২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ভোর ৫:৫৩
শিরোনাম:

বিশ্ববাসী নতুন করে বঙ্গবন্ধুকে জানবে, সংসদে প্রধানমন্ত্রী

২৯৮টি কর্মসূচির মাধ্যমে সারা বিশ্ব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করবে। ইউনেস্কো ২০২০ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরমধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন নিঃসন্দেহে আরও ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

বুধবার জাতীয় সংসদের প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সংসদ সদস্য এ কে এম রহমতুল্লাহ ও আব্দুস সালাম মুর্শেদীর পৃথক দুটি প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা একথা বলেন।

লিখিত প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী সংসদকে জানান, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি’ ও ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি’ নামে দু’টি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির অধীনে আটটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রস্তাবসমূহ যাচাই-বাছাইয়ের পর সারা বছর দেশে ও বিদেশে মুজিব বর্ষ উদযাপনের জন্য একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এই কর্মপরিকল্পনায় জন্মশতবার্ষিকী স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ, বঙ্গবন্ধুর নিজের রচনা, ভাষণ, অন্যান্য বিষয় ভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রকাশনা, দেশে ও বিদেশে সেমিনার, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বইমেলা ও অন্যান্য আয়োজন বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করার কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়াও ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম, ইউনেস্কো, জাতিসংঘ ও বিদেশে স্বনামধন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন, ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় বঙ্গবন্ধুর কর্মজীবন নিয়ে প্রচারণা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিভাগ ও সংস্থা কর্তৃক উন্নয়ন ও সেবামূলক কার্যক্রম গ্রহণসহ অনেক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এই পরিকল্পনায় বর্তমানে ২৯৮টি কর্মসূচি রয়েছে।

সংসদ নেতা জানান, সরকারি ও বেসরকারি দফতর, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান এমনকি ব্যক্তি হতে অসংখ্য প্রস্তাব পাওয়া গেলেও বাস্তবায়নের সুবিধার্থে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনায় ২৯৮টি কর্মসূচিতে সীমিত রাখা হয়েছে। আগামী ১৭ মার্চ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে এক বর্ণাঢ্য উৎসবমুখর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বছরব্যাপী কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে আগামী ১৭ মার্চ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনি ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে কর্মসূচির উদ্বোধন করা হবে।

তিনি বলেন, মিথ্যা দিয়ে সত্যকে মুছে ফেলা যায় না। সেটা আজ প্রমাণিত সত্য, সত্য বলেই জাতির পিতার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ আন্তর্জাতিক ঐতিহ্য প্রামাণ্য দলিলে স্থান পেয়েছে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে, মুক্তির সংগ্রামে, বিজয়ের ইতিহাসে জাতির পিতার যে অবদান তা মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। আজকে সে ইতিহাস উদ্ভাসিত হয়েছে। আজকে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ইউনেস্কোর মাধ্যমে বিশ্বের সকল দেশ, জাতিসংঘভুক্ত সকল দেশে উদযাপন করছে। এর থেকে বড় সত্য কি আছে? কাজেই কে মানল, কে মানল না তার জন্য বাঙালি জাতি বসে থাকেনি, থাকবে না। জাতির পিতা ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন ৭ কোটি বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। এখন ৭ কোটি থেকে ১৬ কোটি হয়েছে কিন্তু তাদেরকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারে নাই, দাবায়ে রাখতে পারবেও না। বাঙালি এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে।

তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজ ভান্ডরীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা আরো বলেন, ১৯৭৫ এর পর থেকে ২১টা বছর জাতির পিতার নাম নিশানা ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। ৭ মার্চের ভাষণে জয়বাংলা স্লোগান এবং শেখ মুজিবের নাম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল বাংলার মাটিতে। সত্যকে কখনো মিথ্যা দিয়ে বা বাধা দিয়ে রাখা যায় না, মুছে ফেলা যায় না সেটা আজ প্রমাণিত সত্য। প্রমাণিত সত্য বলেই ৭ মার্চের ভাষণ আন্তর্জাতিক ঐতিহ্য প্রামাণ্য দলিলে স্থান পেয়েছে। বিশ্ব স্বীকার করে নিয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ হচ্ছে আড়াই হাজার বছরের যত নেতৃত্বের ভাষণ তার দেশকে তার দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে দেশের মাঝে তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের যেসকল দেশে দূতাবাস আছে, প্রত্যেক দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে জন্মশতবার্ষিকী অথবা মুজিব বর্ষ পালন করা হবে। আমাদের দূতাবাসগুলো উদ্যোগ নিচ্ছে। মুজিব বর্ষে অনেক দেশের সরকার প্রধান রাষ্ট্র প্রধান আসবেন। আমরা ভাগে ভাগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেব। সংসদের বিশেষ অধিবেশনেও অনেককে দাওয়াত দেব সেখানে এসে বক্তব্য দিয়ে যাবেন।

তিনি বলেন, যেখানে আলো সেখানেই অন্ধকার। একটা সময় ছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। কিন্ত সেই অন্ধকার ভেদ করে এখন বাংলাদেশ আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে। জাতির পিতার যে আদর্শ আমরা ধারণ করেছি, যে আদর্শ যে চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন সেই চেতনা বা আদর্শ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা অনেক দূর অগ্রসর হয়েছি। আজকে বাংলাদেশের উন্নয়নের রোল মডেলে স্বীকৃতি পেয়েছে।

তিনি বলেন, কে সন্মান দেবে কে সন্মান দেবে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে যারা হত্যা করেছিল, সেই খুনিদের বিচারের হাত থেকে মুক্ত করে তাদেরকে যারা পুরস্কৃত করেছে। যারা স্বাধীনতা বিরোধী, যুদ্ধাপরাধী যাদের বিচার শুরু হয়েছিল। বিচাররের পথ বন্ধ করে দিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে মর্যাদা দিয়ে মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর পদ দিয়েছে বা ৭ খুনের আসামিদের ছেড়ে দিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছে। তাদের কাছ থেকে ভাল কিছু আশা করা যায় না।