২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ভোর ৫:১৫
শিরোনাম:

মনে হচ্ছিল সিরিয়াল কিলার, জীবন বাঁচাতে পরিচয় দেইনি: ঢাবির সেই ছাত্রীর জবানবন্দি

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের প্রধান ফটক থেকে উত্তরার দিকে ১০০ গজ যেতেই ফুটপাতের সৌন্দর্য বর্ধনের ফুল গাছের ঝোপে পড়ে ছিল একটি হাতঘড়ি, চাবির রিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাগজপত্র, জুতা ও ফাইল। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল ওষুধসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। পড়েছিল একটি কালো জিন্স প্যান্ট। যুগান্তর

এই স্থানেই ধর্ষণ হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মেধাবী ছাত্রী। ঘটনাস্থল দেখে পুলিশ বলছে, নিজেকে বাঁচাতে প্রবল চেষ্টা করেছেন ওই ছাত্রী। সেই স্থানে কী ঘটেছিল তখন- তার বর্ণনা পাওয়া গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিমের কাছ থেকে।

ধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থীর সঙ্গে রাতে হাসপাতালে ছিলেন ড. সাদেকা হালিম। এ বিষয়ে তিনি এবং ভুক্তভোগী ছাত্রীর বন্ধুরা গণমাধ্যমে কথা বলেছেন। তাদের বিবরণ অনুযায়ী, রোববার সন্ধ্যা ৭টায় কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে নামার পর থেকে শেওড়ার যে বন্ধুর বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা দিয়েছিলেন তিনি (ছাত্রী) সেই বন্ধুর বাসায় পৌঁছানো পর্যন্ত সময় লাগে মোট সাড়ে ৩ ঘণ্টা।

এই সময়ের মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ঠিক কতক্ষণ তিনি জ্ঞান হারিয়েছিলেন তা বলতে পারেননি। তবে জ্ঞান ফিরে আসার পর বুঝতে পারেন, ঘণ্টাদুয়েক পার হয়েছে এবং ধর্ষক তখনও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল।

ঘটনার বিবরণে ভিকটিম কী বলেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সাদেকা হালিম বলেন, মেয়েটির সামনে পরীক্ষা। স্টাডি সার্কেলে পড়ালেখা করে শিক্ষার্থীরা। সে কারণেই বান্ধবীর বাসার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। তার সঙ্গে বাড়তি পোশাক ছিল, পড়ালেখার বই-নোটস আর প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস ছিল। মেয়েটির বিবরণীতে ধর্ষক একজনই ছিল।

ধর্ষক কেমন ছিল দেখতে তা বলতে পেরেছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, দেখে মনে হচ্ছিল সিরিয়াল কিলার। ঠাণ্ডা মাথায় যে ধর্ষণের মতো অপরাধ ঘটিয়েছে একাধিকবার এবং মেয়েটিকে জোর করে পোশাকও পরিবর্তন করিয়েছে, আবার ধর্ষণ করেছে।

ভিকটিম জানিয়েছে, ধর্ষক তার পরিচয় জানতে চেয়েছে বারবার। মেয়েটি আন্দাজ করছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় পেলে তাকে মেরে ফেলা হতে পারে। তাই সে মুখ খোলেনি।

ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘আমি তার (ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী) কাছ থেকে বিবরণ শুনছিলাম আর ভাবছিলাম, মেয়েটি আমারই মেয়ে। কী প্রচণ্ড ব্যথা সহ্য করছে!’ তার যথাযথ রেস্ট দরকার উল্লেখ করে এই শিক্ষক বলেন, ‘সঙ্গে মানসিক সহযোগিতাও খুব দরকার। মা-বাবা তার পাশে এসে গেছেন, শিক্ষকরা আছেন, আন্তরিকতা নিয়ে বিষয়টি তারা দেখছেন। সেটা ইতিবাচক। এখন তার আগামীকে সহজ করে দেয়ার কাজটি আমাদের সবার।’

ওই ছাত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে এমন কয়েকজন জানান, ছাত্রীটি বলেছেন, ‘ধর্ষক বারবার আমার নাম জিজ্ঞেস করছিল। আমি ভাবছিলাম, আমি ঢাবি শিক্ষার্থী বললে আমাকে মেরে ফেলবে। আমার পরিচয় জানলে আমি বাঁচব না। ওই লোক খুব দাম্ভিক ছিল। আমি তাকে প্রতিরোধ করতে পারিনি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সামিনা লুৎফা গণমাধ্যমে বলেন, ‘কিছুদূর হেঁটে সে (ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী) চেষ্টা করেছে সিএনজি বা গাড়ি থামাতে। না পেরে রাস্তা পার হয়ে বন্ধুর বাসায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়, তখন রাত সাড়ে ১০টা।’ তিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থল এত অনিরাপদ হবে- এটা না জানা থাকলে আন্দাজও করার কথা নয়।

মেয়েটির বয়স খুবই কম। শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন। প্রচণ্ড শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে, হাতে নানা জায়গায় কালসিটে। মেয়েটি বেঁচে আছে অনেক ব্যথা নিয়ে। অসম্ভব মানসিক শক্তি ছিল বলে প্রায় তিন ঘণ্টা পর সে ওখান থেকে পালিয়ে আসতে পেরেছে।’ ধর্ষকের চেহারার বিষয়ে সামিনা বলেন, ‘অবয়ব বিষয়ে পুলিশকে বিস্তারিত জানিয়েছে সেই শিক্ষার্থী। তবে লোকটি দাম্ভিক ছিল বলেও জানিয়েছে। তাকে পেছন থেকে ধরে নিয়ে গেছে।’