১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, দুপুর ১:০০
শিরোনাম:

বিশ্বের ১১৯তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে শুরু হলো ই পাসপোর্ট

অবশেষে ই-পাসপোর্টের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ই-পাসপোর্ট প্রস্তুত হয়েছে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন আজ বুধবার (২২ জানুয়ারি)। এরপরই ই-পাসপোর্ট সবার জন্য উন্মুক্ত হবে। সারা বাংলা

অভিবাসন ও পাসপোর্ট অধিদফতর (ডিপিআই) সূত্র জানিয়েছে, দেশের নাগরিকদের মধ্যে প্রথম ই-পাসপোর্ট পাবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে ই-পাসপোর্টের জন্য তাদের দু’জনেরই ডিজিটাল ছবি ও ডিজিটাল সই সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের ই-পাসপোর্ট সরবরাহ করার মাধ্যমে বিশ্বের ১১৯তম দেশ হিসেবে ই-পাসপোর্ট চালু করবে বাংলাদেশ।

প্রথমে রাজধানীর উত্তরা, যাত্রবাড়ী ও আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে ২০২০ সালের মধ্যেই সারাদেশে চালু হবে এই পাসপোর্ট সেবা। প্রতিদিন ২৫ হাজার ই-পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে।

ই-পাসপোর্টের আবেদন : অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করে সাবমিট করতে হবে নতুন পাসপোর্টের জন্য। সেক্ষেত্রে আগেই ব্যাংকের অনলাইন মাধ্যমে টাকা জমা দিয়ে ব্যাংক থেকে সরবরাহ করা রেফারেল নম্বর কোডটি ব্যবহার করতে হবে অনলাইন আবেদন ফরমে। আবার কেউ চাইলে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড দিয়েও পাসপোর্ট ফি জমা দিতে পারবেন। প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে সাবমিট করার পর প্রিন্ট কপি নিতে হবে। সেই কপি সশরীরে গিয়ে পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে। আবেদন ফরমে ছবি ও সত্যায়ন করা না লাগলেও পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে।

অনলাইনে পূরণ না করে পিডিএফ ফরম ডাউনলোড করে হাতেও পূরণ করা যাবে। ফরম পূরণের সময় ছবি সত্যায়ন করতে হবে না। তবে বয়স্কদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন সনদ দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

আবেদনপত্র জমা দেয়ার সময় ই-পাসপোর্টের জন্য ডেমোগ্রাফিক তথ্য, ১০ আঙুলের ছাপ, চোখের কর্নিয়ার ছবি ও ডিজিটাল সই সংগ্রহ করবে পাসপোর্ট অফিস। এসব তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ডাটা সেন্টার ও ডিজ্যাস্টার রিকভারি সেন্টারের সার্ভারে সংরক্ষণ করা হবে। পাশাপাশি পাসপোর্টের আবেদনকারীদের পাসপোর্ট দেওয়ার জন্য পার্সোনালাইজেশন সেন্টারে পাসপোর্ট প্রিন্টিংয়ের পর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ও দূতাবাসগুলোয় পাসপোর্ট বিতরণ করা হবে। সব তথ্য চিপে যুক্ত থাকবে। ইমিগ্রেশন পুলিশ বিশেষ যন্ত্রের সামনে পাসপোর্টের পাতাটি ধরতেই সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।

কত দিনে হাতে পাবেন ই-পাসপোর্ট : পাঁচ ও ১০ বছর মেয়াদি এবং ৪৮ ও ৬৪ পাতার ই-পাসপোর্ট ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ ভিন্ন ভিন্ন ফি দিয়ে পাওয়া যাবে। নতুন পাসপোর্টের ক্ষেত্রে অতি জরুরি তিন দিনে, জরুরি সাত দিনে ও সাধারণ পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে ২১ দিনের পাসপোর্ট পাওয়া যাবে। তবে পুরনো অথবা মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট রি-ইস্যু করার ক্ষেত্রে অতি জরুরি পাসপোর্ট দু’দিনে, জরুরি পাসপোর্ট তিন দিনে ও সাধারণ পাসপোর্ট সাত দিনের মধ্যে পাওয়া যাবে।

