৭ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, দুপুর ১২:২৩
শিরোনাম:

বিএনপির এমপিদের পদত্যাগ চাইলেন গয়েশ্বর

সংসদে থেকে সরকারের পতন চাওয়া জনগণ পছন্দ করবে না এমন মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় তার দলের এমপিদের সংসদ থেকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন।

সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে নারী শিশু অধিকার ফোরাম আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এই আহ্বান জানান তিনি। ‘আর কতকাল বন্দি থাকবে খালেদা জিয়া-নির্দয়ভাবে কত মরবে রুবাইয়াত সারমীন রুম্পার’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ‘২৯ তারিখ রাতের অবৈধ ফসল হচ্ছে আজকের পার্লামেন্ট। রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে যদি আমরা পার্লামেন্টে যোগ দিয়ে থাকি তাহলে আজকে আমাদের দায়িত্ব যারা আমাদের প্রতিনিধি হিসেবে পার্লামেন্টে আছেন তাদের সর্বপ্রথম পার্লামেন্টে পদত্যাগ করে জনগণের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে নামতে হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আমরা পার্লামেন্টে থাকবো আবার সরকারের পতন চাইবো এই শব্দটা কিন্তু জনগণ পছন্দ করবে না। অর্থাৎ আমরা যেটা চাই সেটা জনগণের কাছে স্পষ্ট করতে হবে যে আসলেই আমরা সরকারের পতন চাই। তখন জনগণ রাস্তায় রক্ত দেওয়ার জন্য আপনার পাশে দাঁড়াবে। যতক্ষণ আমাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য জনগণের কাছে স্পষ্ট করে বুঝাতে না পারবো ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো আন্দোলন দানা বেঁধে উঠবে না।’

কারাবন্দি খালেদা জিয়ার জামিন প্রসঙ্গে গয়েশ্বর বলেন, ‘এখন খালেদা জিয়ার জামিন হবে কি হবে না তা আদালতের ওপর নির্ভর করে না। এসকে সিনহার যে নির্মম বিদায় তাতে বর্তমানে যারা বিচারপতি আছেন তারাও সাবধান, তাদের পরিণতি এরকম হোক সেটাতো তারা চাইবেন না। এসকে সিনহার পরে বিচার বিভাগের যে অবস্থা তাতে তারা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করতে পারছে না।’

বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। কারণ সেটা নির্ধারণ করে শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা অনুমতি দেবে কিনা সেটা নির্ভর করে আরেকটি দেশের ওপর। কোন দেশে আমরা বসবাস করি?  যেই দেশে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, যার স্ত্রী সন্তানরা পাকিস্তান কারাগারে আটক ছিলেন, সেই স্বাধীনতার প্রতীক সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জনগণের নেত্রী আজকে কারাগারে। আর তাঁর মুক্তি হবে কিনা তা নির্ভর করে অন্য একটি দেশের ওপর। তারপরও কি এই বদ্ধ ঘরের মধ্যে শুধুমাত্র কথার ফুলঝুরি ছেড়ে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করছি সেটা? সে কারণেই আমাদের বুঝতে হবে আমরা জেলখানায় আছি। আমাদের জেলখানায় যাওয়ার ভয় পেয়ে লাভ নাই। আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশ। আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে দেশের নির্যাতিত নারীরা। আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে নির্যাতিত মানুষরা। তাই এই সরকারের পতন ঘটিয়ে আমাদের দেশকে মুক্ত করতে হবে।’

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র এটা ভারত মনে করে না বলে আলোচনা সভায় মন্তব্য করেন গয়েশ্বর। তিনি বলেন, ‘যদি তারা সেটা মনে করত তাহলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পশ্চিমবঙ্গে গেছেন কিন্তু তাকে প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা দেয় নাই কেন? অথবা সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর কোনও প্রতিবাদ হয় নাই কেন? কেন তিনি অনুষ্ঠান বর্জন করে দেশে ফিরে আসলেন না? বুঝতে হবে যারা ৭১-এ আমাদেরকে সাহায্য করেছে আমরা মনে করি তারা আমাদেরকে সাহায্য করেছে। কিন্তু ৪৭ বছর পরে তারা (ভারত) মনে করে তারা সেদিন বিনিয়োগ করেছে। আমাদের দেশে তারা যে বিনিয়োগ করেছে তারা আমাদের কাছ থেকে নিতে চায়। তাদের সাথে আমাদের বোঝাপড়া করা দরকার। আপনাদের কাছে আমাদের ঋণের পরিমাণ কত? এই পরিমাণ নির্ধারণ হলে প্রয়োজনে আমরা ১৬ কোটি মানুষ রক্ত বিক্রি করে সে ঋণ শোধ করবো। তবুও এই দেশকে কারো দাসত্বের অধীনে থাকতে দেবো না।’

নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সভাপতি বেগম সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আওয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সাংগঠনিক আইনজীবী আবদুস সালাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সদস্য সচিব নিপুণ রায়।