২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বিকাল ৪:২৭
শিরোনাম:

‘ভয়ে’ তথ্য দিচ্ছেন না আবাসিক ছাত্রীরা

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় হাইকোর্টের নির্দেশে অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থী হল ত্যাগ করেছেন গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে। কিন্তু সহযোগী আরও তিন অভিযুক্ত এখনো ঘটনাস্থল দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলেই অবস্থান করছেন।

ফলে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আবাসিক শিক্ষার্থীরা রয়েছেন আতঙ্কে। ঘটনার তথ্য দিতেও শঙ্কা বোধ করছেন তারা। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এমন তথ্য।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি রাতের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী হলে অবস্থান করছেন। কিন্তু নানা কারণে তারা আতঙ্কিত। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে হুমকি-ধমকি দেওয়াসহ নানাভাবে তাদের তথ্য দিতে মানা করা হচ্ছে। ফলে তদন্ত কমিটির কাছে তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে তারা কুণ্ঠাবোধ করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ছাত্রী জানান, অভিযুক্তরা ও তাদের সহযোগীরা বিভিন্ন সময়ে গণরুমে এসে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। তারা বলছেন, কেউ যেন তদন্ত কমিটির কাছে কোনো কিছু না বলেন। আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের যেহেতু হলে থাকতে হবে, সেজন্য কেউ ঝামেলায়ও জড়াতে চাচ্ছেন না। এছাড়া কখন কীভাবে কার নাম এসে যায় এ নিয়েও ভয় পাচ্ছেন তারা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুইদ রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা নিয়ে নানা ঘটনা আছে। বেশিরভাগ তদন্তের রিপোর্ট জমা হয় না। হয়তো হল প্রশাসন বা তদন্ত কমিটির অভয়ে আশ্বস্ত হতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা, যার কারণে তারা তথ্য দিতে ভয় পাচ্ছেন। তাদের তথ্য দিতে সেরকম পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

এদিকে, গণবিজ্ঞপ্তির মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও কোনো তথ্য বা অভিযোগ জমা পড়েনি বলে জানা গেছে। বিজ্ঞপ্তি দেওয়া তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল বলেন, গত ২০ ফেব্রুয়ারি তথ্য দেওয়ার শেষ তারিখ থাকলেও ভেবেছিলাম পরে হয়তো তথ্য আসতে পারে। কিন্তু তেমন কোনো তথ্য বা অভিযোগ জমা পড়েনি।

ছাত্রীদের আতঙ্কে থাকার বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শামসুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সব ধরনের নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছি। হলে নিরাপত্তা ঝুঁকির কোনো আশঙ্কা নেই। আমরা পরিচয় গোপন রাখার বিষয়েও বলেছি। তারপরও কেউ কোনো বিষয়ে আশঙ্কায় থাকলে, আমাদের জানালে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেবো।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি দুই দফায় ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতন করার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তাবাসসুমসহ আরও সাত-আটজন জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। ঘটনা তদন্তে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এ ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী গাজী মো. মহসীন ও আজগর হোসেন তুহিন। তখন তাদের লিখিত আবেদন দিতে বলেন আদালত। সে অনুসারে তারা জনস্বার্থে রিট করেন।

১৭ ফেব্রুয়ারি রিটের শুনানি শেষে একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও একজন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তার সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এছাড়া অভিযুক্তদের ক্যাম্পাসের বাইরে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরে ১৯ ফেব্রুয়ারি গঠন করা হয় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি। এরই মধ্যে শনি, সোম ও বুধবার ভুক্তভোগী এবং অভিযুক্তদের বক্তব্য শুনেছে তদন্ত কমিটি।