২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ১:২৭
শিরোনাম:

ঝালকাঠিতে যুবলীগ নেতাকে ধরতে ৫ দিন ধরে লাশ নিয়ে পরিবারের বিক্ষোভ

জেলার রাজাপুরের ইউপি সদস্য যুবলীগ নেতা মো. কুদ্দুস হোসেনের স্ত্রী আত্মহত্যার ঘটনায় ৫ দিন অতিবাহিত হলেও সোমবার দুপুর পর্যন্ত লাশ দাফন করেনি পরিবার। ঘটনাটি শুক্তাগড় ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ড নারিকেল বাড়িয়া গ্রামের।

ইউপি সদস্যসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে দু’সন্তানের জননী রুনা লায়লাকে নির্যাতন করে আত্মহত্যায় বাধ্য করার অভিযোগে শনিবার রাতে রাজাপুর থানা পুলিশ মামলাটি রেকর্ড করে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে নারিকেল বাড়িয়া গ্রামে ইউপি সদস্যের নিজ বাড়ির একটি কক্ষ থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলার প্রধান আসামি ইউপি সদস্য মো. কুদ্দুস হোসেনসহ আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার এবং ওই গৃহবধূর দুই শিশুকে উদ্ধার করে শেষবারের মতো মায়ের মুখ দেখানোর দাবি জানান মৃতের পরিবার।

লাশ দাফন না দিয়ে ৫ দিন ধরে লাশ নিয়ে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছে মৃতের স্বজনরা। রোববার দুপুরে উপজেলার ডহরশংকর গ্রামের নাপিতেরহাট এলাকায় ওই গৃহবধূর বাবার বাড়িতে পুলিশের একটি দল গেলে তাদের ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করে।

এসময় বিক্ষোভকারীরা আসামিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার ও দু’সন্তানকে তার মায়ের মুখ শেষ বারের মতো দেখানোর দাবি জানায়। এর আগে শুক্রবার দুপুরে ঝালকাঠি মর্গে ময়নাতদন্তের পর লাশ বাড়িতে নিলে গোসলের সময় তার মাথায় ও শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের দাগ দেখতে পায়।

এতে স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সামনে লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করে স্বজনরা ও এলাকাবাসী। হত্যার অভিযোগের মামলা না নেয়ার প্রতিবাদ ও আসামিদের গ্রেফতারের দাবি জানান।

এসময় ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মো. হাবিবুল্লাহ ইউপি সদস্যকে গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ কর্মসূচি তাৎক্ষণিক স্থগিত করে। এরপর থেকে পুলিশ তৎপর হয়ে ইউপি সদস্যসহ আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চালায়।

মামলা রেকর্ড না হওয়ায় গৃহবধূর বাবার বাড়িতে লাশ ঘরের সামনে রেখে বিক্ষোভ করে। শনিবার গভীররাতে নিহতের বাবা আমির হোসেন গাজি বাদী হয়ে ইউপি সদস্য কুদ্দুস হোসেনসহ ৫ জনের নামে রাজাপুর থানায় মামলা করেন।

রুনা লায়লা উপজেলার নাপিতেরহাট গ্রামের আমির হোসেন গাজির মেয়ে এবং ইউপি সদস্য মো. কুদ্দুস হোসেন নারিকেল বাড়িয়া গ্রামের মজিবর হোসেনের ছেলে।

[১১] গত ২১ মে (বৃহস্পতিবার) ইউপি সদস্যের বাড়ি থেকে পুলিশ ওই গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। সেই থেকেই নিহতের স্বজনদের অভিযোগ তাকে নির্যাতন পর হত্যা করে তার লাশ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে ইউপি সদস্যের পরিবার।

রুনা লায়লার বাবা আমির হোসেন গাজি অভিযোগ করেন, তার মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর থেকেই নানাভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতো জামাই কুদ্দুস। তার মেয়েকে মারধর ও নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

কিন্তু ওই ইউপি সদস্যের স্বজনরা জানান, রুনা লায়লা কিছুটা মানসিক বিকারগ্রস্ত ছিল। এ কারণে ঘরে আগুন দেয়া এবং স্বামীসহ শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে যা ইচ্ছে তাই ব্যবহার করছিল। এর প্রতিবাদ করলে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করারও হুমকি দেয় একাধিকবার।

ঘটনার দিন দুপুরে রুনা লায়লা তার বাবার বাড়িতে যাবার আবদার করে। এসময় তার স্বামী ইউপি সদস্য কুদ্দুস হোসেন ঈদের পরে যেতে বলে। কারণ হিসেবে তারা জানায়, এখন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন বাড়িতে আসবে। মহামারি করোনা দুর্যোগের সময় কয়েকদিন পরে গেলেই ভালো হবে বলে গরু নিয়ে বাইরে যায়। পরে কুদ্দুসের বড় ভাই সিদ্দিক হোসেন দরজা বন্ধ দেখতে পেয়ে ডাকাডাকি করলে কোনো সাড়া না পাওয়া দরজা ভেঙে লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়।

কুদ্দুস হোসেনকে জানালে তিনি ঘরে এসে ঝুলন্ত দেখে নিজেই থানা পুলিশকে অবহিত করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার এবং সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে।

রুনা লায়লার ৫ বছর বয়সী বড় মেয়ে উর্মি আক্তার পুলিশের কাছে দেয়া জবানবন্দিতে জানায়, মা দুপুরের পরে আমাকে বল নিয়ে বাইরে গিয়ে খেলতে বলে। ছোট ভাই রাইয়ানকে দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। এরপর ঘরের দরজা আটকায়। বড় কাকা (সিদ্দিক হোসেন) ডাক দিয়ে না পেয়ে দরজা ভাঙলে আমিও কাকার পাশে দাঁড়াই। তখন মাকে ঘরের তক্তার (আড়ার) সাথে ওড়না দিয়ে ঝুলতে দেখি। মা’র জিহ্বা বেরিয়ে চোখ অমন করেছিল (নিজ ভঙ্গিতে বলে শিশু উর্মি)।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজাপুর থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, ঘটনায় মমলা রেকর্ড করা হয়েছে।শিশুদের উদ্ধার ও আসামি গ্রেফতারের পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে। তবে আসামিরা আত্মগোপনে থাকায় কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। স