রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক ও সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়ার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা ও স্বর্ণ জব্দ করেছে র্যাব। তারা দুজনই ক্যাসিনোর লাভের টাকা বাসায় নিয়ে রাখতেন বলে জানায় র্যাব।
র্যাব জানায়, টাকা রাখলে বেশি জায়গা লাগে তাই তারা স্বর্ণ কিনে সেগুলো ভল্টে রাখতেন। এছাড়া তাদের বাসা থেকে পাঁচটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফিউল্লাহ বুলবুল এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল, কয়েকদিন আগে এখানকার ইংলিশ রোডে পাঁচটি ভল্ট বানানোর অর্ডার দেন এই দুইজন। সেই সূত্রে জানতে পারি এই বাসায় তিনটা ভল্ট আছে।
এরপর সোমবার মধ্যরাতের পর এই বাড়িতে আমরা অবস্থান নেই। আজ (মঙ্গলবার) অভিযানে তিনটা ভল্ট খোলা হয়। এখান থেকে নগদ এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা ও আট কেজি (৭২০ ভরি) স্বর্ণ পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে আরও তথ্য ছিল, এনামুল হক ওরফে এনু ও রূপন ভূঁইয়া ক্যাসিনোর শেয়ারহোল্ডার। ক্যাসিনোর লাভের টাকা তারা বাসায় নিয়ে রাখতেন। নগদ টাকা রাখলে অনেক জায়গার প্রয়োজন হয় তাই তারা টাকা দিয়ে স্বর্ণ কিনে রাখতেন।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক আরও বলেন, এই বাড়ি থেকে পাঁচটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। অস্ত্রগুলো দিয়ে তারা স্থানীয় লোকদের ভয়ভীতি দেখাতেন।
তিনি বলেন, এ রকম আরও ১৫টি বাড়ির তথ্য আমরা পেয়েছি। নারিন্দায় আরেকটি বাড়িতে ভল্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেখানে অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
উল্লেখ্য, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ক্যাসিনোতে অভিযান চালাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার ফু-ওয়াং, পিয়াসী ও ড্রাগন বারে অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে অবৈধ কিছু পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অথচ এর আগে পরিচালিত অভিযানে অবৈধ মাদক, ক্যাসিনো সরঞ্জাম, এমনকি অবৈধ অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) চারটি ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। ক্লাবগুলো হলো- আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। অভিযানে চারটি ক্লাবেই ক্যাসিনোর সরঞ্জাম পেয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর (বুধবার) অবৈধ জুয়া ও ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে র্যাবের হাতে আটক হন ঢাকা দক্ষিণ মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। পরে অস্ত্র ও মাদকের পৃথক দুই মামলায় তাকে সাতদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
গত শুক্রবার রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমকে আটক করে র্যাব। এ সময় বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদক দ্রব্য ছাড়াও নগদ এক কোটি ৮০ লাখ টাকা, ১৬৫ কোটি টাকার ওপরে এফডিআর (স্থায়ী আমানত) করার নথি জব্দ করা হয়।
এছাড়া শুক্রবার রাতে রাজধানীর কলাবাগান ক্রীড়াচক্র ক্লাবে অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় ক্লাবটির সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজের কাছে সাত প্যাকেট গন্ধহীন হলুদ রঙের ইয়াবাসহ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র থাকায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। জব্দ করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ক্যাসিনোতে খেলার কয়েন, স্কোরবোর্ড ও ৫৭২ প্যাকেট তাস। র্যাবের ধারণা, ক্লাবটি ক্যাসিনো খেলা হত।
একই রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি ক্লাবেও অভিযান চালানো হয়। তবে ক্লাবটি বন্ধ থাকায় সেখানে থাকা বারটি সিলগালা করে দেন র্যাব সদস্যরা।