২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বিকাল ৩:৩৩
শিরোনাম:

মামলা দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও সাজা হয় না পোস্টমাস্টার জেনারেলের!

নিজস্ব প্রতিবেদক : কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য, বিভাগীয় মামলা ও অধীনস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার অভিযোগ উঠেছে পোষ্টমাস্টার জেনারেল (দক্ষিণাঞ্চল) শামসুল আলমের বিরুদ্ধে। বিপুল পরিমাণ উৎকোচ নিয়ে লোক নিয়োগ, বদলি, বে আইনিভাবে সরকারি সম্পত্তি হস্তান্তর, বিক্রি ও নিজের দোষ অধীনস্তদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার কারণে অতিষ্ঠ হয়ে অধীনস্ত কর্মকর্তা আত্মহত্যা করেছেন বলেও সহকর্মীদের কাছে জনশ্রæতি রয়েছে। তারা বলছেন, শামসুল আলমের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
ডাক বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পৃথকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হলেও অদৃশ্য শক্তির কারণে নামমাত্র সাজা পেয়ে উল্টো পদোন্নতির তালিকায় রয়েছেন। যা নিয়ে খোদ ডাক বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভেতরেই ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে বিচার দাবি করে গত মাসে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি আবেদন করেছেন ভুক্তভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ওই আবেদনে অন্যদের পক্ষে আটজন স্বাক্ষর করেছেন।

ওই আবেদনে বলা হয়, শামসুল আলম যশোর ডিপিএমজি থাকাকালে মনিরামপুর কেশবপুর উপজেলায় তার মদদপুষ্ট আব্দুল মান্নান আকুঞ্জিকে দিয়ে এলএসজি উপজেলা পোস্টমাস্টারের দায়িত্ব পালন করান। সেখানে এলাকার বিধবা, অসহায় নারীদের রক্ষিত ২০ লাখ টাকা বিভিন্ন কারসাজি করে আত্মসাৎ করেন। যার ১০ লাখ টাকা নেন শামসুল আলম। অথচ টাকা না পেয়ে অসহায় নারীরা আজও দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এ ব্যাপারে একাধিকবার অভিযোগ উঠায় শামসুল আলম নিজে বাঁচতে আব্দুল মান্নান আকুঞ্জিকে মানসিক চাপ দিতে থাকেন। যার কারণে আব্দুল মান্নান জেলখানায় আত্মহত্যা করেন। একই সময়ে ব্যাপক ঘুষ নিয়ে মাগুরা পুরাতন প্রধান ডাকঘরের ৫৩ শতাংশের বেশি জমি চুক্তির মাধ্যমে সিভিল সার্জন অফিসকে হস্তান্তর করেন। যা সম্পূর্ণ বে আইনি। কারণ সরকারি জমি কোন সরকারি কর্মকর্তা দান, বিক্রি অথবা বে আইনিভাবে হস্তান্তর করতে পারবেন না। এ ব্যাপারে একটি খসড়া অভিযোগনামা উঠলেও তা ডাক বিভাগে পড়ে রয়েছে। এছাড়া নড়াইল জেলার লোহাগাড়া উপজেলার অতি মূল্যবান পাঁচ শতক জায়গা মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে বিক্রি করে দেন। বর্তমানে এই দুটি জমি নিয়েই তার বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে।

খুলনায় যোগদানের পরই দুই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে। যা ডাক অধিদপ্তরের তদন্তেও প্রমাণিত হয়েছে। এ ব্যাপারে দুদক তদন্ত করে শামসুল আলমকে দায়ী করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে। একই সঙ্গে সরকারি ক্ষতির একটি অংশ কেন শামসুল আলমের কাছ থেকে আদায় করা হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়। সার্বিক প্রতিবেদনের পর ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ শামসুল আলমকে চূড়ান্ত বরখাস্তের সুপারিশ করা হয়। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির কারণে তার সাজা হিসেবে এক বছরের বেতন বৃদ্ধি বন্ধ করা হয়। অথচ এই মামলায় আট কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। নিঃস্ব হয়ে যায় ২০টি পরিবার। অভিযোগ রয়েছে, শামসুল আলম প্রায় ১৮ কোটি টাকার সরকারি সম্পদ আত্মসাতের সঙ্গে সরাসরি জড়িত রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক তদন্ত, বিভাগীয় মামলা, নানা অভিযোগ থাকলেও নামমাত্র সাজা ভোগ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, শামসুল আলমের এসব অনিয়মের সাথে জড়িত রয়েছে রংপুরের জিএম তরুণ কান্তি সিকদার। এ ব্যাপারে জানতে শামসুল আলমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করে লাইন কেটে দেন।