রাজধানীর মিরপুর থেকে ওয়ালিদ হোসেন রাসেল (৩১) নামে এক ভূয়া ম্যাজিস্ট্রেটকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪। প্রেমিকার সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি মোবাইলফোনে ধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগে বুধবার রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব-৪ এর সহকারী পরিচালক এএসপি মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম সজল জানান, ভুক্তভোগী নারীর সুনির্দিষ্ট অভিযোগে রাসেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নারীর অভিযোগ, তিনি একটি অভিজাত পরিবারের সন্তান। তার বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। ইডেন মহিলা কলেজে অধ্যায়ন কালে বিশেষ প্রয়োজনে বরিশাল শহরে অবস্থান করে লেখাপড়া করছিলেন। কোচিং করার সুবাদে রাসেলের সঙ্গে পরিচয় এবং ধীরে ধীরে বন্ধুত্বের সুত্রপাত হয়। এরপর ওই নারী ঢাকায় চলে আসেন। লেখাপড়া শেষ এবং নিজের ভবিষ্যতের চিন্তায় বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহন করতে থাকেন। এরমধ্যে আসামী রাসেলও ঢাকায় আসে এবং বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়। দীর্ঘদিন পরে আবার মোবাইল ফোনে ওই নারী সঙ্গে কথাবার্তা শুরু হয়। এর ৩-৪ বছর পরে হঠাৎ একদিন রাসেল নারীকে ফোন দিয়ে জানায়, সে ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রশাসন ক্যাডারে সহকারী কমিশনার হিসেবে যোগদান করেছেন। ওই নারীকে প্রায়ই ফোনে ইমোশনাল কথাবার্তা সহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে নিয়ে যেত রাসেল। একপর্যায়ে রাসেল নারীকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। প্রথমে অমত পোষণ করলেও সার্বিক বিবেচনায় প্রস্তাবে রাজি হয় ওই নারী। আবেগী কথার ফাঁদে পা দিয়ে প্রেমে সাড়া দেয় এবং তারা শিগগির-ই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। স্বাভাবিকভাবে প্রেমিক প্রেমিকা হিসেবে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি সহ তাদের সম্পর্ক গভীর হতে থাকে। রাসেলকে বিশ্বাস করে হবু স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে ভুক্তভোগী নারী। একপর্যায়ে রাসেল বিয়ের প্রলোভনে নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু ছবি মোবাইল ফোনে ধারন করে।
এসপি সজল আরো জানান, একপর্যায়ে রাসেলের আচরনে সন্দেহ হলে ভুক্তভোগী নারী রাসেলের কাছের বিভিন্ন লোকের সঙ্গে ৩৬ তম বিসিএর খোঁজ নেন। তিনি ৩৬ তম বিসিএসএর নিয়োগ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন সংগ্রহ করে দেখেন রাসেল তার সঙ্গে মিথ্যে বলেছে। রাসেল কোনো বিসিএস কর্মকর্তা না। যা জিজ্ঞাসা করলে সত্যতা স্বীকার করে রাসেল। পরে রাগে-ক্ষোভে ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে রাসেলের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন ওই নারী। বিপর্যস্ত অবস্থা কাটার পর পারিবারিকভাবে ভুক্তভোগী নারীর বিয়ে হয়। বিষয়টি জানতে পেরে রাসেল তাকে আগের মত শারীরিক সম্পর্ক রাখতে চাপ দেয়। তিনি রাজি না হলে তার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ধারণ করা ছবি ইন্টারনেটে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয় রাসেল। একপর্যায়ে ছবি ফেরত দেয়ার কথা বলে রাসেল ওই নারী ও তার পরিবারের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। কোনো কিছুতেই রাজি না হওয়ায় রাসেল ওই নারীর ভাইয়ের নামে খোলা একটি ফেসবুক আইডিতে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ধারণ করা ছবি আপলোড করে। বিষয়টি জানার পর ভুক্তভোগী নারী ও তার পরিবার র্যাবের কাছে লিখিত অভিযাগ দেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে রাসেলকে গ্রেফতারকরা হয়। এ সময় রাসেলের কম্পিউটার ও পেনড্রাইভ থেকে ওই নারীর সঙ্গে তার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ধারণ করা ছবি উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
র্যাব কর্মকর্তা সাজেদুল জানান, জব্দকৃত ল্যাপটপ কম্পিউটার, এক্সটারনাল হার্ডডিস্ক ও পেনড্রাইভ এবং রাসেলের গুগল ড্রাইভ ফরেনসিক পরীক্ষা করে দেখা যায় আসামি ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে আরো ৪/৫ জন মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাদের সঙ্গে অনৈতিক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে মোবাইল ফোনে ধারণ করেছে। একই পন্থায় তাদের কাছেও টাকা দাবিসহ বিভিন্নভাবে ব্ল্যাকমেইল করে আসছিল।