২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ৮:০৯
শিরোনাম:

রাজধানী ঢাকায় রাস্তায় চলবে না নন এসি বাস

রাজধানী ঢাকায় নতুন করে আর সাধারণ বাস-মিনিবাস (নন-এসি) চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে না। অনুমোদিত বাসগুলোর ব্যাপারেও নতুন চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। এসব বাসের একটা অংশ রুট পারমিটের অনুমোদন পেয়েও রাস্তায় নামেনি। আপাতত এসি বাস সার্ভিস চালুর অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া বিশেষ বিবেচনায় বিদ্যমান রুট পারমিটবিহীন ৭১টি রুটে ১৭৩৪টি গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

রাজধানীর গণপরিবহনের সেবা দিতে চালু হবে বহুল প্রচারিত বাস রুট ফ্রাঞ্চাইজি পদ্ধতি। এর আওতায় সুনির্দিষ্ট কয়েকটি কোম্পানির অধীনে চলবে এ শহরের বাস সার্ভিস। সেখানে সদ্য অনুমোদনপ্রাপ্ত এসি বাস সার্ভিস যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। এ জন্য নতুন অনুমোদনপ্রাপ্ত বাস কোম্পানির কাছে চিঠি দিচ্ছে বিআরটিএ।

এদিকে বর্তমানে এসি বাস চলছে সরকারি নীতিমালা ছাড়াই। নেই তাদের সরকারনির্ধারিত ভাড়ার হার। ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় নিয়ে বাকবিত-া হচ্ছে। সরকারের ব্যয়-বিশ্লেষণ কমিটি এখনো এসি বাসের ভাড়া নির্ধারণ করতে পারেনি। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গাড়ির দাম ও মানের বিবেচনায় এসি বাসের ক্যাটাগরি ভিন্ন। এক গাড়ি দাম ৭০ লাখ তো আরেকটির

দাম এক কোটি টাকা। ভাড়া নির্ধারণে ২১টি বিষয় বিশ্লেষণ করার কথা। এর মধ্যে গাড়ির দাম, যন্ত্রাংশ ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ অন্যতম। তাই ভাড়া নির্ধারণ নিয়ে কার্যকর সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি সরকারের ব্যয়-বিশ্লেষণ কমিটি।

এ বিষয়ে বিআরটিএর চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান বলেন, নন-এসি ও এসি বাসের ভাড়া নির্ধারণে পৃথকভাবে কাজ চলছে। সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে এবং আরও হবে।

নন-এসি বাসের রুট পারমিট বন্ধের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নতুন করে ঢাকার রাস্তায় নন-এসি বাসের রুট পারমিট দেওয়া হবে না। তবে বিদ্যমান বাস সার্ভিস চলবে। এসি বাসও নামবে। আর ঢাকায় বাস রুট নেটওয়ার্ক হবে। রুটভিত্তিক কোম্পানিতে চলবে বাস।

জানা গেছে, রাজধানী ঢাকায় কী পরিমাণ গাড়ি কোন রুটে চলবে তা নির্ধারণ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটি (আরটিসি)। এ কমিটির সভাপতি ডিএমপি কমিশনার ও সদস্য সচিব বিআরটিএর ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক। আরটিসির সর্বশেষ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছেÑ ঢাকা মহানগরীতে নন-এসি বাস রুটের পারমিট প্রদান বন্ধ থাকবে। বর্তমানে ৩৬৬টি রুটে ৬৩৮৯টি বাস ও ২৬২৮টি মিনিবাস চলাচল করছে। তবে অনুমতি সত্ত্বেও সব বাস রাস্তায় চলে না। যানজটের কারণে ট্রিপের ঘাটতি এর বড় কারণ। এ ছাড়া চলাচলের জন্য তিন ধাপে চাঁদা দিতে হয়। অনেক কোম্পানি তাদের বাসের রুট পারমিটের মেয়াদ আবেদন করে বাড়িয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে নতুন করে নন-এসি বাসের অনুমোদন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সর্বশেষ আরটিসির বৈঠকে এ সংক্রান্ত অনেক প্রস্তাব নাকচ করা হয়।