ই-পাসপোর্ট করতে ফি কত : বাংলাদেশে আবেদনকারীদের জন্য ৪৮ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের জন্য সাধারণ ফি সাড়ে ৩ হাজার টাকা, জরুরি ফি সাড়ে ৫ হাজার টাকা ও অতি জরুরি ফি সাড়ে ৭ হাজার টাকা। ১০ বছর মেয়াদি ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্টের জন্য সাধারণ ফি ৫ হাজার টাকা, জরুরি ফি ৭ হাজার টাকা ও অতি জরুরি ফি ৯ হাজার টাকা।

এছাড়া ৬৪ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের জন্য সাধারণ ফি সাড়ে ৫ হাজার টাকা, জরুরি ফি সাড়ে ৭ হাজার টাকা ও অতি জরুরি ফি সাড়ে ১০ টাকা। আর ১০ বছর মেয়াদি ৬৪ পৃষ্ঠার ই-পাসপোর্টের জন্য সাধারণ ফি ৭ হাজার টাকা, জরুরি ফি ৯ হাজার টাকা ও অতি জরুরি ফি ১২ হাজার টাকা।

ই-পাসপোর্টের সুবিধা : পাসপোর্ট অধিদফতর জানিয়েছে, ই-পাসপোর্টে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। বর্তমানে এমআরপি ডেটাবেজে যেসব তথ্য আছে, তা ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে। পাসপোর্টের মেয়াদ হবে পাঁচ ও ১০ বছর। ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এমআরপি পাসপোর্ট বাতিল হয়ে যাবে না। তবে কারও পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তাকে এমআরপির বদলে ই-পাসপোর্ট নিতে হবে।

বর্তমানে বই আকারে যে পাসপোর্ট আছে, ই-পাসপোর্টেও একই ধরনের বই থাকবে। তবে বর্তমানে পাসপোর্টের বইয়ের শুরুতে ব্যক্তির তথ্যসংবলিত যে দু’টি পাতা আছে, ই-পাসপোর্টে তা থাকবে না। সেখানে থাকবে পালিমারের তৈরি একটি কার্ড। এই কার্ডের মধ্যে থাকবে একটি চিপ। সেই চিপে পাসপোর্টের বাহকের তথ্য সংরক্ষিত থাকবে।

ই-পাসপোর্টের সব তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষিত থাকবে ‘পাবলিক কি ডাইরেকটরি’তে (পিকেডি)। আন্তর্জাতিক এই তথ্যভাণ্ডর পরিচালনা করে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইসিএও)। ইন্টারপোলসহ বিশ্বের সব বিমান ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এই তথ্যভাণ্ডারে ঢুকে তথ্য যাচাই করতে পারে।

ই-পাসপোর্টের বাহক কোনো দেশের দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে আবেদনকারীর তথ্যের সঙ্গে পিকেডি’তে সংরক্ষিত তথ্য যাচাই করে নেবে এবং আবেদন গ্রহণ করে বইয়ের পাতায় ভিসা স্টিকার কিংবা বাতিল করে সিল দেবে। স্থল ও বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষও একই পদ্ধতিতে পিকেডি’তে ঢুকে ই-পাসপোর্টের তথ্য যাচাই করবে।

পাসপোর্ট অধিদফতর থেকে জানা যায়, ই-পাসপোর্ট চালুর জন্য দেশের প্রতিটি বিমান ও স্থলবন্দরে চাহিদামোতাবেক ই-গেট স্থাপন করে স্বয়ংক্রিয় সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করা হবে। যাদের হাতে ই-পাসপোর্ট থাকবে, তাদের এই গেট দিয়ে সীমান্ত পার হতে হবে। তবে যাদের হাতে এমআরপি পাসপোর্ট থাকবে, তাদের ইমিগ্রেশনের কাজ বিদ্যমান পদ্ধতিতে চলমান থাকবে।

ই-পাসপোর্টে প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান খান সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পের আওতায় ই-পাসপোর্ট বুকলেট সংগ্রহ করা হবে। এর মধ্যে ২০ লাখ বই সরাসরি আমদানি করা হবে। আর ২ কোটি ৮০ লাখ বই দেশে তৈরি করা হবে।