেতন দেওয়ার সময় গাড়িতে করে টাকা আনা হয়। সেখানেও অপরাধীরা সোর্সের মাধ্যমে নজরদারি করে ডাকাতির চেষ্টা করে। দীর্ঘদিন ধরে এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে। এসব ঘটনায় কখনো আসামি ধরা পড়লেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধরা পড়ে না। কেউ কেউ আবার এসব অপরাধে কারাগার থেকে বেরিয়ে ফের একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারাদেশে অনেকগুলো চক্র ডিবি পুলিশ সেজে প্রতারণা করছে। অনেক সময় তারা গাড়িতে ডিবি পুলিশ লিখে জোরপূর্বক ও ভয়ভীতি দেখিয়ে গাড়িতে তুলে টার্গেট ব্যক্তিদের কাছ থেকে লুটে নিচ্ছে সবকিছু। এদের মধ্যে কয়েকজন বিভিন্ন অপরাধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্য।

গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর রাতে এক ভুক্তভোগী রিকশায় করে মতিঝিল সিটি সেন্টার পার হয়ে অলিম্পিয়া বেকারির দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় একটি কালো রঙের নোয়াহ গাড়ি তার গতিরোধ করে। এরপর ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তার কাছে অবৈধ মালামাল আছে বলে দুই হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে তাকে গাড়িতে তোলা হয়। সঙ্গে থাকা চার লাখ ৮৫ হাজার টাকা মূল্যের বিদেশি মুদ্রা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয় তারা। পরে ওই ব্যক্তিকে রাজধানীর শাপলা চত্বর, ধোলাইপাড় টোলপ্লাজা, ধলেশ্বরী টোলপ্লাজা কুচিয়ামারা ব্রিজ ঘুরিয়ে ঢাকা-মাওয়া সড়কে পিডিএল ক্যাম্পের সামনে নামিয়ে দিয়ে মাওয়ার দিকে চলে যায় মাইক্রোবাসটি।

মামলার পর ১ জানুয়ারি রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির এলাকা থেকে ভুয়া ডিবি চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ। এসময় গ্রেফতারদের কাছ থেকে দুটি কালো রঙের নোয়াহ মাইক্রোবাস, একটি সাদা রঙের প্রভোক্স প্রাইভেটকার, দুটি পুলিশের রিফ্লেক্টিং ভেস্ট ও একটি হ্যান্ডকাফ জব্দ করা হয়।