২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ভোর ৫:২৬
শিরোনাম:

রাজধানীর মোড়ে মোড়ে ঝুলছে টু-লেট, ভাড়াটিয়া পাচ্ছেন না বাড়িওয়ালারা

গত ক’মাসে আয় রোজগার কমে এমনকি কর্ম হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ। হতদরিদ্ররা হয়ে পড়েছে আরও অসহায়। জীবিকার এমন সংকট দেখা দেয়ায় ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। তাতে রাজধানীর অনেক বাড়িতে ভাড়াটিয়া সংকট দেখা দিয়েছে। সেজন্য এখন বাড়িতে বাড়িতে ঝুলছে বাসাভাড়া দেয়ার বিজ্ঞাপন ‘টু লেট’।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের কর্মসংস্থানের সিংহভাগ রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়ায় বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজন কাজের সন্ধানে রাজধানীমুখী হতেন। প্রতিদিনই কর্মসংস্থান বা ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ঢাকায় আসত মানুষ। এভাবে দেড় হাজার বর্গকিলোমিটারের এ নগরীর বাসিন্দার সংখ্যা দাঁড়িয়ে যায় প্রায় দুই কোটি, যাদের প্রায় ৮০ শতাংশই ভাড়া বাসার বাসিন্দা। এ ভাড়াটিয়ারা বছরের পর বছর বাসার উচ্চ ভাড়া দিয়ে আসছেন। কিন্তু করোনাভাইরাস পরবর্তী পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে বাসা ভাড়ার চিত্রও।

করোনার কারণে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছেন, অনেক মানুষের শ্রেণি কাঠামোর পরিবর্তন হয়েছে। নতুন করে অনেক মানুষ হতদরিদ্র হয়েছেন, ফলে আগের ভাড়ার ভার বইতে পারছেন না তারা, ফলে ছেড়ে দিচ্ছেন বাসা, ছেড়ে দিচ্ছেন ঢাকাও।

করোনা পরিস্থিতিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার থেকে পাঠানো তথ্যে জানা যায়, বেশিরভাগ বাড়িতেই দু-একটা ফ্ল্যাট ফাঁকা আছে। ভাড়াটিয়া চেয়ে ‘টু লেট’ লেখা বিজ্ঞাপন সাঁটানো থাকলেও বাড়ির মালিকরা ভাড়াটিয়া খুঁজে পাচ্ছেন না। দু-একটি ফ্ল্যাট ফাঁকা হয়ে যাওয়ার মধ্যেই বাড়ির মালিককে বাসা ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিচ্ছেন আরও অনেক ভাড়াটিয়া।

বেশিরভাগ বাড়িতে ‘টু লেট’ বিজ্ঞাপনের হেতু জানতে রাজধানীর বেশ কিছু বাড়ি মালিকের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, সাধারণ ছুটি বা লকডাউনের কারণে অনেকেই তাদের পরিবারের সদস্যদের গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। পরিবারের উপার্জনের ব্যক্তিটি পরে বাসা ছেড়ে দিয়ে অন্য কোনো মেস বা ছোট বাসায় উঠেছেন, যে কারণে অনেক বাসা ফাঁকা হয়ে গেছে। এছাড়া এই পরিস্থিতিতে নতুন কেউ বাসা পরিবর্তন করেননি এবং জীবিকার তাগিদে ঢাকায় নতুন মানুষও তেমন একটা আসেননি। যে কারণে বাসাগুলো ফাঁকা রয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতি তৈরির ক্ষেত্রে ঠিক মত বেতন না পাওয়া, কাজ না থাকা, এমনকি চাকরি হারানোই বড় কারণ।

রাজধানীর বাড্ডার এক বাড়িওয়ালা বলেন, আমার পাঁচতলা বাড়ির দুটি ফ্ল্যাট গত দুই মাস ধরে ফাঁকা। আগে ‘টু লেট’ সাঁটানোর সাতদিনের মধ্যে বাসা ভাড়া হয়ে যেত। কিন্তু এখন ভাড়াটিয়া পাওয়া যাচ্ছে না। আশপাশে আরও কিছু বাড়িতে এভাবে ‘টু লেট’ ঝুলছিল। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ঢাকায় বসবাসকারীদের মধ্যে অনেকেই গ্রামে চলে গেছেন। অনেকে পরিবারকে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে কোনো মেসে উঠেছেন।

অনেকের ইনকাম কমে গেছে, যে কারণে আগে ১৬ হাজার টাকার বাড়িতে থাকলেও এখন ১০ হাজার টাকা ভাড়ার বাসায় চলে যেতে চাচ্ছেন। অনেকে চাকরিচ্যুত হয়েছেন। অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তেমন ব্যবসা না হওয়ায় পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে গেছেন। অনেকের ইনকাম না থাকায় দুই মাস ধরে বাসা ভাড়া দিতে পারেননি। যে কারণে বাড়ির মালিক রাগে তাদের বের হয়ে যেতে বলে ‘টু লেট’ টাঙিয়েছেন। সব মিলিয়ে এখন রাজধানীর অনেক বাড়িতেই দু-একটি ফ্ল্যাট ফাঁকা রয়েছে। তবে বাড়ির মালিকরা ‘টু লেট’ টাঙিয়েও আশানুরূপ ভাড়াটিয়া পাচ্ছেন না বলে স্বীকার করেন জয়নাল।

রাজধানীর ধানমন্ডির এক ভাড়া বাসার বাসিন্দা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনিও বাড়ির মালিককে জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী মাস থেকে বাসা ছেড়ে দেবেন। সে অনুসারে বাড়ির মালিকও ‘টু লেট’ টাঙিয়েছেন।

কেন বাসা ছেড়ে দিচ্ছেন জানতে চাইলে মকলেসুর রহমান বলেন, সীমিত বেতনে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। যেখানে বেতনের সিংহভাগই চলে যায় বাসা ভাড়ায়। স্ত্রী আর এক সন্তান নিয়ে ওই বাসায় থাকতাম। কিন্তু বিগত দুই মাস ধরে অর্ধেক বেতন পাচ্ছি। যে কারণে বাসা ভাড়া দেয়া এবং সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই বাসা ছেড়ে দিয়ে স্ত্রী-সন্তানকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে আমি একটি মেসে উঠবো।

এ বিষয়ে ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি বাহরানে সুলতান বাহার বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, অনেকেরই আয় কমেছে। এই অবস্থায় বাসা ভাড়া পরিশোধ করা অনেকেরই জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা প্রথম থেকেই দাবি জানিয়ে আসছি নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য কিছুটা হলেও বাড়ি ভাড়া মওকুফ করার জন্য, কিন্তু আমাদের কথা কেউ শুনছেন না। অনেক মানুষ বেকার এবং আয় কমে যাওয়ার কারণে তাদের পরিবারকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন, আর আয়ের আশায় তিনি নিজে কোনো একটি মেসে বা কম টাকা ভাড়ার বাসায় উঠেছেন। আসলে সত্যি কথা বলতে মানুষকে খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। যে কারণে অনেকেই বাসা ছেড়ে দিয়েছে-দিচ্ছেন।