জয়পুরহাটের ৩৭২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৭২টিতে চলছে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে পাঠদান। প্রখর রোদ আর বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। রয়েছে শ্রেণিকক্ষের সংকট। ফলে নিরূপায় হয়ে ঝুঁকি নিয়ে ওইসব ভবনে চলছে ক্লাস। ঢাকা টাইমস
ঝুঁকির কারণে অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমেছে। অর্থাভাবে সংস্কারও করতে পারছে না বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলছেন, ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়গুলো তালিকা করে সংস্কার অথবা নতুন ভবন নির্মাণের জন্য প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাটের পাঁচটি উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৭২টি। যার মধ্যে ৭২টি বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে কোনো কোনো বিদ্যালয় ভবনের পলেস্তারা খসে মরিচা পড়ে রড বের হয়ে আছে। ঝুঁকিপূর্ণ এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে।
সরেজমিনে জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার হোপপীর হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, পরিত্যক্ত ভবনের এক পাশে অফিস ঘর। আরেক পাশেই চলছে শিশুদের পাঠদান। অথচ ভবনটির অবস্থা এতটাই নাজুক যে, পলেস্তারা খসে রড বের হয়ে গেছে। ভবনটির দরজা, জানালা ভাঙা।
ঝুঁকির কথা বলতেই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিছুর রহমান বলেন, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় কর্তৃপক্ষ এটিকে অনেক আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। তবে কক্ষ সংকটের কারণে পরিত্যক্ত ভবনের একটিতে প্রাক-প্রাথমিকের পাঠদান এবং অন্যটিতে অফিস করা হয়েছে। আর টিন দিয়ে ঘর নির্মাণ করে অন্য শ্রেণির পাঠদান চলছে। জরাজীর্ণ টিনের ছাউনি, মাটির স্যাঁতস্যাঁতে মেঝে, রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে পাঠদান চলছে জয়পুরহাট পৌর সদরের চক গোপাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৭১ জন হলেও শিক্ষকদের দাবি বিদ্যালয় ভবনের জরাজীর্ণ অবস্থার কারণে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে চায় না।
আক্কেলপুরের দুলালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৮৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত। এ বিদ্যালয়ে টিন সেডের একটি পাকা ও জরাজীর্ণ মাটির একটি ভবনে চলছে পাঠদান। মাটির ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। দেয়াল ফেটে গেছে। কোনো কোনো জায়গায় গর্ত হয়ে গেছে। দরজা জানালার অবস্থাও খুব খারাপ। বর্ষার সময় টিন দিয়ে পানি পড়ে। আবার ঝড় বৃষ্টি শুরু হলে পড়ানো বন্ধ হয়ে যায়।
বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলে, বৃষ্টি হলে তাদের আর ক্লাস হয় না। বিদ্যালয়ের সবগুলো কক্ষেই পানি পড়ে। আকাশে মেঘ দেখলেই বাবা-মা স্কুলে আসতে দিতে চান না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহেনা বেগম বলেন, অনেক পুরনো এই বিদ্যালয়ের নতুন ভবন হবে হবে করে হচ্ছে না। বেশ কিছুদিন আগে নতুন ভবনের জন্য মাটি পরীক্ষাও করা হয়েছে। কিন্তু ভবন না হওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাটির ঘরে তারা পাঠদান করতে বাধ্য হচ্ছেন।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার হালট্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি ভবনের একটি ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যটিতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তিনটি কক্ষে পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষকরা। এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৪০ জন। সাতটি পদে কর্মরত শিক্ষক আছেন ছয়জন।
প্রধান শিক্ষক নাদিরা মুশফিকা বানু জানান, স্কুল দেখতে সুন্দর না হলে শিশুরা আসতে চায় না। তাই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে রঙ করা হয়েছে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে নতুন ভবন। কিন্তু ছাদ চুয়ে পানি পড়ে। বৃষ্টি হলেই শিক্ষার্থী বই নিয়ে ক্লাসে থাকতে পারে না। বই খাতা ভিজে যায়।
এ প্রসঙ্গে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল কবির বলেন, স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগের সহযোগিতায় জেলার ৭২টি বিদ্যালয়কে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অবস্থাভেদে সংস্কার বা নতুন করে ভবন নির্মাণের সুপারিশ পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি খুব দ্রুত ব্যবস্থা হয়ে যাবে। সম্পাদনা : আহসান/রাশিদ