১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ৯:২৮
শিরোনাম:

ডাকসুর সিসিটিভি উদ্ধারে পুলিশের সাহায্য চেয়েছেন উপাচার্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনে সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হকের কক্ষে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার সিসিটিভি উদ্ধারে পুলিশের সাহায্য চেয়েছেন উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। আজ মঙ্গলবার বিকেলে নিজ কার্যালয় সংলগ্ন লাউঞ্জে এ কথা জানান তিনি।

এর আগে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানকে স্মারকলিপি দেন নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

ক্যাম্পাসে সব সংগঠনের সহাবস্থানের নিশ্চয়তা ও ছাত্রলীগের বিতর্কিত ভূমিকার বিচার নিয়ে উপাচার্যকে প্রশ্ন করেন নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। এসব প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর দিতে পারেননি আখতারুজ্জামান। এ সময় ডাকসু ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে পুলিশের সাহায্য চেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।’

গত রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনে সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হকের কক্ষে হামলা ও ভাঙচুর চালান ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতাকর্মীরা। এতে নুরুলসহ অন্তত ২৪ জন আহত হন।

উপাচার্যকে স্মরকলিপি প্রদানের পর তা পড়ে শোনান লেখক ও অ্যাকটিভিস্ট রাখাল রাহা। এতে বলা হয়, ‘আক্রান্ত ছাত্ররা আপনার প্রশাসনের সাহায্য প্রার্থনা করেছিল। কিন্তু আপনি ও আপনার প্রশাসন এ ঘটনা বন্ধ করার কোনোপ্রকার উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো তাদেরই কটুকথা বলে বহিষ্কারের হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দিয়ে আক্রমণকারীদের পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন।’

উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে স্মরকলিপিতে বলা হয়, ‘অতীতেও এ ধরনের নানা অভিযোগ আপনি ও আপনার প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে উত্থাপিত হয়েছে, আপনি তার একটারও সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার করেছেন বলে আমরা দেখতে পাইনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীরা হরহামেশাই বিভিন্ন প্রকার নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, কিন্তু তারা আপনার কাছ থেকে কোনা প্রতিকার পাচ্ছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্য হওয়া সত্ত্বেও আপনি সব শিক্ষার্থীর প্রতি শিক্ষকসুলভ নিরপেক্ষতা প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। আপনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতনভুক সর্বোচ্চ ও সার্বক্ষণিক কর্মকর্তা। আমাদের রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে আমাদের করের টাকায় আপনার বেতন-ভাতা সম্মানী পরিশোধ করা হয়। আমাদের সন্তানসন্ততির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আপনি আইনত দায়িত্বপ্রাপ্ত জেনেই আমরা আমাদের সন্তানদের আপনার অভিভাবকত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরণ করেছি।’

স্মরকলিপিতে আরও বলা হয়, ‘আপনি রাষ্ট্রীয় তহবিলের টাকায় বেতনভাতাপ্রাপ্ত একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রধান হওয়া সত্ত্বেও কেন একটি দলীয় সরকারের কর্মকর্তার মতো আচরণ করছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। দিনের পর দিন আপনার পক্ষপাতমূলক, অমানবিক আচরণে আমরা হতবাক, বিমর্ষ এবং উদ্বিগ্ন। আপনার এই আচরণ অপরাধীদের আরও অপরাধ করতে ধারাবাহিকভাবে উসকানি দিয়ে চলেছে বলে আমরা মনে করছি।’

স্মরকলিপি পাঠের পর অভিভাবক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ঘটনায় ছাত্রলীগের মারমুখী ভূমিকার জন্য সংগঠনটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কী না? উত্তরে আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আশা করি আমরা সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করব, যে যেখানেই থাকি৷ কোনো সংগঠন বা ব্যক্তিকে দায়ী না করি৷ আমরা যেন নিয়ম-নীতি ও মূল্যবোধের মধ্যে থাকি।’

এ সময় রাখাল রাহা উপাচার্যকে প্রশ্ন করেন-ক্যাম্পাসে দল-মত নির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীর সহাবস্থান নিশ্চিতে প্রশাসনের তৎপরতা কেন নেই? এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি মো. আখতারুজ্জামান।

উপাচার্যের কার্যালয় সংলগ্ন লাউঞ্জে এদিন উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজীমউদ্দিন খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক সাঈদ ফেরদৌস, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, আলোকচিত্র শিল্পী শহিদুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী প্রমুখ।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেখানে ছিলেন প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী, সহকারী প্রক্টর বদরুজ্জামান ভূঁইয়া, জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক মাহমুদ আলমসহ কয়েকজন।