১৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বিকাল ৫:১১
শিরোনাম:

সাংবাদিকদের হেনস্তার পর জিডি করা সেই ছাত্রলীগ নেতা বহিষ্কার

পেশাগত দায়িত্বরত সাংবাদিকদের শারীরিকভাবে হেনস্তা করার পর উল্টো তাদের বিরুদ্ধেই সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শহীদুল ইসলাম খান রিয়াদকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই বহিষ্কারাদেশের কথা জানানো হয়।

এতে বলা হয়, গত ১ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় জড়িত থাকায় ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শহীদুল ইসলাম খান রিয়াদকে (সহ-সভাপতি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগ) বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো।

গত শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনের ভোটগ্রহণকালে গেন্ডারিয়ার ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ মাদ্রাসা কেন্দ্রে রিয়াদ ও তার সহযোগীদের হাতে শারীরিকভাবে হেনস্থার শিকার হন তিন সাংবাদিক। এরা হলেন- বাংলাদেশ প্রতিদিনের রিপোর্টার মাহবুব মমতাজি, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের রিপোর্টার নুরুল আমিন জাহাঙ্গীর ও দিন প্রতিদিন পত্রিকার রিপোর্টার পাপন। ওই তিন সাংবাদিক অফিসিয়াল অ্যাসাইনমেন্টে সেই ভোট কেন্দ্রে গিয়েছিলেন।

তিন সাংবাদিক জানান, সেদিন বেলা সোয়া ১১টার ওই মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রের বুথে কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোট প্রদান শেষে দুই ভোটারকে বের করে দেন কোমরে অস্ত্র নিয়ে সেখানে অবস্থানরত ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদ। ওই দুই ভোটার বারবার অনুরোধ করে বলছিলেন, ‘আমরা নৌকার সমর্থক এবং নৌকা মার্কায় ভোট দিতে চাই’। এ সময় রিয়াদ তাদের বলেন, ‘নৌকায় ভোট হয়ে গেছে, চলে যান’।

সাংবাদিক নুরুল আমিন জাহাঙ্গীর জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ ঘটনা দেখে আমরা ওই দুই ভোটারের ছবি তুলি এবং তাদের মতমত নিই। এরই মধ্যে ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদ এসে আমাদের জামার গলার ধরে টানাহেঁচড়া এবং ভোট পরিদর্শন কার্ড ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে রিয়াদ তার সহযোগীদের দিয়ে আমাদের জোরপূর্বক আটকে রেখে আমাদের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন। আমরা প্রায় ঘণ্টাব্যাপী অবরুদ্ধ থাকি।’

তিনি বলেন, ‘অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে মোবাইল ফোন উদ্ধারের জন্য আমরা কেন্দ্র ইনচার্জ গেন্ডারিয়া থানার উপ-পরিদর্শক মাহমুদ এবং সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আরিফকে বিষয়টা জানাই। কিন্তু তারা বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতাকে কিছু বলতে পারব না’।

পরে সাংবাদিকরা প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে যান। কিন্তু তিনিও এক্ষেত্রে অপরাগতা প্রকাশ করেন। সবশেষে ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদ ও তার সহযোগীরা দুপুর ১২টার দিকে পুলিশের ওয়ারী জোনের সহকারী কমিশনারের (এসি) উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের মোবাইলের ছবি-ভিডিওসহ যাবতীয় তথ্য মুছে দেন। এরপর মোবাইল ফোন দিয়ে দেন। এ বিষয়ে পরদিন সব গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

কিন্তু বিস্ময়করভাবে পরদিন রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনের একটি সংবাদ ও পেশাদার তিন সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করে গেন্ডারিয়া থানায় উল্টো জিডি করেন রিয়াদ। তিনি পেশাদার তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে জিডিতে অভিযোগ করেন, তারা কেন্দ্রে ‘বিএনপি জামাতের এজেন্ট হিসেবে গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করেন’। এ নিয়ে সাংবাদিক সমাজে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়।

যোগাযোগ করা হলে গেন্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজু মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘যখন জিডিটি হয়েছে তখন আমি থানায় ছিলাম না। ডিউটি অফিসার এ জিডি নিয়েছেন।’