২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সন্ধ্যা ৭:৩৫
শিরোনাম:

ক্ষমতায় থাকার নীল-নকশা নিয়ে নির্বাচন করতে চায় সরকার: মির্জা ফখরুল

২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার নীল-নকশা নিয়ে সরকার আগামী নির্বাচন করতে চায় বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ শনিবার নয়াপল্টনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এ অভিযোগ করেন। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের ফুটপাতে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে আব্দুল্লাহপুর (টঙ্গী ব্রিজ)-বিমানবন্দর-যমুনা ফিউচার পার্ক-বাড্ডা-রামপুরা-আবুল হোটেল-মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত এবং দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে মালিবাগ রেলগেট-মৌচাক-শান্তিনগর-কাকরাইল-নয়াপল্টন-ফকিরাপুল-আরামবাগ-মতিঝিল শাপলা চত্বর-ইত্তেফাক মোড়-টিকাটুলী-যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার এই মানববন্ধন করে। একইভাবে সাত সাংগঠনিক জেলা ছাড়া সারাদেশের সব জেলা, মহানগরে এই কর্মসূচি করে বিএনপি।

এই কর্মসূচি প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ মানববন্ধ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করছি। তব ধৈর্যে্যর সীমা আছে, মানুষের ধৈর্যে্যরও সীমা আছে। এই আন্দোলন দিনে দিনে বাড়তে থাকবে, তীব্র থেকে তীব্র হবে, বেগবান হবে। এই রকম শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আমরা এই ভয়াবহ দানবীয় ফ্যাসিস্ট অবৈধ সরকারকে সরে যেতে বাধ্য করব এবং নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নতুন কমিশনের অধীনে নতুন একটি সরকার, নতুন একটি সমাজ গড়ে তুলব-এই হচ্ছে আমাদের প্রত্যাশা।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১৯৭২ সালের সংবিধান, পরবর্তীকালে জনগনের প্রয়োজনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংযোজন করা হয়। এই সংবিধানকে ভেঙে-চুরে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার জন্য দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে। দুইটা নির্বাচন করেছে ইতোমধ্যে। ২০১৪ সালে জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের (প্রয়াত) কথায় ‘‘কুত্তা মার্কা নির্বাচন’’, একজন লোকও ছিল না। ১৫৪ টা আসন ডিক্লিয়ার করেছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচনে।’

তিনি বলেন, ‘২০১৮-তে নির্বাচন করেছে আগের রাত্রে সমস্ত ভোট তুলে নিয়ে চলে গেছে। এখন আবার খায়েশ হয়েছে, তারা ২০৪১ সাল পর্যন্ত থাকতে হবে। সেই ব্লু প্রিন্ট (নীল-নকশা) নিয়ে তারা আবার ২০২৪-এ নির্বাচন করতে চায়, সেই নির্বাচন করতে চায় একই কায়দা।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কেন? তারা তো আজীবন থাকতে পারে। এই দেশটা তো হচ্ছে তাদের জমিদারি। আমরা সব প্রজা, আর সেই প্রজার মতোই আমাদের সঙ্গে ব্যবহার শুরু করেছে। আজকে এই কথায় হবে না, আজকে কাজে নেমে পড়তে হবে। মানুষকে নামতে হবে আরও বেশি করে। জনগণকে সম্পৃক্ত করতে আরও কাজ করতে হবে। জনগণের উত্তাল তরঙ্গে মতো আন্দোলন সৃষ্টি করে এদেরকে পরাজিত করতে হবে। এই সরকার-এই ইসির অধীনে নির্বাচন নয়।’

তিনি বলেন, ‘এখন কথা বলতে শুরু করেছে সরকারের দুইজন-তিনজন মন্ত্রী আছেন না, যারা কথায় কথায় বিভিন্ন কথা বলেন। এখন আবার বলতে শুরু করেছে, বিএনপি ভয় পায়। পরিস্কার ভাষায় বলে দিতে চাই, বিএনপি এই সরকারের অধীনে, হাসিনা সরকারের অধীনে, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহন করবে না।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। এই আন্দোলনে আমরা ১০ দফা দিয়েছি। সেখানে পরিস্কার আমরা বলেছি, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করার পরে একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তাদেরকে নির্বাচন করতে হবে।’

সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা সংঘর্ষে যেতে চাই না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি, আপনারা সেটা মেনে নেন, ১০ দফা মেনে নেন। ১০ দফা দাবি মেনে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন, সংসদ ভেঙে দিন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা রিকশাওয়াকে জিজ্ঞাসা করেন, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে তারা যেতে চায় কিনা। তারা সবাই বলবে যে, না। কারণ তাকে ( শেখ হাসিনা) তারা বিশ্বাস করে না। তার অধীনে কোনো দিন সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন হতে পারে না।’

এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘দেশটাকে এই সরকার রসাতলে নিয়ে গেছে। একদিকে গুম-খুন-ছিনতাই-রাহাজানি সব চলছে। পত্রিকায় দেখলাম আজকে আওয়ামী লীগ পাহারায় থাকবে। আমার কথা হলো আওয়ামী লীগ কাকে পাহারা দেয়? দিনেদুপুরে ১২ কোটি টাকা লুট হলো ডাচ-বাংলা ব্যাংকের। আওয়ামী লীগ আমাদের পাহারা দেয়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যারা নিরীহ মানুষ, এদেশের যারা নিরীহ যারা আজকে নিজের বেঁচে থাকার দাবিতে রাস্তায় নেমে গেছে তাদের গ্রেপ্তার করছে সরকারের বাহিনী। আমাদের রুহুল কবির রিজভী, মীর সরাফত আলী সপু, সাইফুল আলম নিরব, মোনায়েম মুন্না, এস এম জাহাঙ্গীরসহ আরও অনেককে…। তাদের অপরাধ কী? আমরা তো দেশের জনগণের দাবির কথা বলছি, দেশে অন্যায় হচ্ছে, জুলুম হচ্ছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি। এটা বললে গ্রেপ্তার করবেন- এটা হতে পারে না।’

ঢাকার মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম মজনুর পরিচালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।