২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ৩:৫০
শিরোনাম:

জ্বর-কাঁশিতে নয়, গরিব মরে খিদেয়, করোনার পর ঘূর্ণিঝড়ে দিশেহারা কলকাতার রিকশাওয়ালা

জীবন কখনওই খুব সহজ ছিল না উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের সন্তোষ সাউয়ের। কিন্তু কলকাতার অলিগলিতে রিকশা নিয়ে পৌঁছে যাওয়া সন্তোষের জীবনটা একেবারে কঠিন এক প্রান্তে নিয়ে এসেছে লকডাউন ও ঘূর্ণিঝড় আমফান। দিনে একসময় ৩০০-৪০০ টাকা রোজগার করা কোনও ব্যাপার ছিল না। এমনকী কোনও কোনও ভাল দিলে ৫০০ টাকাও হয়ে যেত। খবর : এনডিটিভি।

[৩] কিন্তু আজ ৫০ টাকাও দৈনিক রোজগার হয় না। স্ত্রী ও বারো বছরের ছেলেকে নিয়ে এক ঝুপড়িতে থাকেন সন্তোষ। আমফানের দাপটে উড়ে গিয়েছিল ঘরের চাল। চারদিন পরে প্লাস্টিক শিট ও বাঁশের সাহায্যে কোনও মতে ছাদ তৈরি করা গিয়েছে। তিনি জানাচ্ছেন, গত চার দিন ধরে হারানো ছাদের পরিবর্তে প্লাস্টিক শিট ও ছাদের সাহায্যে আবার ছাদ ফিরে পেয়েছি। কিন্তু আবার তুফান এলে কী হবে?’

[৪] ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিকে সন্তোষ জানিয়েছেন, ‘লকডাউনের পরে সব বদলে গেছে। একবার আমাকে ব্যাটন দিয়েও মেরেছিলেন এক পুলিশকর্মী। আমার জ্বর হয় না। গরিবদের কখনও জ্বর হয় না। তারা খিদেতে মরে। এটা বলতে বলতে ডান হাত দিয়ে চোখের পাশ স্পর্শ করেন সন্তোষ। সম্ভবত চোখের জল আটকাতে।

[৫] পকেটে পড়ে থাকা তিনটি দশ টাকার কয়েন ও সামান্য খুচরা পয়সা দেখিয়ে প্রতিবেদককে সন্তোষ জানান, ঝড় আমাকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। তার কাঁপতে থাকা হাতের মধ্যে ঝনঝন করে বেজে ওঠে খুচরো পয়সার অসহায়তা।

[৬] কিন্তু বিনা পরিশ্রমে কারও থেকে পয়সা নিতে রাজি নন তিনি। স্পষ্ট জানাচ্ছেন, আমি ভিখারি নই। আপনি বলুন কোথায় নিয়ে যেতে হবে… শ্যামবাজার, বারাকপুর, সোদপুর। তারপর পয়সা দিন। প্রতিবেদক হাত বাড়িয়ে ১০০ টাকা দিলে সেটা সরিয়ে দিয়ে সন্তোষ জবাব দেয়, আমার লাগবে না।

[৭] রাজ্য সরকারের প্রতিশ্রুতিমতো ৫ কেজি চাল ও ডালের কিছুই পাননি। তবে স্বেচ্ছাসেবী এক সংস্থা থেকে ১০ কেজি চাল, আলু ও সাবান পেয়েছিলেন। এখন আবার অভাব জাঁকিয়ে বসেছে। একমাত্র ছেলে পড়ে ক্লাস ফোরে। সন্তোষ জানেন না, লকডাউনের পরে স্কুলে ফেরত পাঠাতে পারবেন কিনা ছেলেকে।

[৮] কেন রিকশা না চালিয়ে স্থানীয় জুটমিলে কাজ নিচ্ছেন না? সন্তোষ জানাচ্ছেন, রিকশা চালানো ছাড়া আর কিছুই যে শেখেননি তিনি।

[৯] সন্তোষ এও জানেন না, কলকাতাতেই থাকবেন, নাকি ফিরে যাবেন? ভেবে পান না তিনি। কোনও দিশা মেলে না। ‘সিটি অফ জয়’-এই বেঁচে থাকতে চেয়েছিলেন সন্তোষ। আপাতত সে আশায় বুক বাঁধা ছাড়া আর কিছুই করার নেই তার।