১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বিকাল ৩:৩৪
শিরোনাম:

বসুন্ধরা কনভেনশন সিটি হাসপাতাল সারি সারি বেড, চলছে কর্মজ্ঞ

মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় দেশের সবচেয়ে বড় অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। দুই নম্বর হলে ইতোমধ্যে বেড বসানো হয়ে গেছে। এরপর সাজানো শুরু হবে রোগীর বেড, ফার্ণিচার, আগে থেকে তৈরি করে রাখা ডাক্তার, নার্স ও সার্পোটিং স্টাফদের কক্ষগুলো। এক্সপো জোন ও তিনটি হল রুমে দুই হাজার ১৩ বেডের আইসোলেশন সেন্টারের পাশাপাশি ৭১ বেডের আইসিইউ ইউনিট থাকবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই হাসপাতাল তৈরির কাজ শেষ করতে দিনে-রাতে চলছে কাজ।

বুধবার আইসিসিবি’তে করোনা রোগীদের জন্য নির্মাণাধীন হাসপাতালের কাজের অগ্রগতি দেখতে পরিদর্শনে এসেছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান। এসময় উপস্থিত ছিলেন আইসিসিবির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এম এম জসীম উদ্দিন, মার্কেটিং (সেক্টর-এ) এইচওডি জেড এম আহমেদ প্রিন্স, হেড অব সাপ্লাই চেইন (সেক্টর-এ) মো. আব্দুর রহমান জিপং, বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের জিএম সেলস জাকারিয়া জালাল।

আইসিসিবি’র এক্সপো জোনে হাসপাতাল নির্মাণস্থলে কাজের তদারকি করতে এসে বুধবার স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (ঢাকা সিটি বিভাগ) মো. মাসুদুল আলম বলেন, এ হাসপাতালে বেডগুলো স্থাপনের জন্য যেসকল প্রস্তুতি নেওয়া দরকার তা আমরা পর্যায়ক্রমে তৈরি করে আসতেছি। ফ্লোরম্যাট বসানো হচ্ছে, বেডগুলোও তৈরি করে রাখা হয়েছে। আমাদের প্রধান প্রকৌশলীর নির্দেশনায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি । আমরা তত্পর আছি, এ দুর্যোগের মুহুর্তেও আমরা সবাই একাত্ব আছি। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই এ হাসপাতালকে চিকিত্সা উপযোগী করার জন্য তৈরি করতে পারবো। বসুন্ধরাকে অনেক ধন্যবাদ জানায়। এতো সুন্দর একটি জায়গা আমাদের দিয়েছে, এটি যদি আমাদের তৈরি করতে হতো, তাহলে হয়তো এতো দ্রুত সময়ের মধ্যে হাসপাতালে রূপান্তর করতে পারতাম না। টয়লেটের কাজও পর্যায়ক্রমে শেষ হয়ে যাচ্ছে, কমোড, ভ্যাসিন বসানো হয়েছে। ফার্ণিচারসহ অন্যান্য আসবাবপত্র প্রস্তুত করা আছে। এখন শুধু স্থাপন করবো। আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা পেলে দ্রুত আইসিইউ বেড স্থাপন করতে পারবো।

আইসিসিবির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এম এম জসীম উদ্দিন বলেন, ফ্লোরম্যাট বিছানো এবং বেড স্থাপন করার যে কার্যক্রমগুলো তা মোটামুটি এগিয়ে গেছে। এখন বেডও বসে যাচ্ছে। দুই নম্বর হলে ইতোমধ্যে বেড বসানো হয়ে গেছে। আমরা আশা করছি এ কার্যক্রমগুলো আর বেশি সময় লাগবে না। বাংলাদেশে একমাত্র সেনাবাহিনী ছাড়া এর বড় পরিসরে পূর্ণাঙ্গভাবে অস্থায়ী হাসপাতাল করার অভিজ্ঞতা কারো ছিল না। স্বাস্থ্য প্রকৌশলীরা স্থায়ী হাসপাতাল করেছেন, কিন্তু অস্থায়ী কোনো একটি জায়গাকে কনভার্ট করে কোনো হাসপাতাল তারা এখনো করেনি। তাই তাদেরও অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। দিন-রাত পরিশ্রম করে একটি পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন তারা। বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষ যেকোনো বিষয়ে এগিয়ে গিয়ে তাদেরকে সহায়তা করছে। বারবার জানতেও চাওয়া হচ্ছে কি কি সহায়তা তাদের দরকার। আশা করছি আগামী ২৬-২৭ তারিখের দিকে এখানে করোনা রোগীদের সেবা দিতে পারবে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আইসিসিবি’র দুই নম্বর হলে বেড বসানো হয়ে গেছে। এক্সপো জোনে পুরোদমে ফ্লোরম্যাট বসানোর কাজ চলছে এবং বেডগুলোও তৈরি করে রাখা হয়েছে। ডাক্তার, নার্স ও সার্পোটিং স্টাফদের কক্ষগুলো তৈরি করা হয়ে গেছে। স্তুপ করে রাখা আছে ফার্ণিচারসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র। এক্সপো জোনের পুরোটাজুড়ে এয়ারকন্ডিশন লাগানো হয়েছে। ২৫০০ কিলোওয়াটের সাবস্টেশন এবং জেনারেটর বসানো হয়েছে। টয়লেটের কাজও প্রায় শেষ, কমোড ও ভ্যাসিন বসানো হয়েছে। দ্রুত সিসি ক্যামেরাও স্থাপন করা হবে, যেন ডাক্তার ও নার্স রোগীদের সার্বক্ষণিক মনিটর করতে পারেন।

জানা যায়, গত ১২ এপ্রিল থেকে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) অস্থায়ী হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৫ দিনের মধ্যেই আইসিসিবিকে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে রূপ দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এ হিসেবে আগামী ২৭ এপ্রিলের আগেই হাসপাতালের সবকাজ সম্পন্ন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর করার কথা। দিন-রাত কাজ হচ্ছে।

উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাবে দেশের এই ক্রান্তিকালে এগিয়ে এসেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দশ কোটি টাকা দেওয়ার পাশাপাশি সরকারকে আইসিসিবিতে পাঁচ হাজার শয্যার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেয় দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গোষ্ঠী বসুন্ধরা। এর পর প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সেনাবাহিনীর একটি দল আইসিসিবি পরিদর্শন করে। পরে এটাকে অস্থায়ী হাসপাতাল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। নানা হিসাব-নিকাশ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সেখানে দুই হাজার ১৩ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার স্থাপনের কাজ করছে। এর বাইরে সেখানে হবে ৭১ বেডের আইসিইউ ইউনিট। আইসিসিবির সুবিশাল চারটি কনভেনশন হল ও একটি এক্সপো জোন, দেশের অন্যতম বৃহত্ এ হাসপাতালটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। যত দিন এ মহামারি থাকবে এবং সরকারের যত দিন ব্যবহারের প্রয়োজন শেষ না হবে তত দিন আইসিসিবিকে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছে।