বৈরী আবহাওয়া, থেমে থেমে হচ্ছে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি। টানা চারদিন ধরে রংপুরের আকাশে প্রকৃতির এমন আচরণ। এতেও থেমে নেই এরশাদের দুর্গখ্যাত রংপুর-৩ আসনে উপ-নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা। বরং প্রচারণার শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া ছয় জনের মধ্যে হেভিওয়েট তিন প্রার্থীই মাঠে সরব। বাকি তিনজন রয়েছেন অনেকটাই নীরব। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে আলোচনায় থাকা এরশাদ পরিবারের দুই প্রার্থীসহ বিএনপি প্রার্থী ছুটছেন ভোটারদের কাছে। শোনাচ্ছেন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। হাসিমুখে হাত ধরে বুকে টেনে চাইছেন ভোট। আহ্বান করছেন পিছিয়ে পড়া রংপুরকে এগিয়ে নিতে ৫ অক্টোবর ভোটকেন্দ্র যেতে।
দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে এরশাদের জাতীয় পার্টির দখলে থাকা এই আসনে এবারই প্রথম নৌকার প্রার্থী দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু জাতীয় পার্টির আবদারে তাকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর প্রতিদ্বন্দ্বী ছয় প্রার্থীর মধ্যে এখন আলোচনায় তিন জন। নগর-সদর জুড়ে লাঙ্গল-ধানের শীষ আর মোটরগাড়ির সাঁটানো ব্যানার পোস্টারই প্রমাণ করছে অন্য তিন প্রার্থীরা ভোটের অঙ্কে থাকবে লাপাত্তা। এদিকে, বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) সকালের পর বন্ধ হবে প্রচারণা। শেষ মুহূর্তে এসে হেভিওয়েট তিন প্রার্থী একে অপরের দুর্বলতাকে পুঁজি করে নিজের সবলতা দিয়ে ভোটারদের মন জয় করতে চাইছেন। কেউ কেউ তুলে ধরছেন আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগও।
ভোটগ্রহণের দিন ঘনিয়ে আসাতে স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত দলের বঞ্চিত নেতা-কর্মীদের পুষে রাখা ক্ষোভে জটিল হচ্ছে হিসেব-নিকেশ। যদিও এরশাদপুত্র সাদ আর তার আপন চাচাতো ভাই আসিফ দ’জনই জয়ের বিষয়ে ভীষণ আশাবাদী। অন্যদিকে ইভিএমে চুরির সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি বিএনপি প্রার্থীর।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে টিপটিপ বৃষ্টিতে গণসংযোগে বের হন বিএনপি জোটের প্রার্থী রিটা।
এ সময় তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষতো ধানের শীষের পক্ষে আছেন। তারাতো ভোটের মাধ্যমে পরিবর্তন চায়। কিন্তু অতীত নির্বাচনের অভিজ্ঞতার কারণে কেউই ইভিএমে আস্থা রাখতে পারছেন না।’
এদিকে মোটরগাড়ি (কার) প্রতীকের প্রার্থী শাহরিয়ার আসিফ কে বলেন, ‘এখনো লাঙ্গলের পোস্টারে মৃত ব্যক্তির ছবি রয়েছে। একজনের জায়গাতে চার-পাঁচ জনের ছবি। এসব ছবি ব্যবহার করে লাভ হবে না। সাধারণ ভোটাররা এরশাদ পরিবারের যোগ্য প্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রার্থী হিসেবে আমাকে সমর্থন দিচ্ছেন। আমি সবখানে ভালো সাড়া পাচ্ছি। ভোটের দিন পর্যন্ত যদি এরকম পরিস্থিতি থাকে এবং পছন্দের প্রার্থীকে ভোটদানে বাধা দেওয়া না হয় তাহলে আমি জিতব ইনশা আল্লাহ।’
অন্যদিকে আচরণবিধি লঙ্ঘন নিয়ে মাথা ব্যথা নেই জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাদ এরশাদের। তিনি সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় আর ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন নির্বাচিত হলে তার বাবা এরশাদের অসমাপ্ত কাজ শেষ করে রংপুরকে রঙে রঙে সাজাবেন।
উল্লেখ্য, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য রংপুর-৩ আসনে ৫ অক্টোবর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই আসনে নারী-পুরুষ মিলে ভোটার প্রায় সাড়ে চার লাখ। গত সংসদ নির্বাচনের মতো এবারও ১৭৫টি কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ভোটাররা।