২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বিকাল ৫:২৫
শিরোনাম:

ইমরানকে গ্রেফতার বেআইনি, মুক্তির নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

ইসলামাবাদ হাইকোর্ট থেকে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেফতার করা বেআইনি বলে ঘোষণা করেছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে ইমরান খানকে অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ মে) এ রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির একটি বেঞ্চ।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় গ্রেফতারের ঘটনাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ রায় দিলেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত।

তিন বিচারপতির বেঞ্চে রয়েছেন প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিলাল, বিচারপতি মুহাম্মদ আলি মাজহার ও বিচারপতি আতহার মিনাল্লাহ। এর আগে বেঞ্চের পক্ষ থেকে স্থানীয় সময় সাড়ে ৪টার মধ্যে ইমরান খানকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশ অনুযায়ী তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ।

১৫টি গাড়ির একটি বহর নিয়ে পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করে। বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে তাকে কোর্ট রুম-১ এ পৌঁছানো হয়। বিচারপতিরা আসন গ্রহণ করার পর শুনানি শুরু হয়। শুনানির পর আদালত ইমরান খানকে গ্রেফতার করা বেআইনি বলে ঘোষণা করে। সেইসঙ্গে তাকে অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দেয়া হয়।

এর আগে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট থেকে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেফতার করা বিচার বিভাগের জন্য কলঙ্কজনক বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল।

গত মঙ্গলবার (৯ মে) ইসলামাবাদ হাইকোর্ট থেকে আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় ইমরান খানকে গ্রেফতার করা হয়। এ মামলা তদন্ত করছে ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো (এনএবি)।

গ্রেফতারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তার দল পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) আবেদন করে। সেই আবেদন শুনানির জন্য তিন সদস্যের বেঞ্চ গঠন করেন প্রধান বিচারপতি।

এ বেঞ্চে প্রধান বিচারপতি ছাড়াও বিচারপতি আতহার মিনাল্লাহ এবং বিচারপতি মুহাম্মদ আলি মাজহার আছেন। বৃহস্পতিবার বেঞ্চে শুনানির শুরুতে প্রধান বিচারপতি ওই মন্তব্য করেন।

শুনানিতে ইমরান খানের আইনজীবী হামিদ খান আদালতকে জানান, অন্তর্বর্তী জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে গিয়েছিলেন ইমরান খান।

সেখানে তার ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আদালতের সংশ্লিষ্ট কক্ষে ঝোড়ো গতিতে প্রবেশ করেন রেঞ্জাররা। তিনি বলেন, এ সময় ইমরান খানের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন তারা। তাকে গ্রেফতার করেন।

ইমরান খান কোন্ মামলায় জামিনের মেয়াদ বাড়াতে গিয়েছিলেন তা জানতে চান প্রধান বিচারপতি। বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হওয়ার আগে কোনো আবেদন করা যায় কি-না এ প্রশ্ন রাখেন বিচারপতি আতহার মিনাল্লাহ।

জবাবে আইনজীবী জানান, ইমরান খান বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন করাতে গিয়েছিলেন। কারণ, এটা না করে কোনো আবেদন দাখিল করা যায় না। সঙ্গে সঙ্গে বিচারক মিনাল্লাহ প্রশ্ন রাখেন, জাতীয় জবাবদিহিতা বিষয়ক ব্যুরো (এনএবি) কেন আইন নিজেদের হাতে তুলে নিল? ইসলামাবাদ হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে এনএবি গ্রেফতারের অনুমতি চাইলে সেটাই ভালো হতো।

প্রধান বিচারপতি বলেন, আদালত চত্বর থেকে গ্রেফতারের ফলে আদালতের পবিত্রতা কোথায় গেল। তিনি আরও জানতে চান, ইমরানকে গ্রেফতার করেছেন কতজন রেঞ্জার। এ সময় ইমরান খানের আরেক আইনজীবী সালমান সফদার আদালতকে বলেন, পিটিআই চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করতে গিয়েছিল ৮০ থেকে ১০০ জন।

এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, যখন আদালত চত্বরে ৯০ জন লোক প্রবেশ করে, তখন আদালতের সম্মানের আর কি বাকি থাকে। আদালতকে অসম্মান করেছে এনএবি।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আদালতের ভেতরে এখন আর কেউই নিজেকে নিরাপদ মনে করবেন না। তিনি বলেন, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট অথবা জবাবদিহিতা বিষয়ক কোর্ট থেকে কাউকেই গ্রেফতার করা যায় না। ইমরান খানকে গ্রেফতারের মাধ্যমে আদালতের পবিত্রতা লঙ্ঘন করা হয়েছে।