৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ৬:১৮
শিরোনাম:

‘স্বৈরাচারের সাথি’ রাঙ্গাকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন কৃষিমন্ত্রী

নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রতীক শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাকে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক।

আওয়ামী লীগের এই সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বলেন, ‘স্বৈরাচারের (এরশাদ) সঙ্গে ছিলেন বলেই রাঙ্গা শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে এ বাজে মন্তব্য করতে পেরেছেন। রাঙ্গার উচিত দ্রুত জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া।’

‘শহীদ নূর হোসেনের নামের সঙ্গে দেশবাসীর আবেগ-অনুভূতি জড়িত। গণতন্ত্রের জন্য নূর হোসনে জীবন দিয়েছেন,’ যোগ করেন কৃষিমন্ত্রী।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে কৃষি মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। মূলত ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর প্রভাবে কৃষির ক্ষতিবিষয়ক প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য দেওয়ার জন্যই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তখন সাংবাদিকরা বিষয়টির অবতারণা করলে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

এ সময় জাতীয় পার্টির সঙ্গে নিজেদের জোটের কথা স্মরণ করেও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক আজকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমাদের জোট সাময়িক। কৌশলগত কারণে এই জোট করা হয়েছে। তাই বলে আমরা রাঙ্গার এ গর্হিত বক্তব্যকে সমর্থন করব, বিষয়টি এমন নয়। আমরা এই বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’

সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর বিরোধী দলগুলোর হরতাল চলাকালে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন পরিবহন শ্রমিক নূর হোসেন। তখন তাঁর বুকে-পিঠে লেখা ছিল ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক—গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। নূর হোসেন তখন থেকেই সারা দেশে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের ‘পোস্টার’ হয়ে ওঠেন। রাজধানীর গুলিস্তানের যে স্থানটিতে তিনি নিহত হন, সেটি ‘শহীদ নূর হোসেন চত্বর’ নামেই পরিচিত।

প্রতিবছর ১০ নভেম্বর আওয়ামী লীগ, বিএনপি, সিপিবিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শহীদ নূর হোসেনের প্রতি এখানেই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে দিবসটি স্মরণ করে। অনেকে আলোচনা সভারও আয়োজন করে।

যদিও এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি নূর হোসেনকে হত্যার দিনটিকে ‘গণতন্ত্র দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে। এবার সেই দিনটিতে এক আলোচনা সভায় মসিউর রহমান রাঙ্গা শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে এই বিতর্কিত মন্তব্য করেন।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ‘মাদকাসক্ত’ নূর হোসেনকে পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন রাঙ্গা। তিনি বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কাকে হত্যা করলেন। নূর হোসেনকে? নূর হোসেন কে? একটা অ্যাডিকটেড ছেলে। একটা ইয়াবাখোর, ফেনসিডিলখোর।’

এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিপুল সমালোচনা শুরু হয়। গতকাল সোমবার রাঙ্গাকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শহীদ নূর হোসেনের মা মরিয়ম বিবিও। রাঙ্গা বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন সেই সময়ের ছাত্রনেতারাও। যদিও কালের পরিক্রমায় নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম দল আওয়ামী লীগ এখন জাতীয় পার্টির মিত্র। দুটি দলই মহাজোটের শরিক।

গত দশম জাতীয় সংসদে সামরিক শাসক এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে মন্ত্রিসভায়ও ছিল, পাশাপাশি বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করেছে। এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টি আর সরকারে স্থান পায়নি, তাদের বিরোধী দলেই বসতে হয়েছে। সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করছেন মসিউর রহমান রাঙ্গা।