সেখানে বলা হয়েছে, ঢাকা শহরে প্রাইভেট গাড়ির (প্রাইভেট কার/রিকশা) ব্যবহার কমানো এবং যাত্রীসেবার মান বাড়াতে এসি বাসের রুট পারমিট দেওয়া যৌক্তিক। তাই ঢাকা মেট্রো আরটিসি উপকমিটি কর্তৃক ৬৭টি এসি বাস কোম্পানির আবেদন যাচাই-বাছাই করে ২২টি কোম্পানির ৮৬০টি এসি বাসের রুট পারমিট দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুটি রুট আন্তঃজেলা হওয়ায় ঢাকা মহানগরীতে চলাচলের অনাপত্তি পেয়েছে। অর্থাৎ রাজধানীতে ২১টি কোম্পানির অধীনে ৮২০টি নতুন এসি বাসের রুট পারমিট দিয়েছে আরটিসি। এসব বাস পরবর্তী সময়ে একীভূত হবে কোম্পানিভিত্তিক বিশেষ বাস নেটওয়ার্কের অধীনে। বাস নেটওয়ার্ক বাস্তবায়িত হলে এসব এসি বাস কোম্পানির আওতায় চলাচলের সুযোগ পাবে বলে আরটিসির সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সূত্রমতে, বিদ্যমান সাধারণ বাস সার্ভিসের ব্যাপারে আরটিসির সর্বশেষ সভায় বলা হয়, নতুন করে আর গাড়ি নামতে দেওয়া হবে না। ঢাকা শহরের যাতায়াত ব্যবস্থা সচল রাখার স্বার্থে রুট পারমিটবিহীন গাড়ির রুট পারমিট পেতে আবেদন করে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। সমিতির পক্ষ থেকে গাড়ির তালিকাসহ আবেদন পাঠায় আরটিসির কাছে। ওই তালিকায় ৮৩ রুটে ২৯৬৫টি গাড়ির রুট পারমিট না থাকার কথা জানা যায়। পরিবহন নেতারা এসব গাড়ির পারমিট পেতে অনুরোধ করে। পরে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ ও মেট্রো আরটিসির উপকমিটি গাড়িগুলোর কাগজ যাচাই-বাছাই করে ৭১টি রুটে ১৬৯৯টি গাড়ির রুট পারমিটের সুপারিশ করে। এসব গাড়ি ২০১৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন করা। পরবর্তী সময়ে পরিস্থান পরিবহন প্রাইভেট লিমিটেডের (রুট নম্বর এ-৩৬৬) ১০৭টি গাড়ির রুট পারমিটের আবেদন করে। এর মধ্যে ৩৫টি গাড়ির পারমিটের জন্য সুপারিশ করে আরটিসি। সব মিলিয়ে ১৭৩৪ গাড়ির রুট পারমিট প্রদানের সিদ্ধান্ত আসে। এসব রুট পারমিট দিতে যদি সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সিলিং (গাড়ি চলাচলের নির্ধারিত সংখ্যা) বাড়াতে হয় তা-ও করতে বলা হয়েছে।

রুট পারমিটে চাঁদা বড় সমস্যা : বিআরটিএ থেকে বাস নামানোর অনুমতির আগেই মোটা অঙ্কের চাঁদা দিয়ে মালিক সমিতির সদস্য হতে হয়। পরিবহন খাতে তিন পদ্ধতিতে চাঁদা তোলা হয়। এগুলো হচ্ছে ১. দৈনিক মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নামে চাঁদা, ২. বাস-মিনিবাস নির্দিষ্ট পথে নামানোর জন্য মালিক সমিতির চাঁদা এবং ৩. রাজধানী ও এর আশপাশে কোম্পানির অধীনে বাস চালাতে দৈনিক ওয়েবিল বা গেট পাস (জিপি) চাঁদা। ঢাকা ও এর আশপাশে প্রায় সব বাসই চলে নির্দিষ্ট কোম্পানির অধীনে। সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতারা প্রথমে একটি কোম্পানি খোলেন। এর মধ্যে বিভিন্ন মালিক বাস চালাতে দেন। বিনিময়ে বাসপ্রতি ৭০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। প্রতিদিন চাঁদা ওঠে প্রায় এক কোটি টাকা। ঢাকায় বাস চলে প্রায় আট হাজার। ঢাকাসহ সারাদেশে বাস নামানোর আগেই মালিক সমিতির সদস্যপদ নিতে হয়। এর জন্য ২ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়।

দুর্ঘটনা ঘটলেই রেজিস্ট্রেশন-রুট পারমিট বাতিল : গত সপ্তাহে বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তা কৃষ্ণা রায় দুর্ঘটনাকবলিত হন ট্রাস্ট বাসের চাপায়। এ ঘটনার পর ওই গাড়ির রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করেছে বিআরটিএ। এর আগে গত বছর রমিজউদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় জাবালে নূর পরিবহনের গাড়ির রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়। এ ছাড়া দুর্ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবরার নিহতের ঘটনায় সুপ্রভাত পরিবহনের বাসের নিবন্ধন বাতিল করে বিআরটিএ। রুট পারমিটের অনুমোদন দেয় আরটিসি। তাই রুট পারমিটের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হয় এ কমিটিকেই। আলোচিত দুটি দুর্ঘটনার জেরে আরটিসির সর্বশেষ সভায় এ দুটি পরিবহনের সব বাসের রুট পারমিট এবং সিলিং বাতিল করা হয়েছে। সুপ্রভাতের গাড়ির রুট ছিল উত্তরা থেকে সদরঘাট; আর জাবালে নূর চলত বসিলা থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত। এ নিয়ে পরিবহনসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুর্ঘটনা ঘটলেই কেবল কাগজপত্র পর্যালোচনা বা তদন্ত কমিটি গঠন নয়, সব সময় যাচাই-বাছাই করলে অনুমোদিত অনেক গাড়ির কাগজ সঠিক মিলবে না। তবে যাচাই-বাছাই অব্যাহত রাখলে এসব কোম্পানি শৃঙ্খলার মধ্যে ফিরে আসতে বাধ্য।