১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, দুপুর ১:৩৭
শিরোনাম:

‘বিচার পাবো কিনা জানি না, তনুর মা হয়ে দেখুন, কষ্ট বুঝবেন’

‘তনুকে হারানোর সাত বছর শেষ। বিচারের কোনও লক্ষণ দেখি না। কত সাংবাদিক আসেন কত সাংবাদিক ফোন দেন। সবাই একই কথা জিজ্ঞেস করেন। অথচ মামলার তদন্তে কোনও অগ্রগতি নেই। আমরা আর কতভাবে বিচার চাইবো? কার কাছে চাইলে বিচার পাবো। শুধু এইটুকু বলতে চাই, তনুর মা হয়ে দেখুন, কেমন কষ্ট লাগে বুঝতে পারবেন।’

সাত বছর ধরে বিচার না পাওয়ার কষ্ট নিয়ে এসব কথা বলেছেন সোহাগী জাহান ওরফে তনুর মা আনোয়ারা বেগম। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী ছিলেন তনু। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের পাওয়ার হাউজের অদূরের কালভার্টের ২০ থেকে ৩০ গজ পশ্চিমে ঝোপ থেকে তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ২০১৬ সালের ২১ মার্চ বিকালে তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।

তনু-২
এরই মধ্যে সিআইডির কাছ থেকে মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। কিন্তু মামলার তদন্তে দৃশ্যমান কোনও অগ্রগতি নেই। এখনও কোনও আসামি শনাক্ত হয়নি। ফলে দেওয়া হয়নি অভিযোগপত্র। এ অবস্থার মধ্য দিয়ে সোমবার (২০ মার্চ) তনু হত্যাকাণ্ডের সাত বছর পূর্ণ হয়েছে।

এ উপলক্ষে নাট্য সংগঠন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটার তাদের কার্যালয়ে মিলাদ-মাহফিলের আয়োজন করেছে। সেখানে তনু হত্যার বিচার চেয়েছেন আয়োজকরা।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২১ মার্চ কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সাইফুল ইসলামকে তনু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর ওই বছরের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত আরও দুবার তদন্ত কর্মকর্তা বদল করা হয়। ২৪ আগস্ট আবার তদন্ত কর্মকর্তা বদল করে সিআইডির নোয়াখালী ও ফেনী অঞ্চলের তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার (বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) জালাল উদ্দিন আহম্মদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। চার বছরের বেশি সময় ধরে তদন্ত করেও মামলার কিনারা করতে পারেননি জালাল উদ্দিন আহম্মদ।

এরপর ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর হত্যা মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) ঢাকার সদর দফতরে স্থানান্তর করা হয়। এরই মধ্যে পিবিআই তিনবার কুমিল্লা সেনানিবাসে এসে মামলার বাদী তনুর বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম ও তাদের ছোট ছেলে আনোয়ার হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদেই ঘুরপাক খাচ্ছে মামলার তদন্ত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, ‘২০২০ সালের নভেম্বরের পর আমাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করেনি পিবিআই। এ অবস্থায় আমরা বিচার পাবো কিনা আদৌ জানি না।’

তনু-৩
নাট্য সংগঠন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটার তাদের কার্যালয়ে মিলাদ-মাহফিলের আয়োজন করেছে
বিচার পাওয়া নিয়ে একই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তনুর মা আনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, ‘তনুর মৃত্যুবার্ষিকীতে মসজিদে মিলাদের আয়োজন করেছি। অন্যান্য বছর তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আমাদের কাছে আসতেন। আমাদের সঙ্গে কথা বলতেন। গত দুই বছরের মধ্যে একবার পিবিআইকে ঘটনাস্থলে আসতে শুনেছি। তবে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি তারা।’

গরিব বলে বিচার পাবো না অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারটা শেষ হয়ে গেছে। খেয়ে না খেয়ে মেয়েকে মানুষ করেছি। সেই মেয়ে নেই। মৃত্যুর একদিন আগেও যদি মেয়ে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারতাম তাহলে শান্তি পেতাম। আদৌ বিচার পাবো কিনা জানি না।’

তনু হত্যা মামলা তদন্তে অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে পিবিআইয়ের প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘তনু হত্যা মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে পিবিআই। আমরা ধীরে ধীরে এগোচ্ছি। এখনও তদন্ত শেষ হয়নি। এজন্য কোনও আসামি শনাক্ত হয়নি।’