২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বিকাল ৫:৪৪
শিরোনাম:

ভিসি সিন্ডিকেটের লাগামহীন দুর্নীতির কবলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যাল

• চাকুরি দেয়ার নামে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ।
• ভিসি তার নিজের ২ ছেলে, ছেলের স্ত্রী, ভাগিনাসহ নিকটাত্মীয়দের চাকুরি দেন।
• সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের কার্যক্রম চালু না হলেও নিয়োগ দেয়া হয়েছে শতাধিক কর্মকর্তা। অর্থমন্ত্রনালয় তাদের বেতন আটকে দিলে ভিসি নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ফান্ড থেকে বেতন দিচ্ছে।
• বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনগুলো নিয়েও করছে বানিজ্য। একাউন্ট নাম এবং নম্বর চেক করলেই পাওয়া যাবে।

• ৪র্থ সমাবর্তন নিয়ে অর্থের নয় ছয় এবং অব্যবস্থাপনার কথা সকলেরই জানা। ১৫ এবং ১৬ মার্চ ২০২৩ অনেক গণমাধ্যমে এখবর প্রকাশিত হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ তার পছন্দমতো কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির মহোৎসবে মেতেছেন। ইতোমধ্যে নিয়োগ দিয়েছেন তার ছেলে ডা. তানভীর আহমেদ ( আইডি-১০০৭৬২), অপর ছেলে ডা. তাজবির আহমেদ ( আইডি-১৭৫০৭৭), পুত্রবধু ফারহানা খানম ফারাহ ( আইডি-১০০৭৮১), ভাগিনা মোঃ নাসিরুল আলম ( আইডি-৪০৪৪২), নিকটাত্মীয় এস এম বাহালুল পলাশ ( আইডি-৫০০৩৪৫) সহ আরো কয়েকজনকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ডাক্তার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে ভিসির পারিবারিক প্রতিষ্ঠান বলে আখ্যা দেন।
সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের কার্যক্রম চালু না হলেও নিয়োগ দেয়া হয়েছে শতাধিক কর্মকর্তা। অর্থমন্ত্রনালয় তাদের বেতন আটকে দিলে ভিসি নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থকমিটি দিয়ে অনুমোদনক্রমে বিশ^বিদ্যালয়ের নিজস্ব ফান্ড থেকে বেতন দিচ্ছে। যা আইনের পরিপন্থী। এখানে নিয়োগ দিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ এবং স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে।

৪র্থ সমাবর্তন নিয়ে অর্থের নয় ছয় এবং অব্যবস্থাপনার কথা সকলেরই জানা। ১৫ এবং ১৬ মার্চ ২০২৩ অনেক গণমাধ্যমে এখবর প্রকাশিত হয়েছে। সমাবর্তনের প্রকাশনাতে একটি পৃষ্ঠায় ২৪ চিকিৎসকের ভিন্ন ছবি থাকলেও সবার ক্ষেত্রে ‘এক নাম’ ব্যবহার করা হয়েছে। অংশগ্রহণকারী চিকিৎসকরা এই ভুল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি সমাবর্তনে বিশৃঙ্খল পরিবেশ ও চরম অব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জড়িত সকলকে তদন্তের আওতায় এনে উপযুক্ত জবাবদিহিতার দাবি জানিয়েছেন।

এক চিকিৎসক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেছেন, ‘এটা কিভাবে সম্ভব? মূল সম্মেলন কক্ষে খাওয়ার জন্য পানি ছিল না।’ হাস্যরস করে আরেক চিকিৎসক পোস্টে জানান, ‘‘পানি খাবা, ২৫০ মিলি দিসিলাম না সারাদিনের জন্য? এ ব্লকের ফোয়ারা দেখনি আসার আগে?’’। আরেক চিকিৎসক জানালেন: সমাবর্তন যে সম্মেলন কক্ষে হলো সেখানে শুধু মাত্র রেড কার্ডধারীদের ঢুকতে দিলো। অথচ যাদের সমাবর্তন তাদেরকে মূল সম্মেলন কক্ষে ঢুকতে দেওয়া হলো না। তাদেরকে বাইরে প্লাস্টিকের চেয়ার দিয়ে বসিয়ে বড় পর্দায় সমাবর্তন দেখতে বলা হলো।

ডিগ্রীধারী চিকিৎসক বলছেন ‘১৫ মিনিটের বেশী থাকতে পারলাম না। এত বিশৃঙ্খল পরিবেশ, তার ওপর চরম অব্যবস্থাপনা!’ তিনি ফেসবুক পোস্টে লিখেন ‘‘শ্রদ্ধেয় বিএসএমএমইউ প্রশাসন, পোস্টগ্রাজুয়েট ডিগ্রী প্রদানকারী বাংলাদেশের একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আপনারা সমাবর্তন আয়োজনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। আজকে সম্মানিত না, মনে হয়েছে অপমানিত হতে গিয়েছিলাম।’’ ‘‘আপনাদের এত টাকা দিলাম আমরা, আপনারা কি আরেকটু ভাল/বড় ভেন্যু নির্বাচন করতে পারতেন না??’’

সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী আরেক চিকিৎসক লিখেছেন ‘‘স্মরণকালের লজ্জাজনক সমাবর্তন অনুষ্ঠান আয়োজনের নির্লজ্জ প্রদর্শনী করে দেখালো বিএসএমএমইউ। তৃতীয় শ্রেণীর একটা নামমাত্র অনুষ্ঠান আয়োজন করার প্রয়োজন সম্ভবত টাকা আদায় করা। এর বাইরে কোন কিছুতেই এটা সমাবর্তন হতে পারে না। জঘন্য। ঘৃণা জানাচ্ছি একজন অংশগ্রহণকারী হিসেবে। একটা অনুষ্ঠান আয়োজনের ন্যূনতম সদিচ্ছা এদের ছিলো না। সক্ষমতা ও নেই।’’ তিনি শেষ করেছেন ‘লজ্জা লজ্জা লজ্জা।’ লিখে। আরেক চিকিৎসক সমাবর্তনকে স্মরণকালের হাস্যকর, চরম বিশৃঙ্খল ইত্যাদি বিভিন্ন বিশেষণে ভূষিত করেছেন।

সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী চিকিৎসকরা জানান: নিম্ন মানের খাবার, কুরুচিপূর্ণ আয়োজন, নিম্নমানের প্রকাশনার মাধ্যমে বিএসএমএমইউ শুধু দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদেরকেই অবমূল্যায়ন করেনি, এর সাথে জুড়ে থাকা জাতির জনকের নামকেও অসম্মান করেছে।

অংশগ্রহণকারী আরেক চিকিৎসক বললেন: একটা করে চিকেন বিরানীর প্যাকেট দেওয়া হয়েছে। যার সর্বোচ্চমূল্য ১৬০ টাকা হতে পারে। সাথে একটা ড্রিংকস। অধিকাংশরাই রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেয়েছেন। ডিগ্রীপ্রাপ্তদের কোনো স্মারক দেওয়া হয়নি। চূড়ান্ত ভাবে অপমান করা।

তারা বিএসএমএমইউ’র বিশৃঙ্খল আয়োজনকে ধিক্কার জানানো পাশাপাশি এর সাথে জড়িত সকলকে তদন্ত করে উপযুক্ত জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী একাধিক চিকিৎসক বলেছেন, তারা জেনেছেন সমাবর্তন উপলক্ষ্যে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা সম্মেলন কক্ষ দেড় কোটি টাকা দিয়ে সাজানো হয়েছে। তারা বলছেন: পাঁচ লাখ খরচ করলে পুরো সম্মেলন কক্ষ সাজানো যায়। এটা পরিকল্পিত অর্থ লোপাটের একটা নীল নকশা। টাকা পয়সা নয়-ছয় হয়েছে অথচ টাকা নেওয়া হয়েছে সার্টিফিকেট দেওয়াসহ ৮ হাজার করে, প্রত্যেকের পেছনে পাঁচ’শ টাকার বেশি খরচ হয়নি।

এক চিকিৎসক জানান: বিএসএমএমইউ’র দরকার ছিলো মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে এনে একটা অনুষ্ঠান করা, সেটা আয়োজন করতে যে টাকার দরকার ছিলো সেই টাকা যোগানোর জন্য সমাবর্তনের মুলা ঝুলিয়ে সবাইকে নিবন্ধন করালো। এটা কোনোভাবেই সমাবর্তনের মধ্যে পড়েনা। একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনও আরো সুন্দর হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের পিএস-১ ডা. রাসেলের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে। এর আগে চাকুরির লোভ দেখিয়ে ডা. রাসেল প্রতারণা করেছেন এমন অভিযোগ তুলেছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সহসভাপতি এম আর মামুন। তিনি বিচার চেয়ে গত ২৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। গণমাধ্যমেও এ খবর প্রকাশিত হয়েছিল।