১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, দুপুর ১:১৪
শিরোনাম:

করোনা ভাইরাস: যেভাবে থাকবেন হোম কোয়ারেন্টাইনে

অনলাইন ডেস্ক: করোনা ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে একদিনেই মৃত্যু হয়েছে প্রায় এক হাজার জনের। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৯৮৭ জনে। এরমধ্যে ইতালিতে ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ৩৪৯ জন, স্পেনে ১৯১ ও ইরানে ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সব অঙ্গরাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ১০৫ জন।

করোনা ভাইরাস সন্দেহে যে কাউকেই কোয়ারেন্টাইনে রাখার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্ত কোয়ারেন্টাইন কি? সেটা নিয়ে রয়েছে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক। তাই অনেকেই কোয়ারেন্টাইনে থাকতে চান না। কোয়ারেন্টাইন অর্থ একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অন্যদের কাছ থেকে নিজেকে পৃথক বা আলাদা রাখা। তবে কোয়ারেন্টাইন মানে এই নয় যে, আপনাকে সম্পূর্ণ আলাদা করে দেয়া হলো। যদি কোনো ব্যক্তির করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে তাকে জনবহুল এলাকা থেকে দূরে রাখতে এবং ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে কিছুদিন আলাদা থাকতে বলা হয়।

আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিধির (আইএইচআর-২০০৫) আর্টিকেল ৩২ অনুসারে, তাদের ১৪ দিন স্বেচ্ছা বা হোম কোয়ারেন্টাইন পালন করার জন্য কিছু ব্যবস্থা বা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। হোম কোয়ারেন্টাইন মানে আপনি থাকবেন নিজের বাড়িতে।

হোম কোয়ারেন্টাইনে আপনি যা করবেন-

১. নিজের বেডরুমে একা থাকুন। অন্যদের থেকে অন্তত ১ মিটার (৩ ফুট) দূরে থাকুন। অবশ্যই ঘুমানোর জন্য পৃথক বিছানা ব্যবহার করুন। আপনার সাথে কোনো পশু-পাখি রাখবেন না।

২. যথাসম্ভব সাক্ষাৎ এড়িয়ে চলুন, এমনকি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও। সম্ভব হলে নিজের আলাদা টয়লেট ব্যবহার করুন।

৩. যে কারও সামনে মাস্ক পরে থাকুন। মাস্ক পরে থাকাকালীন এটি হাত দিয়ে ধরা থেকে বিরত থাকুন। মাস্ক ব্যবহারের সময় প্রদাহের (সর্দি, থুতু, কাশি, বমি ইত্যাদি) সংস্পর্শে এলে সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক খুলে ফেলুন এবং নতুন মাস্ক ব্যবহার করুন। মাস্ক ব্যবহার শেষে ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে ফেলুন এবং সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে।

৪. ঘন ঘন নিজ হাত অন্তত ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে ধুয়ে ফেলুন। যেসব জায়গায় বারবার স্পর্শের সম্ভাবনা আছে, সেগুলো দিনশেষে ভালো করে জীবাণুনাশক দিয়ে মুছে ফেলুন। যেমন দরজার হাতল, কম্পিউটার, ফোন, টয়লেট ইত্যাদি। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে। টিস্যু না থাকলে শুধু হাত মোছার জন্য নির্দিষ্ট তোয়ালে বা গামছা ব্যবহার করুন।

৫. সবাই হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলুন। হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু পেপার বা মেডিকেল মাস্ক বা কাপড়ের মাস্ক বা বাহুর ভাঁজে মুখ ও নাক ঢেকে রাখুন এবং উপরের নিয়মানুযায়ী হাত পরিষ্কার করুন। টিস্যু পেপার ও মেডিকেল মাস্ক ব্যবহারের পর ঢাকনাযুক্ত বিনে ফেলুন।

৬. অন্যের সঙ্গে যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রাখুন। কথা বলতে প্রয়োজনে অন্তত ১ মিটার (৩ ফুট) দূর থেকে কথা বলুন। এবং কথা বলা অবস্থায় ফেস মাস্ক পড়–ন।

৭. ব্যক্তিগত ব্যবহার্য সকল সামগ্রী অন্য কারো সাথে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করবেন না।

৮. নিজের ব্যক্তিগত ফোন, কম্পিউটারগুলোকে ট্যিসু পেপারে হালকা সাবানের পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

হোম কোয়ারেন্টাইন তাঁর জন্য, যিনি এখনো পজিটিভ হননি। কেউ পজিটিভ হয়ে থাকলে তাঁদের হাসপাতালে আলাদা করার নাম আইসোলেশন।

এছাড়াও রোগীর পরিচর্যাকারীকেও প্রতিনিয়ত নিজের হাত ধুয়া ও পরিষ্কার, সতর্ক থাকতে হবে। যেমন-

১. কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে বা তার ঘরে ঢুকলে

২. খাবার তৈরির আগে ও পরে

৩. খাবার আগে

৪. টয়লেট ব্যবহারের পরে

৫. গ্লাভস পরার আগে ও খোলার পরে

৬. যখনই হাত দেখে নোংরা মনে হয়

৭. খালি হাতে ওই ঘরের কোনো কিছু স্পর্শ না করা।

এ অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের ভূমিকা-

পরিবারের সদস্য যখন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকবেন, তখন অন্যদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মতই অব্যহত রাখতে পারবেন। তবে এর পাশাপাশি কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষটির দেখাশোনার ভারও তাদের নিতে হবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে পুরো ঘরই। রোগীর উপসর্গগুলোর দিকে নজর রাখতে হবে, শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। ভাইরাসটির মতো উপসর্গ দেখা দিয়েছে এমন কারও সাথে দেখা করতে হয়, তাহলে সেসময় অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করবেন। যদি সেই ব্যক্তির দেহ-নিঃসৃত তরলের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে অবশ্যই হাতে গ্লাভস ব্যবহার করবেন। কাজ শেষে এই মাস্ক ও গ্লাভস অবশ্যই ফেলে দেবেন।

ভাইরাসের মতো কোনো উপসর্গ দেখা দিলে যেমন জ্বর, ক্লান্তি, শুকনা কাশি, গায়ে ব্যথা, নাক বন্ধ, সর্দি, গলা ব্যথা, ডায়রিয়া দেখা দেয়, তাহলে যোগাযোগ করতে পারেন চিকিৎসকের সাথে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) হটলাইন নাম্বার এ যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। নাম্বার গুলো হলো:

০১৪০১১৮৪৫৫১, ০১৪০১১৮৪৫৫৪, ০১৪০১১৮৪৫৫৫, ০১৪০১১৮৪৫৫৬, ০১৪০১১৮৪৫৫৯, ০১৪০১১৮৪৫৬০, ০১৪০১১৮৪৫৬৩, ০১৪০১১৮৪৫৬৮, ০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯৩৭১১০০১১, ০১৫৫০০৬৪৯০১, ০১৫৫০০৬৪৯০২, ০১৫৫০০৬৪৯০৩, ০১৫৫০০৬৪৯০৪ এবং ০১৫৫০০৬৪৯০৫