২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বিকাল ৩:২১
শিরোনাম:

বর্তমান সরকার পাকিস্তানের প্রেত্মাতা: মির্জা ফখরুল

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আপনারা কি যুদ্ধ করেছিলেন আজকের এই বাংলাদেশের জন্য? আজকের বাংলাদেশ, ৭১ সালের পাকিস্তান বাহিনীর এবং পাকিস্তার শাসকের প্রেত্মাতার বাংলাদেশ। যেভাবে পাকিস্তানিরা শাসন করেছে, শোষণ করেছে, মানুষের রক্ত চুষে নিয়েছে; আজকে একইভাবে এই আওয়ামী লীগের সরকার যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে তারা একইভাবে বাংলাদেশের মানুষকে শোষণ করছে, তাদের রক্ত শোষণ করছে এবং মানুষকে তারা ভয়ঙ্করভাবে নির্যাতন করছে।’

আজ সোমবার ঢাকার রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে মিলনায়তনে আয়োজিত গণমুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তেব্যে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল। গণসমাবেশ মঞ্চে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্যে একটি চেয়ার সংরক্ষিত রাখা হয়। সমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের সাতজন তারেক রহমান, শামা ওবায়েদ, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, নিপুণ রায় চৌধুরী, ইশরাক হোসেন, সোনিয়া সান্তা, জামাল হোসেন টুয়েলের হাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা তুলে দেওয়া হয়। জিয়াউর রহমান, বীর উত্তমের ছেলে তারেক রহমানকে দেওয়া বাংলাদেশের পতাকা গ্রহণ করেন মির্জা ফখরুল।

অনুষ্ঠান শুরুর আগে ইন্সটিটিউশনের বাইরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর শাহজাহান ওমর বীর উত্তম এবং গণসমাবেশের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন আরেক ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে এই গণসমাবেশে সারাদেশের রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হাতে অংশ নেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই বাংলাদেশ আমরা চাইনি। আমরা চেয়েছিলাম কোন বাংলাদেশ? যে বাংলাদেশের স্বপ্ন আমাদেরকে দেখিয়েছিলেন আমাদের সেই পূর্বপুরুষরা, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান- যে একটা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ যেখানে সমস্ত মানুষ সাম্যের মধ্যে বাস করবে, ন্যায় বিচারের মধ্যে বাস করবে, মানবিক মর্যাদা নিয়ে বাস করবে, কল্যাণের মধ্যে বাস করবে- সেই বাংলাদেশ আমরা চেয়েছিলাম।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের- আমরা সেই ৫২ বছর পরে আজকে এখানে দাঁড়িয়ে আপনাদেরকে… যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন তাদের বলতে হচ্ছে যে, আমরা সেই বাংলাদেশ পাইনি। এর চেয়ে হতভাগা কে হতে পারে আমাদের মধ্যে? তার কারণটি হচ্ছে যে, দলটি দাবি করে যে, তারা স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিল… তারা ক্ষমতায় আসার পরে তাদের আসল চেহারা সেই ১৯৭২ সালের মতো। এখানে অনেকে আছে তারা জানেন, ১৯৭২ সালে তারা (আওয়ামী লীগ) কি করেছিল? একইভাবে লুটপাট করেছে, একইভাবে তারা জনগণের সম্পদকে লুট করেছে, একইভাবে তারা দুর্নীতি করেছে।’

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা যারা এখানে একসময়ে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম, যারা জীবনবাজি রেখে লড়াই করেছেন আজকে আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে এই যে নতুন প্রজন্ম, তাদের কাছে সেই বাণী পোঁছিয়ে দেওয়া যে, আমাদের যখন যৌবন ছিল আমরা লড়াই করেছি, যুদ্ধ করেছি, একটা স্বাধীন ভূ-খণ্ড নিয়ে এসেছি।’

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আর এখন তোমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সেই স্বাধীনতাকে রক্ষা করবার জন্য, গণতন্ত্রকে রক্ষা করবার জন্য, অধিকারকে রক্ষা করবার জন্য তুমি যে নাগরিক স্বাধীন দেশের, ভোট দেওয়ার অধিকার আছে, বেঁচে থাকার অধিকার আছে সেটাকে রক্ষা করবার জন্য তোমাকে আরেকটা মুক্তিযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আজকে দেশকে রক্ষা করবার জন্য, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারের হটাতে হবে।’

জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত সমাবেশের একাংশ

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থাৎ ভিন্নমত পোষণকারী যারা মুক্তিযোদ্ধা তারা কি ভাতা পাচ্ছেন এখন? না। মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম উঠেছে? উঠে নাই। এই সরকার তাদের সঙ্গে যারা একমত হবে না, তাদের সবাইকে তারা সব রকমের অত্যাচার-নির্যাতন করে তাদেরকে দমন করে রাখতে চায়।’ দেশের অর্থনীতির ভঙ্গুর অবস্থা এবং দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতির পরিস্থিতি তুলে ধরে এজন্য সরকারের চরম ব্যর্থতা, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতিকে দায়ী করেন তিনি।

মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের সঞ্চালনায় মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহজাহান ওমর, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, ফজলুর রহমান, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন, সিরাজুল হক, শাহ আবু জাফর প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

মুক্তিযোদ্ধার প্রজন্মের নেতা শামা ওবায়েদ, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, নিপুণ রায় চৌধুরী, ইশরাক হোসেন, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু ও ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণও এসময় বক্তব্য দেন।