২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ১২:২৬
শিরোনাম:

ড. সুভাষ দাশগুপ্ত: বাংলা ভাষার সৃষ্টি- বাংগালির পরম প্রাপ্তি ও গৌরব

ড. সুভাষ দাশগুপ্ত: আজকের এই মহান দিনে, সর্বাগ্রে স্মরণ করছি সে সব মণীষীদের যাঁরা শত প্রতিকুলতার মধ্যে ও অবিভক্ত ভারতবর্ষে বাংলাভাষাকে টিকিয়ে রাখতে সারাজীবন সংগ্রাম করে গিয়েছিলেন। যাদের কর্ম ও জীবনের বদৌলতে, হাজার বছরেরও পুরাতন এই ভাষা আজকের পর্যায়ে এসেছে, তাদের প্রতি পরমশ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। তবে, উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে, যাদের অকৃত্রিম পরিশ্রমে আজ আমরা এই মহান ভাষাতে কথা বলতে পারছি, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মদুসুদন দত্ত, জীবনানন্দ দাশ, ড. মুহাম্মদ শহীদউল্লাহ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম।

এসব মনীষীরা বাংলাভাষাকে সুমহান মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করে যাওয়ায়, বঙ্গবন্ধুর পক্ষে এই ভাষাকে প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে বাঙ্গালির জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র সৃষ্টির পথ সুগম হয়। স্মরণ করা যেতে পারে যে, মহাত্মা গান্ধী, ইংরেজী ভাষাকে ভারত থেকে হঠিয়ে দিয়ে তার স্হলে বিশুদ্ধ হিন্দি ভাষাকে প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ ও নিয়েছিলেন। লর্ড কার্জন ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন, বাঙ্গালিরা নিজেরা নিজেকে মনে করে এক মহান জাতি।

ব্রিটিশরা বাংলা ভাষার উপর প্রথম আঘাত হানে যখন বাংলাভাষী গোয়ালপাডা, কাছড় ও শ্রীহট্টকে ১৮৭৪ সালে অসম প্রদেশের সাথে যুক্ত করে। আবার, ১৮৯১ সালে লুসাই পাহাড় ও চট্টগ্রাম বিভাগকে বাংলা থেকে নিয়ে অসমের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব উঠে। আরও এক ধাপ এগিয়ে, তৎকালীন অসমের চিফ কমিশনার প্রস্তাব করেন শুধু লুসাই, চট্টগ্রাম বিভাগ নয়, ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলাও অসমের অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ। এর ধারাবাহিকতায় আসে বঙ্গভঙ্গ। এই কঠিন সময়ে বাংলা ভাষাকে সংকট থেকে রক্ষা করার মুল দায়িত্ব বর্তায় কবিগুরু ও বিদ্রোহী কবির ওপর। এই সময় বাংলা সাহিত্য আরো সমৃদ্ধ হয়, এজন্য ব্রিটিশরা শত চেষ্টার পরও এই মহান ভাষাকে ধ্বংস বা দুর্বল করতে পারেনি।

বাঙ্গালিরা আবার ও সংকটের মুখে পড়ে পাকিস্তান সৃষ্টির পর। আজ গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরন করছি সে সব শহীদদের যাঁরা নিজের জীবন দিয়ে, এই ভাষা আমাদের জন্য রেখে গেছেন। পাকিস্তান সৃষ্টির পর পর পুর্ব-পাকিস্তান মুসলিম লিগ থেকে আওয়ামী মুসলিম লিগের জন্ম হয় একমাত্র ভাষাগত কারনে। উর্দু কে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা ঘোষণার পূর্বেই, মুসলিগ লিগ, পুর্ব- পাকিস্তানে বাংলার পরিবর্তে উর্দু ভাষা প্রচলনের জন্য জোড় তৎপরতা চালাতে থাকে।

এর ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠা করেন অসাম্প্রদায়িক পুর্ব-পাকিস্তান ছাত্র লিগ। বাংলা ভাষার সৃষ্টি বাঙালির পরম প্রাপ্তি ও গৌরব।এই ভাষার অধিক চর্চা এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রয়োগের মধ্য দিয়ে এই ভাষাকে আরো সুসংহত করা আমাদের ও ভবিষ্যত বংশধরদের অন্যতম দায়িত্ব।

লেখক: প্রাক্তন সিনিয়র টেকনিকাল অফিসার, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা