২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ৮:০৪
শিরোনাম:

আ.লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এই সরকার নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসেনি, জোর করে এসেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তারা ১৫৪ জনকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে সংসদ গঠন করেছে। পরবর্তীকালে ২০১৮ সালে আগের রাতে ভোট ডাকাতি করে সরকার গঠন করেছে।’

সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আবার সামনে নির্বাচন আসছে। একইভাবে এই সরকার আবারো একটা পাতানো, ষড়যন্ত্রের নির্বাচনের পায়তারা করছে। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ভোট কখনো নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে না। এবার আওয়ামী লীগের অধীনে আর কোনো তামাশার নির্বাচন হতে দিব না। এ দেশের মানুষ হতে দেবে না।’

শনিবার বিকালে রাজধানীর উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের আউয়াল এভিনিউ সড়কে পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

ঢাকা মহানগর উত্তরের উত্তরা-পূর্ব থানার উদ্যোগে এ পদযাত্রা হয়। এ সময় বিএনপি মহাসচিব আবারো নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘আগামী ১১ মার্চ সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে।’

বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না বলেও জানিয়ে দেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে যদি কোনো নির্বাচন হয়, সেই নির্বাচন কখনোই সুষ্ঠু হবে না। সেই নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। সবার আগে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। পার্লামেন্টকে বিলুপ্ত করতে হবে। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। পরে একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সেই কমিশনের অধীনে নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার বলছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। কোন সংবিধান? যে সংবিধান নিজের মতো করে কাটাছেঁড়া করা হয়েছে। যেখানে জনগণের কোনো অধিকার নেই, মানুষ ভোট দিতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘তেল, ডিম, চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের মূল্য বেড়েছে। সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। মানুষ হাহাকার করছে। আগে ন্যায্যমূল্যে চাল, ডাল, তেল দিত, তাও বদ্ধ করে দিয়েছে সরকার। বন্ধ করা হয়েছে কার্ড। এমন অবস্থা দেশে চলছে। সারা দেশের মানুষ এখন অভাবের মধ্যে পড়ে গেছে।’

ফখরুল বলেন, ‘একদিকে দেশের মানুষের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারছে না। বিদ্যুতের দাম বারবার বাড়াচ্ছে। দুই মাসের মধ্যে ১৫% বাড়িয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে সব খরচ বেড়ে যাচ্ছে। প্রত্যেকটি জিনিসের দাম আবারো বাড়ছে। এই সরকারের জনগণের প্রতি কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। কোনো জবাবদিহিতা নেই। পার্লামেন্ট একটা আছে, তাদের জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই।’

তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফল বেড়ল, চার ঘণ্টার মধ্যে আবার তা স্থগিত করা হলো। পরে ফল প্রকাশ করা হলো, সেখানে আগে যারা বৃত্তি পেয়েছিল, তাদের অনেকেই তখন পায়নি। এখানেও এই সরকার ব্যর্থ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা তাণ্ডব চালাচ্ছে। কয়েকদিন আগে এক ছাত্রীকে কী নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। সে ঘটনায় ছাত্রলীগ তাদের বহিষ্কার করল। তবে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করেনি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে কথায় কথায় বলে বৈশ্বিক সমস্যার কারণে, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। কখনোই না। তাদের দুর্নীতি আজ এমন এক জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে, দুর্নীতির কারণে সব সমস্যা তৈরি হচ্ছে দেশে। কেউ কানাডায়, কেউ মালয়েশিয়ায় বাড়ি করছে, টাকা পাচার করছে। দেশের সব সম্পদ তারা বিদেশে জমা করছে। এজন্যই আন্দোলন শুরু হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘চলমান আন্দোলনে আমাদের ১৭ জন ভাই প্রাণ দিয়েছেন। অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা আমাদের গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী এখনো কারাবরণ করে আছেন, গৃহবন্দি হয়ে আছেন। দীর্ঘ চার বছর ধরে তিনি কারাবন্দি হয়ে আছেন। মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। অনেক নেতাকর্মী এখনো কারাগারে রয়েছেন। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী চার মাস ধরে কারাগারে। স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদকে গুম করে দেওয়া হয়েছিল। তাকে ভারতে ফেলে রাখা হয়েছির। সেখানকার আদালত তাকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন, মুক্ত করে দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত সরকার দেশে ফিরে আনার উদ্যোগ নেয়নি। দাবি জানচ্ছি নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুন। রিজভীসহ সবাইকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মামলা প্রত্যাহার, ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে- তা প্রত্যাহার করতে হবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মনে করেছে তারা এভাবেই নির্বাচন করে নিয়ে যাবে। আর আবার সম্পদ লুট করবে। এভাবে মানুষ আর নির্বাচন করতে দেবে না। মানুষ রাস্তায় নেমেছে। শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনেকে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। জনগণের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই আন্দোলন বিএনপিকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য নয়, এই আন্দোলন জনগণের অধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলন। কথা বলার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আন্দোলন।’

তিনি আরও বলেন, ‘কথায় কথায় এই সরকার মিথ্যা মামলা দেয়, বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালায় । ১৫ বছর ধরে আমরা এই আন্দোলনে আছি, থাকব। আমাদের হাজারেরও বেশি ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। অসংখ্য ভাইদের পঙ্গু করা হয়েছে।’